Blog

প্ল্যাব নিয়ে যত কথা: পর্ব ২

আমি যখন এ লেখাটি লিখছি, তখন এপ্রিল OET exam গ্লোবালি ক্যান্সেলড হয়ে গিয়েছে। NHS temporary registration দিচ্ছে ডাক্তারদের, এখানে এত শর্টেজ!! সিচুয়েশন অল্প অল্প করে হাতের বাইরে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, এবং আশংকাজনক ভাবে ডাক্তার এবং কিছু নার্সও আক্রান্ত হয়েছেন। খুবই মর্মান্তিক এবং দুঃখজনক। এরাই আসল হাতিয়ার এই যুদ্ধের। এদের আমরা কেউই হারাতে চাইনা।

সুস্থ থাকুন, সকলে জন্যে দোয়া করুন, আর লেখাপড়া করুন।

প্ল্যাব নিয়ে আমার ধারাবাহিক লিখার ১ম পর্বে OET, IELTS নিয়ে বলেছিলাম। আজ ২য় পর্বে বলবো প্ল্যাব ১ এর প্রস্তুতি সম্পর্কে। যারা ১ম পর্ব পড়েননি, তারা একটু কষ্ট করে দেখে নিবেন।

গত পর্বে একটা কথা বলেছিলাম, স্টুডেন্ট অবস্থায় প্ল্যাব নিয়ে কিছু মাথায় ঢুকাবেন না। এখানে কিছু কারেকশন আনতে চাচ্ছি। দুইটা কাজ করতে পারবেন । পাসপোর্ট এবং একটা ব্যাংক একাউন্ট করতে পারবেন। অবশ্যই একাউন্ট করার সময় Dual currency debit card issue করাবেন। এই কার্ড ইস্যু করতে হলে আপনার পাসপোর্ট লাগবে। ইস্টার্ন ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, ব্রাক ব্যাংক এর এই কার্ড ফ্যাসিলিটিস আছে। আমি ইস্টার্ন ব্যাংকের কার্ড ইউজ করেছি। ইউজার ফ্রেন্ডলি এবং সিকিউরড মনে হয়েছে। এদের অ্যাপস যদিও স্লো। আপনারা চাইলে ব্যাংক ডিটেইলস আর পাসপোর্ট এর জন্যে কিভাবে এপ্লাই করবেন, সেটাও একদিন লিখতে পারি

এক্সাম ফিস

আমার সময় ফিস ছিল ২৩০ জিবিপি, প্রায় ২৬০০০+ বাংলাদেশী টাকা। এখন সম্ভবত একটু বেশী।

ইন্টার্নির সময় যে বেতন পান, তার থেকে ৫০০০ টাকা আলাদা করে জমা করবেন। roadtouk.com ওয়েবসাইটে দেখবেন, শ্রদ্ধেয় ইভান ভাই এবং ইব্রীজ আপু কি সুন্দর করে কোথায় কত খরচ লাগে হিসেব করে লিখে রেখেছেন। সেই অনুযায়ী জমা করবেন।
Dual currency debit card এ টাকা USD পার্ট এ জমা রাখবেন। USD to GBP conversion এর সময় ৩% ব্যাংক কেটে রাখে। সুতরাং তিন/ চার হাজার টাকা এক্সট্রা রাখবেন। কারন পাউন্ডের দামও উঠানামা করে।

OET / IELTS পাশ করার আগেই আপনি প্ল্যাব ১ এর টাকা জমা করে রাখবেন। যেইদিন পাশ করবেন, সেইদিনই যেভাবেই হোক আপনি প্ল্যাব ১ এর ফর্ম ফিল আপ করবেন। সীট পাওয়া ভয়ানক টাফ। বিশেষ করে ঢাকায়। ঢাকায় বসে এক্সাম দেয়া যে কত দিক দিয়ে সুবিধা!! টাকার চিন্তা নাই, ভিসার চিন্তা নাই, খরচ কম।শুধু পড়বেন, আর পরীক্ষা দিবেন। কিন্তু কিছুতেই যদি সীট না পান, আর টাকা পয়সার চিন্তা না থাকে, তাহলে দেশের বাইরে এক্সাম দিতে পারেন।

এবার মেইন পার্ট লেখাপড়া

একটা কথা মনে রাখবেন, যার ক্লিনিক্যাল নলেজ যত ভাল, তারজন্যে প্রিপারেশন নেয়া ততটাই সহজ। ইন্টার্নশিপ কাজকর্ম করেন ভাল করে, পড়তে গিয়ে দেখবেন সব কত সহজ লাগছে।

