খুলনা মেডিকেল কলেজ হসপিটালের রেস্পিরেটরী মেডিসিনের এসোসিয়েট প্রফেসর Dr. Khosrul Alam স্যার একটা কেইস হিস্ট্রি শুনিয়েছিলেন একদিন। স্যারের কাছে কয়েকবছর আগে মধ্যবয়সী একজন ফিমেল পেশেন্ট আসলো unilateral pleural effusion নিয়ে। ইনভেস্টিগেসনে রিপোর্ট আসলো, Exudative pleural effusion & high lymphocyte count. প্রথমেই মাথায় আসলো pulmonary TB/ Malignancy এর কথা! কিন্তু এগুলো যেহেতু লং টার্ম ট্রিটমেন্ট এবং সেরকম আর কোনো ফিচারও ছিলো না, তাই জাস্ট ইনফেকশন চিন্তা করে একটা এন্টিবায়োটিক দিলেন স্যার এবং এক সপ্তাহ পরে দেখা করতে বললেন।
এক সপ্তাহ পরে পেশেন্ট আসলে bilateral pleural effusion নিয়ে, সাথে high lymphocyte count। তখন স্যার চিন্তা করলেন, lymphocyte count high হলেও যেহেতু bilateral pleural effusion সুতরাং কোনো Systemic disease হতে পারে। তার উপর ফিমেল পেশেন্ট। তাই স্যার পেশেন্টকে জিজ্ঞেস করলেন, তার মুখে কোনো আলসার ছিল কিনা/ আছে কিনা? কোনো আলসারের হিস্ট্রি নেই। এরপর জিজ্ঞেস করলেন, জয়েন্ট পেইন হয় কিনা? পেশেন্ট জানালো কয়েক মাস আগে জয়েন্ট পেইন ছিল(history of Arthritis), তখন এর জন্য ঔষধ খেয়েছে কিন্তু এখন আর নেই। এরপর স্যার জিজ্ঞেস করলেন, এছাড়া আর কোনো ঔষধ খেয়েছেন কিনা? পেশেন্ট জানালো, দীর্ঘদিন যাবত এন্টিসাইকোটিক ড্রাগ সেবন করছে(history of Psychosis)। এরপর স্যার জিজ্ঞেস করলেন, চুল পড়ে যায় কিনা? পেশেন্ট মাথার কাপড় সরিয়ে দেখালো চুল অনেক পাতলা হয়ে গেছে(history of hair loss)। পাশাপাশি pleural effusion থাকায় বুঝাই যাচ্ছে Serositis ও আছে।আর রিপোর্টে দেখা গেলো, High ESR.
এসব দেখে স্যার ধারনা করলেন, SLE হতে পারে।তখন স্যার ANA & Anti ds DNA antibody করতে পাঠালেন। বিভাগীয় পর্যায়ের একটা ভালো সেন্টার থেকে রিপোর্ট আসলো- দুইটা টেস্টই নেগেটিভ। কিন্তু তারপরেও স্যারের সন্দেহ হলো এবং স্যার পেশেন্ট কে দ্রুত ঢাকায় পাঠিয়ে দিলেন রিউম্যাটলজির প্রফেসর সৈয়দ আতিকুল হক স্যারের কাছে। প্রফেসর আতিক স্যার ঐ সময় দেশের বাইরে থাকায়, পেশেন্ট স্কয়ার হসপিটালে একজন স্যারকে দেখালো এবং সেখানে টেস্ট করে দেখা গেলো তাঁর ANA & Anti ds DNA antibody দুইটাই পজিটিভ এসেছে। সুতরাং, SLE confirmed এবং তার ক্রিয়েটিনিন লেভেল আসলো 6, অর্থাৎ অলরেডি Renal impairment হয়ে গেছে!
পরে পেশেন্টের হাজবেন্ড এসে স্যার কে সবকিছু জানালো। খুলনায় রিপোর্ট ভুল হলেও স্যারের সন্দেহটাই ঠিক ছিল এবং স্যারের কথা মত দ্রুত সময়ের মধ্যে তারা পেশেন্ট কে ঢাকায় নিয়ে গিয়েছিল।
এজন্যই মেডিসিন সাবজেক্ট টা এত ভালো লাগে।রোগী ফিচার নিয়ে আসে এক জায়গায়, কিন্তু কারন খুঁজতে গিয়ে দেখা যায় রোগীর সমস্যা আসলে অন্য জায়গায় লুকিয়ে আছে। সামান্য কিছু ক্লু থেকে এই লুকিয়ে থাকা সমস্যা বের করাটা স্রেফ একটা ডিটেকটিভ ওয়ার্ক। আর এ গোয়েন্দাগিরি স্রষ্টার সবচেয়ে বিস্ময়কর “সৃষ্টি” নিয়ে। সুতরাং, কাজ টা মোটেও সহজ কিছু নয়। আর আমাদের দেশের যে ল্যাব সাপোর্ট(?) তা বলাই বাহুল্য! (উপরিউক্ত পেশেন্টের প্রথম রিপোর্টটাও ভুল ছিল, যদিও বিভাগীয় পর্যায়ের একটি সেন্টার থেকেই টেস্ট করিয়েছিলেন)
(তবে একটু বিরতি দিয়ে দ্বিতীয় বার টেস্ট করে এন্টিবডি পজিটিভ পেলে সেটা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভুল না হয়ে স্লো ডিজিজ প্রোগ্রেশনের জন্যও হতে পারে। কেননা রিউম্যাটোলজির প্রফেসর ডা. আতিক স্যারের মতে,
“আজ antibody নেগেটিভ মানে এই না যে ২ মাস পর পজিটিভ আসবে না! Rheumatoid disease evolve করে।”
সুতরাং এই বিষয়টাও মাথায় রাখতে হবে।)
আমাদের স্যার দের এরকম অসংখ্য ডায়াগনোসিস আছে। যেগুলো জানলে বোঝা যায়, আমাদের স্যার/ম্যাডামদের ক্লিনিক্যাল নলেজ এন্ড এক্সপেরিয়েন্স কতটা এনরিচড। উন্নত বিশ্বের ডাক্তারদের তুলনায় আমাদের ল্যাব ফ্যাসিলিটি অনেক কম, যা একটু আছে তাও অনিয়ম, দূর্নীতি আর ভুলে ভরা! তারপরেও স্যার/ম্যাডাম গণ অনেক অসাধারন ডায়াগনোসিস করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
তাঁদের প্রতি শ্রদ্বা এবং ভালোবাসা।
Dr Fahim Uddin
Khulna Medical College
Session: 2012-2013