আমরা যদি সমুদ্রের গভীরে যাই,শরীরে গ্যাসের আদান-প্রদানে কি কি পরিবর্তন হবে,তা জানতে হলে আগে বুঝতে হবে সমুদ্রপৃষ্ঠে থাকাকালে আমাদের ফুসফুসের এলভিওলাইতে গ্যাসের চাপ কেমন।
সমতলে থাকা অবস্থায়, Nitrogen 570mmHg,Oxygen 104mmHg,CO2 40mmHg প্রেশার দেয় ফুসফুসে।আবার ব্লাড ভেসেলে Oxygen 40mmHg,Nitrogen 570mmHg,CO2 45mmHg প্রেশার থাকে তখন। স্পষ্টতই দেখা যায়,অক্সিজেনের প্রেশার ব্লাড ভেসেলে কম থাকার কারণে ফুসফুস থেকে অক্সিজেন প্রবাহিত হবে ব্লাডে।কার্বনডাইঅক্সাইড ব্লাডে বেশি থাকায় সে ব্যাপনের মাধ্যমে চলে যাবে ফুসফুসে।নাইট্রোজেনের কোন পরিবর্তন হয়না,কারন সে আমাদের কোষে কোন গ্যাসীয় আদান-প্রদানে অংশগ্রহণ করেনা। সমুদ্রপৃষ্ঠে থাকাকালে আমাদের চারপাশে গ্যাসের প্রেশার থাকে 760mmHg or 1atm।
আমরা এবার ডুব দিবো পানির নিচে,যদি 10 মিটার নিচে যাই,আমাদের চারপাশের প্রেশার বেড়ে দাঁড়াবে 2 atm এ।কারণ তখন গ্যাসের চাপ 1atm এবং ১০ মিটার নিচে পানির চাপ আরো 1atm,দুটো মিলে দাঁড়াবে 2 atm।20 মিটার নিচে গেলে সেটা হয়ে যাবে 3atm, 30 মিটার নিচে গেলে হবে 4atm।তাহলে আমরা পানির নিচে যতো যাচ্ছি প্রেশার ততো বাড়ছে।
আমরা এবার একটু বয়েলের সূত্রটা দেখে নেই।বয়েল বলেছেন,নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় গ্যাসের আয়তন(V) তার চাপের(P) ব্যাস্তানুপাতিক।অর্থাৎ,চাপ(P) বাড়লে গ্যাসের আয়তন(V) কমে যাবে।যেমন,১লিটার গ্যাসকে আপনি যদি ১০মিটার নিচে নিয়ে যান,আগেই বলেছি প্রেশার 2atm হয়ে যায়,তাহলে গ্যাসের আয়তন হয়ে যাবে অর্ধেক,০.৫ লিটার।যদি ৩০ মিটার নিচে যাই,4atm চাপে গ্যাসের আয়তন হবে ০.২৫ লিটার।
এখন ধরে নেই আমি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০ মিটার নিচে আছি।আমার ফুসফুসে প্রতিটা গ্যাসের চাপ প্রায় ৪গুণ হয়ে গেছে।ধরলাম Nitrogen 2500mmHg,0xygen 450mmHg,CO2 40mmHg চাপ দিচ্ছে।সব গ্যাসের চাপ বাড়লেও কার্বন ডাই-অক্সাইড এর চাপ বাড়লোনা,কারণ এই গ্যাসটা আমাদের চারপাশে কমই থাকে,বায়ুতে মাত্র ০.০৫ পার্সেন্ট!গ্যাসটা আমাদের শরীরেই তৈরি হয়,তাই এটার পরিবর্তন নেই।বাকি দুটো গ্যাস আমাদেরকে এখন প্রচন্ড চাপে রেখেছে। আগেই বলেছি নাইট্রোজেনের গ্যাসের কোন আদান প্রদান ছিলোনা কোষে।কিন্তু এখন এতো চাপের কারণে জোর করে নাইট্রোজেন চলে যাবে কোষে,একে আমরা বলি nitrogen narcosis।