GMC website থেকে PLAB 1 এর সিলেবাস ডাউনলোড করুন। আপনার গ্রস আইডিয়া হবে, কোন কোন সাবজেক্ট আপনার পড়তে হবে।

১। Sush unity / Plabable / Plabdoable question bank

প্রথম থেকে শুরু করবেন। মনে করেন, প্রথম প্রশ্ন Coeliac disease. এবার Coeliac disease এর আদি অন্ত সব অন্য বই গুলো থেকে পড়বেন। ওয়েবসাইটস চেক করবেন। যা যা ইম্পর্ট্যান্ট মনে হবে, ছোট ছোট নোটস লিখবেন। কোশ্চেন ব্যাংক এটলিস্ট দুইবার রিভিশন দিবেন।

এভাবে পড়লে সময় লাগে বেশি। এটা সত্য। কিন্তু আপনি যা পড়বেন, সেটা আর কখনোই ভুলবেন না। এই টপিক থেকে যে প্রশ্নই আসুক না কেন, আপনি উত্তর দিতে পারবেন।

২। Samson notes ✪✪✪

এটা আমার স্টাডি বেইজ ছিল। একেকটা টপিক থেকে পড়ে এটার চারপাশে গুটিগুটি করে নোট লিখে রাখতাম। এটা আপনাকে এটলিস্ট তিন থেকে চারবার রিভিশন দিতে হবে।

৩। Oxford handbook of clinical medicine + Oxford handbook of emergency medicine

ভীষণ চমৎকার বই। ছোট ছোট ক্ষুদি ক্ষুদি অক্ষরে সব ইনফরমেশন এত চমৎকার ভাবে দেয়া, পড়লে অবাক হয়ে যাবেন। আমি ইন্টার্নশিপের সময় এই বই নিয়ে নিয়ে ঘুরতাম। এক লাইন দুই লাইন হলেও পড়ার চেষ্টা করতাম। প্রায়ই এই বই আর মোবাইল এখানে ওখানে ভুলে রেখে চলে আসতাম। আমার ব্যাচমেটরা খুঁজে খুঁজে যত্ন করে রেখে দিত যাতে আমার জিনিস না হারায়। Being nostalgic!! I had some amazing friends.

যাই হোক, এই বই থেকে সব disease management ক্রসচেক করে পড়বেন। মাস্ট। কারন UK treatment আর আমাদের ট্রিটমেন্ট এ কিছু কিছু পার্থক্য আছে। এই বই আপনাকে অথেনটিক ইনফরমেশন দিবে।

৪। Mock test :

কিছু মক কোশ্চেন পেপারস অনলাইন গ্রুপগুলোতে ঘাটাঘাটি করলে পাওয়া যায়৷ পেয়েগেলে একবার সলভ করার চেষ্টা করবেন। অবশ্যই অবশ্যই স্টপওয়াচ ইউজ করবেন, পরীক্ষা দেয়ার সময়।

অনেকে পেইড মক দেন। অনলাইনে। plabable website এ। আমি দিই নাই। আপনারা দিতে পারেন।

৫। Recall :

সব পড়া হয়ে গেলে আগের এক্সাম কোশ্চেনগুলো একবার দেখার চেষ্টা করবেন। মাঝে মাঝে রিপিট হয়।

৬। Few websites:

patient.info
nhs.uk
nice.org.uk

এইগুলা Website must চেক করবেন। স্কিন ডিজিজের ছবিগুলো দেখবেন। ECG, Xray গুলো দেখবেন। আমার এক্সামে একটা ইসিজি আর Eye disease এর পিকচার ছিল। এগুলা দেখে আমাকে ডায়াগনোসিস করতে হয়েছে, রোগটা কি।

একবার সব পড়া গোছানো হয়ে গেলে, রিভিশন নেয়া শুরু করবেন। পরীক্ষার এটলিস্ট দুই সপ্তাহ আগে থেকে রিভিশন স্টার্ট করবেন। চেষ্টা করবেন তিনবার রিভিশন কম্পলিট করতে। পরীক্ষার তিনদিন আগে রিকল সলভ করবেন। পরীক্ষার আগেরদিন ঘন্টাখানেক Samson notes 1st to last একটু চোখ বুলাতে পারেন। আর কিছু পড়বেন না। ভাল মত ঘুমাবেন। এক্সামের আগেই এক্সাম লোকেশন দেখে নিন। GMC আপনাকে এক্সাম লোকেশন ৩/৪ দিন আগে ইমেইল করবে। সাধারণত ধানমন্ডির Bangladesh international school এ সীট পরে। বিকেল চারটায় এক্সাম শুরু হয়। যেই জ্যাম থাকে। এটলিস্ট ১ ঘন্টা আগে পৌছানোর চেষ্টা করবেন। দুপুরে ভালমত খেয়ে, ব্যাগে ২ টা চকলেট / প্রোটিন বার নিয়ে যাবেন। আর পানি।

কোথায় পাবেন বইগুলো?

