Blog

Hepatitis A: Traditional Treatment in Our Country ।। হাবিজাবি ৩৯

অনেক ছোটবেলায় আমার একবার জন্ডিস হয়েছিল। আমি তখন গ্রামের বাড়িতে। আমার নানী আমাকে নিয়ে যান পাশের বাড়ির এক মহিলা ওঝা বা কবিরাজের কাছে। তিনি আমার হাতে চুন মাখিয়ে রাখেন কিছুক্ষণ। তারপর একটা পাত্রে পানি নিয়ে হাত ভিজিয়ে কচলে চুনগুলো পরিষ্কার করেন। পরিষ্কারের পর দেখা যায় পাত্রের পানির রঙ হলুদ!

উপরের ঘটনা শেষে আমার শরীর থেকে হলুদ বিলিরুবিন বের হয়ে আমি সুস্থ হয়েছিলাম কিনা মনে নেই, তবে ক’দিন পর আমি সুস্থ হয়ে যাই। আর অনেক পরে মেডিকেলে এসে জানতে পারি এ সবই ছিল বুজরুকি! পানিতে আম গাছের কষ মিশানো ছিল, চুনের সাথে মিশে ওটাই হলুদ রঙ ধারণ করেছিল।

আরো বুঝতে পারি ওটা ছিল Hepatitis A, যেটা পানির মাধ্যমে বেশি ছড়ায় feco oral route এ।

যেহেতু সে সময় গ্রামে ছিলাম, পুকুরের পানিতে থালা বাসন ধোঁয়া হতো, ভাইরাস এর উৎস তাহলে ওই পানিই।

আর আমারই কেন হয়েছিল, কেন অন্যদের হয়নি সেটাও বেশ পরে বুঝেছি। এটা আসলে জীবনে বারবার হয় না, একবার হলেই দেখা যায় life long immunity develop করে। ছোটবেলায় exposure এর পর জন্ডিস হয়ে immunity develop করে। তাই hepatitis A এর আক্রমণ ছোটদেরই বেশি দেখা যায়। তার মানে এই নয় যে এটা শুধু ছোটদেরই হয়। বড়দের যদি ছোট বেলায় exposure হয়ে immunity develop না করে থাকে তো যে বয়সেই exposure হবে সে বয়সেই হতে পারে।
এত কথা বলার উদ্দেশ্য, অনেকের ভুল ধারণা- “এটা নাকি শুধু ছোটদের হয়!”

Hepatitis A দিয়ে জন্ডিস হওয়ার পরে ভাল হলাম কীভাবে?
কবিরাজের কোন কেরামতি কিন্তু এখানে ছিল না, কারণ এটা নিজে নিজেই ভাল হতে পারে। প্রয়োজন শুধু বিশ্রাম। যদিও ভাল করার ক্রেডিট সেই ওঝাই নিয়ে নিয়েছিল!

Hepatitis A দিয়ে জন্ডিস হলে সেটা self limiting একটা disease, যদি না কোন risk factors, যেমন- immunosuppresion থাকে বা অন্য কোন liver disease থাকে।

আমরা জানি, Hepatitis A এর মত আরো একটা feco oral route এ ছড়ায়, সেটা Hepatitis E।

মনে রাখার সুবিধার্থে, শুধুমাত্র feco oral route এ ছড়ায় বলে এই দুটো ভাইরাস শুধু acute hepatitis ই করতে পারে, কখনোই chronic hepatitis করে না। এই acute hepatitis হয়ে কিছুদিন পর আবার এমনিই ভাল হয়ে যায়।

আর বাকিরা যারা blood ও sexual এসব route ছড়ায় অর্থাৎ Hepatitis B, C, D তারা acute ও chronic দু রকমের Hepatitis ই করতে পারে।