সাধারণত ঘটনাটা ঘটা শুরু হবে পানির ১২০ ফিট নিচে গেলে,একে আমরা মাইল্ড নারকোসিস বলি।একটা Drunken,silly ভাব আসবে শরীরে।১৫০-২০০ ফিট গেলে ডাইভার drowsy হয়ে যাবে আরো।২০০-২৫০ ফিট নিচে গেলে সাধারণ কর্মক্ষমতা অত্যন্ত হ্রাস পাবে এবং ২৫০ ফিট এর নিচে গেলে চিন্তাশক্তি হারাবে এবং মৃত্যু হতে পারে।নাইট্রোজেন নারকোসিস এলকোহল ইনটক্সিকেশনের মতোই,তাই একে “Ruptures of the depth” বলা হয়।এই নাইট্রোজেনের নারকোটিক ইফেক্ট অনেকটা এনেস্থেটিক গ্যাসগুলোর মতো,যারা নার্ভগুলোর সিগন্যালকে সাময়িক সময়ের জন্য দুর্বল করে দেয়।
অক্সিজেন আমাদের শরীরে যতটুকু দরকার তার চারগুন বেশি হওয়ার,আমাদের কোষে অতিরিক্ত অক্সিজেন প্রভাব ফেলবে।ব্রেইন সেলে গিয়ে brain seizure হয়ে coma তে চলে যাবার সম্ভাবনা থাকে ৩০ থেকে ৬০ মিনিটের মাঝে।এছাড়া acute O2 poisoning এর কারনে nausea,Disorientation,Muscle Twitching,disturbance of vision,irritability হবে।High PO2 আমাদের শরীরের কোষগুলোকে নষ্ট করে দিতে পারে,আমাদের অক্সিহিমোগ্লোবিন বাফার সিস্টেমের কার্যকরীতা নষ্ট হতে পারে।অতিরিক্ত পরিমানে অক্সিজেন ফুসফুসে প্রবাহিত হওয়ার কারণে Lung Passageway Congestion,Pulmonary Edema,Atelectasis হতে পারে।
এবার আসি আরেকটা মজার ঘটনায়।আমি ৩০ মিটার নিচে থেকে উপরের দিকে উঠতে চাচ্ছি,আমার শরীরে প্রচন্ড নাইট্রোজেনের প্রেশার।কোল্ড ড্রিংকসের ছিপি খুললেই যে বুদবুদ টা তৈরি হয়,সেটা নাইট্রোজেনের কারনেই,খুব প্রেশার থেকে ছিপি খুলে দিলে তৈরি হয় বুদবুদ।তেমনি,উপরের দিকে উঠলে প্রেশার কমতে থাকবে আমার শরীরে,এতে নাইট্রোজেনের বুদবুদ তৈরি হবে যেটা আমার শরীরে serious damage করতে পারে।এই bubble তৈরি হওয়ার ঘটনাকে আমরা বলি Decompression Sickness/Bend’s Compressed Air Sickness/Divers Paralysis। পুরো নাইট্রোজেনের অর্ধেক পরিমান Dissolve থাকে Fat এ,বাকি অর্ধেক থাকে রক্তে।যখন প্রেশার কমে যায়,রক্তের নাইট্রোজেন এই bubble গুলো বানায়,যেটা blood vessel এ plug তৈরি করে।প্রথমে ছোট ব্লাড ভেসেল গুলো আক্রান্ত হয়,আস্তে আস্তে বড় বড় bubble তৈরি হয়,যেটা বড় ভেসেলগুলোতে গিয়ে আটকায়।এতে Tissue Ischemia and Tissue Death হয়।Decompression Sickness এ মাসল এবং জয়েন্টে pain দেখা দেয় বেশির ভাগের ক্ষেত্রে।কারো কারো Dizziness দেখা দিতে পারে।
Moinul Islam
Chattogram Ma-O-Shishu Hospital Medical College
Session:2017-18
প্লাটফর্ম একাডেমিক /আকমার আঞ্জুম কাফি