নীলক্ষেত। তবে ওরা মহাপাজি। যা খুশি দাম রাখে।
আমি Oxford books গুলো শুধু কিনেছি, কালার প্রিন্ট। আর কোশ্চেন ব্যাংক থেকে শুরু করে মক, রিকল, স্যামসন নোটস সব পিডিএফ ডাউনলোড দিয়ে প্রিন্ট করেছি। আপডেটেড কোশ্চেন আর রিকল জোগাড় করতে থাকলে, পুরোনো এডিশন পড়লেও হয়, নতুন কোশ্চেন তো পেয়েছেনই৷ তবে এরা টাইম টু টাইম কোশ্চেন পেপার চেঞ্জ করে। তাই অনলাইনে খোঁজ খবর রাখবেন। Plabable এও অনলাইন সাবস্ক্রাইব করে ফেলতে পারেন। তাহলে ওদের কোশ্চেন ব্যাংক ফ্রি পাবেন।

কতদিন সময় নিয়ে প্রিপারেশন নিবেন?

এটা পুরোটাই ডিপেন্ড করে আপনি কবে এক্সাম বুক করবেন, তার উপর। আগেই বলেছি, সীট পাওয়া ভয়ানক টাফ৷ তবে এটলিস্ট তিন মাস লাগে প্রিপারেশন নিতে। শেষের এক মাস খাওয়া আর পড়া ছাড়া কিছু করবেন না। ডেইলি ১২-১৪ ঘন্টা করে পড়েও দেখবেন শেষ করতে পারছেন না।

অনেকে চাকরি, রেগুলার ডিউটি করে পরীক্ষা দেন। খুব লাকি আর ব্রিলিয়ান্ট যারা, তারা পাশও করেন। আমাকে জিজ্ঞেস করলে, আমি বলব রিস্ক না নেন। খুব ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট হলেও এত কষ্ট করে এক্সামের সীট পেয়েছেন, সুযোগটা কাজে লাগান। চাকরি যায় যাক, ডাক্তাররা বসে থাকে না৷ কিন্তু শেষের একমাস নাকমুখ বন্ধ করে পড়েন।

ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম সব ডিএক্টিভেট করেন। পড়েন, আল্লাহর সাহায্য চান। আপনি কিছুই না, যতক্ষণ না আপনার প্রভু আপনাকে সাহায্য না করেন।

কোচিং করবেন কি না?

ইচ্ছা। আমি করি নাই। একটু ব্যয়বহুল। তবে সাধ্য ও সামর্থ্য থাকলে আপনারা করতে পারেন।

স্টাডি পার্টনার লাগবে কি না?

ইচ্ছা। আমি পুরো MBBS একা একা পড়ে পাশ করেছি। আমি গ্রুপ করে পড়তে পারি না। আমি একাই পড়েছি।
আপনার কাছে গ্রুপ করে পড়া ইফেক্টিভ হলে, অবশ্যই অবশ্যই স্টাডি পার্টনারের সাথে পড়বেন।

কনফিউশান থাকলে কি করবেন?

অনলাইনে, হোয়াটসঅ্যাপে, টেলিগ্রামে অনেক স্টাডিগ্রুপ আছে। অবশ্যই অবশ্যই অবশ্যই সেগুলোতে জয়েন করবেন। নিজের নিজের কনফিউশান পোস্ট করবেন। স্টাডি ডিসকাশন এ অংশ নিবেন।

আপাতত আর কিছু মাথায় আসছে না। আপনাদের যা যা প্রশ্ন পোস্ট রিলেটেড, অবশ্যই অবশ্যই কমেন্টে লিখুন, যত সামান্যই হোক। আমি অবশ্যই রিপ্লাই দিব। আমার জানা না থাকলে, যার জানা আছে উনারা রিপ্লাই দিবেন। পরবর্তী পর্বে GMC account কিভাবে ওপেন করবেন, সেটা লিখব। আপনি কি জানেন, GMC account না থাকলে আপনি প্ল্যাব ১ এর এপ্লিকেশন করতে পারবেন না?

আজ এ পর্যন্তই৷ ৩য় পর্বে বাকী প্রয়োজনীয় তথ্যাদি আপনাদের জানানোর চেষ্টা করবো৷

ডা. সামিয়া ফারহিন
তায়েরুন্নেসা মেমোরিয়াল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
সেশন: ২০১০-২০১১

Leave a Reply