পানির অপর নাম জীবন,আর এই জীবন ই যখন হয়ে ওঠে মরণের কারণ 💦
হ্যাঁ, বলছি Aquagenic Urticaria এর কথা। যার অন্য নাম Water itch/Water allergy…
💧Aquagenic Urticaria আসলে কি : –
সহজভাবে, অ্যাকুয়াজেনিক আর্টিকারিয়া (Aquagenic urticaria) হচ্ছে একধরনের অ্যালার্জি। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ত্বক যখন পানির সংস্পর্শে আসে, তখন খুব দ্রুত তার দেহে রক্তস্ফোট বা লাল-লাল বিন্দু দেখা যায়। সাধারণত পানির তাপমাত্রা এই রক্তস্ফোট সৃষ্টিতে কোনো প্রভাব রাখে না.. সাধারণত মেয়েরাই বেশি আক্রান্ত হয়।
এই রোগের কথা প্রথম বর্ণনা করেন Shelley এবং Rawnsley, ১৯৬৪ সালে। রোগটি এতই বিরল যে এখন পর্যন্ত শ’ খানেকেরও কম রোগীর খোঁজ পাওয়া গেছে। ১৯৬৩ সালে এক পনেরো বছর বয়সী কিশোরী পানিতে স্কি করার পর অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার দেহে প্রথমে দেখা যায় রক্তস্ফোট এবং পরবর্তীতে ক্ষত।
⭕কারণ :
রোগীর স্বল্পতার কারণে এই রোগের কারণ, প্রতিকার বা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে খুব একটা গবেষণা করা সম্ভব হয়নি। তাই এই রোগের প্রকৃত কারণ আজও অজানাই রয়ে গেছে। তবে এখনো পর্যন্ত নিন্মলিখিত কারণগুলো Aquagenic Urticaria এর জন্য দায়ী বলে ধারণা করা হয় :
📍পানি (Dihydrogen monoxide/Oxidane) এবং পানিতে থাকা ক্লোরিনকে এর কারণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
📍একই পরিবারের একাধিক সদস্যের মাঝে Aquagenic Urticaria উপস্থিতি সাধারণত লক্ষ্য করা যায় না। তবে কয়েকটা ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে একই পরিবারে একাধিক সদস্য এই রোগে আক্রান্ত। তাই কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটা জেনেটিক রোগ হিসাবে দেখা হয়।
📍কোন কোন ক্ষেত্রে পানিতে থাকা উপাদান (Substance dissolved in water) ত্বকের সংস্পর্শে এলে তা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে সাড়া দিতে বাধ্য করে (Immune response), এই ক্ষেত্রে পানিতে থাকা Allergen (Toxic material) কে এর জন্য দায়ী করা হয়।
📍যাদের পেনিসিলিন অ্যালার্জি (Penicillin Allergy) বা Lactose
Intolerance আছে তাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এক্ষেত্রে Lactose Intolerance কে Aquagenic Urticaria এর কারণ হিসাবে দেখা হয়।
📍যারা একটি জেনেটিক রোগ, বার্নার্ড-সলিয়ের (Bernard- Soulier) সিন্ড্রোমে আক্রান্ত তাদের মধ্যে এ রোগের প্রবণতা বেশি। তাই একে Subclinical Infection বলেও গণ্য করা হয়।
🩸Bernard-Soulier syndrome (BSS) একটি বিরল জেনেটিক রোগ। এই রোগে আক্রান্তদের রক্তের প্লাটিলেট অস্বাভাবিকভাবে বড় হয়। আক্রান্তদের রক্তে প্লাটিলেট সংখ্যা খুবই অল্প থাকে (থ্রোমোসাইটোপেনিয়া) এবং Bleeding time অনেক বেশি হয়। জমাট বাঁধতে অসুবিধা হয়।বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগাক্রান্তরা একটি অটোসোমাল রিসিসিভ জেনেটিক প্যাটার্নে থাকে, অর্থাৎ জন্মসূত্রে এই রোগে আক্রান্ত হয়। আর যেহেতু রক্তের BSS এ আক্রান্তদের ক্ষেত্রে রক্তের প্লাটিলেট বড় হয়, তাই দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অস্বাভাবিক প্লাটিলেটকে Allergen হিসেবে চিহ্নিত করে এবং হিস্টামিন এর নিঃসরণ ঘটায়, ফলে BSS এ আক্রান্তরা ক্লোরিন সংযুক্ত তরলের সংস্পর্শে এলে তরলের প্রতি অ্যালার্জেটিক নিদর্শন দেখায়।
⭕উপসর্গ :
উপসর্গগুলো দেখা যায় বয়ঃসন্ধিকাল অথবা যৌবনের শেষ দিকে।