তাই Hepatitis A ও E তুলনামূলক ভাল অন্যগুলোর তুলনায়। তবে এই ভাল Hepatitis A ও E এর মধ্যে Hepatitis E টা একটু কম ভাল। কারণ এটা pregnancy এর জন্য খুব খারাপ। বিশেষ করে third trimaster এ এটা দিয়ে acute viral hepatitis with acute liver failure develop করে, যার হার শতকরা ৩০!
তবে এটা সব দেশের জন্য সমান না, যেমন- মিশরে এটা গর্ভবতী মায়েদের কোন সমস্যাই করে না, কারণ হয়তো ভৌগলিক। অন্য সবার জন্য এটা Hepatitis A এর মত নিরীহ হলেও গর্ভবতী মহিলাদের জন্য Hepatitis E কেন এত খারাপ, কারণ হয়তো হরমোনাল!

Fig: Complications of Hepatitis E in Pregnancy


Hepatitis E এর কোন preventive vaccine নাই। অন্যদিকে Hepatitis A এর vaccine আছে।
একবার নিলেই হয়, immunocompromised হলে কয়েকবার vaccine নিতে হয়। Hepatitis A জীবনে একবার হলেও, Hepatitis E কিন্তু বারবার হতে পারে, অর্থাৎ এটা Relapsing Hepatitis করে।

আমাদের দেশ পৃথিবীর তালিকাভূক্ত সেই দেশগুলোর একটি যেখানের পানিতে অনেক বেশি Hepatitis A ভাইরাস পাওয়া যায়! যার ফলে অনেক দেশের মানুষ আমাদের দেশে আসার আগে Hepatitis A এর vaccine দিয়ে আসে, আর এখানে এসে খায় বোতলের পানি।

যদিও আমরা অনেকে বাসায় বোতল বা ফুটানো পানি খাই, কিন্তু যে গ্লাসে খাই সেটা ধোঁয়া হয় সাপ্লাইয়ের পানি দিয়ে। যে পানিতে ড্রেইনের পানির contamination হয়ে Hepatitis A থাকতে পারে, ফলে জন্ডিস হয়।

আবার মাঝে মাঝে আমরা আরাম করে Hepatitis A টাকা দিয়ে কিনে খাই। এই যেমন- ফুঁচকা খাই, চটপটি খাই, খাই রাস্তার পাশে খোলা আকাশের নিচে বিক্রি করা আখের রস ও লেবুর শরবত। কোন পানি দিয়ে এসব তারা বানাচ্ছে তার কিন্তু কোন খোঁজ নাই। ফলাফল দেশ ভর্তি বহু জন্ডিসের রোগী।

জন্ডিসের এত রোগী, তাই যে যেভাবে পারছে – পানের দোকানে, কবরস্থানের গলিতে সাইনবোর্ড লাগিয়ে জন্ডিসের চিকিৎসা করছে। একটা চিকিৎসার নমুনা তো উপরে দিলাম যার সাক্ষী আমি নিজে, এবার চলুন দেখি আরো কিছু ভয়ংকর চিকিৎসার নমুনা!

জন্ডিস হয়ে লিভার বড় হয়ে গেছে। কবিরাজ পেটে হাত দিয়ে বললো, ‘পেটে জন্ডিস বেশ বড় হইছে, এখন কাঁটতে হবে!’ জন্ডিস কাটার জন্য তিনি একটা লোহার রড গরম করে চামড়ার উপর দিয়ে liver এর lower border এ ধরলেন! আগুনের তাপে liver retract করে কিছুটা উপরে সরে গেল। কবিরাজ এবার পেটে হাত দিয়ে রোগীর লোককে বললো, ‘দেখেন জন্ডিস ছোট হয়ে গেছে!’ তখন রোগীর লোকও সেখানে হাত দিয়ে অবাক বিস্মিত!

এক বুড়ো মহিলার কপালের মাঝখানে টিপের মত গোল কাল দাগ, যার চোখদুটো আর শরীর তখন বেশ গাঢ় হলুদ। History নিয়ে দেখা গেল জন্ডিসের চিকিৎসায় কপাল গরম রড দিয়ে পুড়িয়ে ছিদ্র করেছেন, যে ছিদ্র দিয়ে জন্ডিস বের হয়ে যাবে! যখন সে ডাক্তারের কাছে যায়, ততদিনে বেশ দেরী হয়ে গেছে।

আর এক লোকের বেশ মারাত্মক জন্ডিস। কোন এক অমানুষিক বিজ্ঞ তাকে পরামর্শ দিলেন, ‘পুকুরের ঠান্ডা পানিতে সন্ধ্যা থেকে সকাল গাঁ ভিজিয়ে থাকতে, এতে নাকি তার জন্ডিস সব পানিতে মিশে যাবে!’ পরামর্শ মত লোকটি সন্ধ্যায় পানিতে নামলো, কিন্তু ঘন্টা চারেক ঠান্ডা পানিতে থেকে যখন হাইপোথার্মিয়া ডেভেলপ করলো তখন তাকে নিতে হল হাসপাতালে। দূর্ভাগ্যের বিষয় এটাই যে দিন দুয়েক পর মারাত্মক নিউমোনিয়া হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন!

আর এক জন্ডিসের রোগী যিনি চটকদার বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে বোতল বোতল হারবাল ছাইপাশ খাওয়া শুরু করলেন। কিছুদিন পর ফলাফল তো ভয়াবহ। হারবাল ওষুধ তার bone marrow তে জমা হয়ে bone marrow কে suppress করে pancytopenia করে ফেললো। একদিন অজ্ঞান হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন!

এত ঘটনার পরেও এসব কুচিকিৎসা এই আধুনিক যুগেও বহাল তবিয়তে টিকে আছে! এর কারণ হল সুচিকিৎসায় ডাক্তারের কাছে যেতে হবে এ ব্যাপারে মানুষ যতটা না সচেতন, তার থেকে বেশি সচেতন Hep B এর HBsAg টেস্ট এর ব্যাপারে!

HBsAg করে যখন পজিটিভ পাওয়া যায়, সবকিছু বুঝিয়ে বলার পরও তারা বেশ ঘাবড়ে যান। এরমাঝেই তারা হাঁটে ঘাটে টিভি রেডিওতে বিজ্ঞাপন দেখেন ‘আপনি কি HBsAg পজিটিভ? বিদেশে যেতে পারছেন না? তো আসুন আমাদের কাছে! ভংচং হারবাল! গ্যারান্টি সহকারে চিকিৎসা করি! বিফলে মূল্য ফেরত!’

এসব শুনে ওই অবুঝ জনগণ দৌড় দেন সর্বরোগের চিকিৎসকের কাছে! সেখানে যাওয়ার পর, কিছুদিনের ভেলকিবাজি আর গাছ লতার চিকিৎসা শেষে repeat HBsAg টেস্টে তার নেগেটিভ পাওয়া যায়!

ঝরে বক মরে, ফকিরের কেরামতি বাড়ে! এই যে নেগেটিভ পাওয়া গেল তার কারণ হয় সেটা window period এ আছে, অথবা আমরা জানি শতকরা ৯০ জন HBsAg পজিটিভ রোগী ৬ মাসের মধ্যে HBsAg নেগেটিভ হয়ে যায়, আর মাঝখান থেকে ক্রেডিট নেয় সাইনবোর্ড কবিরাজ!

কবিরাজের ভাষ্যমতে ১০০ জনে ৯০ জনই তারা ভাল করে, আর ১০ জন যারা ভাল হয় না তারা শেষমেস যায় ডাক্তারের কাছে! তখন অনেকের দেরী হয়ে যায়, অনেক সময় ডাক্তারদের কিছুই করার থাকে না। লোকমুখে প্রচার পায় ‘জন্ডিসের চিকিৎসা কি ডাক্তার দিয়ে হয়?’

সচেতনতা জরুরী! সচেতন করাটা আরো বেশি জরুরী!
আরো থাকবে পরবর্তী পর্বে।

ডা. কাওসার উদ্দীন
ঢামেক, কে-৬৫

প্ল্যাটফর্ম একাডেমিক /সাঈদা আলম

Leave a Reply