সব উপসর্গগুলোই মূলত ত্বক-সম্পর্কিত, বিশেষ করে প্রাথমিক উপসর্গগুলো। প্রথমেই ত্বকে রক্তস্ফোট জন্ম নেয়, সেই সঙ্গে চুলকানি এবং ব্যথা তো আছেই। ঘাড়, হাত এবং বুকের উপরের দিকেই মূলত ফুটে উঠে লাল-লাল রক্তস্ফোটগুলো। তবে শরীরের যেকোন অংশেই এগুলো দেখা যেতে পারে।
পানির সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গে মিনিটখানেকের মাঝেই আর যে-যে প্রাথমিক লক্ষণ দেখা যেতে পারে, তা হলো :
১. ত্বক লাল হয়ে যাওয়া (Red-Rash)।
২. জ্বলা-পোড়ার অনুভূতি ও চুলকানি (Skin Itching)।
৩. ক্ষত (approximately 1-3 mm sized welts)।
৪. ফুলে ওঠা (Swelling)।
৫. ত্বকীয় প্রদাহ (Dermatitis)।
অনেকক্ষেত্রেই, এই রোগে আক্রান্ত রোগীর উপসর্গ প্রথম দেখা দেয় পানি পান করার পর। পানি পান করার পরে যা উপসর্গ দেখা যায় তা হলো:
১. মুখের চারপাশে লাল দাগ (Rash around mouth) ।
২. গিলতে সমস্যা (Difficulty in swallowing)।
৩. শ্বাসকষ্ট (Wheezing)।
৪. শ্বাসের সঙ্গে শোঁ শোঁ শব্দ হওয়া (Audible sounds while breathing)।
যে-যে কাজ করলে দেখা যেতে পারে উপসর্গ:
১. গোসল 🛀🏻
২. বৃষ্টিতে ভেজা 🌧️
৩. সাঁতার 🏊🏻♀️
৪. শরীরে পানি ঢালা 🚿
৫. ঘাম 😰
৬. কান্না 😢
তবে সাধারণত শরীর থেকে দ্রুত পানি মুছে ফেললে, অথবা পানি থেকে দূরে সরে গেলে, আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টার মাঝে সব উপসর্গ দূর হয়ে যায়।
⭕চিকিৎসা :
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি- এখন পর্যন্ত অ্যাকুয়াজেনিক আর্টিকারিয়ার কোনো পুরোপুরি কার্যকরী চিকিৎসা আবিষ্কার হয়নি। তবে উপসর্গগুলো দূর করার জন্য কিছু ওষুধের সাহায্য নেওয়া হয়। যেমন:
💊অ্যান্টি-হিস্টামিন (Anti-Histamine): যেকোনো ধরনের অ্যালার্জির জন্য অ্যান্টি-হিস্টামিনের কোনো বিকল্প নেই। যেকোন ধরণের Urticaria-র চিকিৎসায় প্রাথমিক ভাবে এটিই ব্যবহৃত হয়। এটা(H1 antihistamines) H1 রিসেপ্টর এর প্রশমনের জন্য ব্যবহৃত হয়। সাধারণত Non-sedating, যেমন Loratadine (Claritin), Desloratadine (Clarinex) ও Cetirizine (Zyrtec) প্রাথমিক ভাবে ব্যবহার করা হয়।
কিছু ক্ষেত্রে অন্যান্য H1 antihistamine (Hydroxyzine) অথবা H2 antihistamines (Cimetidine) ও চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় H1 antihistamine কার্যকরী না হলে।
💊পেট্রোলিয়াম-সমৃদ্ধ ক্রিম (Petroleum Cream): এই ক্রিমগুলো ত্বক এবং পানির মাঝে একধরনের বাধা হিসেবে কাজ করে। গোসল করার আগে, কিংবা পানির সংস্পর্শে আসতে হতে পারে এমন যেকোনো কাজ করার আগে ক্রিম ব্যবহার করলে উপসর্গ দেখা দেবার সম্ভাবনাও অনেকাংশে কমে যায়।
💊ওমালিজুম্যাব (Omalizumab): এটি হল Monoclonal Antibody যা রোগীদের উপশম এনে দিয়েছে। এই ওষুধটি হাঁপানী আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে দারুণ কাজ করে..
💊এপিপেন (Epinephrine injection): উপসর্গ অত্যন্ত প্রবল হলে রোগীর জীবন পর্যন্ত বিপন্ন হতে পারে। তখন ব্যবহার করা হয় Epinephrine Autoinjector (Adrenaline Autoinjector/ EpiPen)।
💊ফটো-থেরাপি (Photo Therapy/Ultraviolet light therapy): কিছু কিছু কেসে, আলট্রা-ভায়োলেট রশ্মির ব্যবহারে রোগীদের উপসর্গ কমে গিয়েছে বলে জানা যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে Psoralen ultraviolet radiation A (PUVA) এবং Psoralen ultraviolet radiation B (PUVB) এর ব্যবহার করা হয়।
তবে অনেকক্ষেত্রেই, কোনো ধরনের ওষুধেই রোগীর উপসর্গের উপশম হয় না। এদের ক্ষেত্রে পানির সংস্পর্শ থেকে বেঁচে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
Sumiya Akbar Lira
MH Samorita Medical College
Session-2017-18