আগে একটুখানি গল্প হোক, মারদাঙ্গা গল্প।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর। লোডশেডিং হচ্ছে। চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার। একটি প্লেন হঠাৎ চুপিসারে এসে রানওয়ের এককোণে ল্যান্ড করলো। তার পরপরই বিমান থেকে নেমে এল কালো মুখোশ পড়া একদল সন্ত্রাসী। সিকিউরিটির চোখ ফাঁকি দিয়ে সটকে বাইরে চলে গেল সন্ত্রাসীরা। তারপর টানা ৩০ মিনিট দৌড়ে সোজা চলে গেল হোটেল রেডিসনে। তারা বেশ ক্ষুধার্ত ছিল। রেডিসনে পৌছেই গাপুসগুপুস খাওয়া শুরু করলো। এতই খেল যে খেতে খেতে মোটা হয়ে গেল। কেউ কেউ এত বেশি ক্লান্ত ছিল, না খেয়ে রুমে ঢুকেই লম্বা ঘুম দিল। এদিকে ততক্ষণে পুলিশ সন্ত্রাসীদের খবর পেয়ে গেছে। পুলিশের ভয়ে কিছু সন্ত্রাসী খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে রেডিসন ছেড়ে হোটেল সোনারগাঁয়ে চলে গেল। সেখানে পৌছে আবার খাওয়া শুরু করলো। পুলিশ ততক্ষণে সোনারগাঁয়ের চারপাশ ঘিরে ফেলেছে। শুরু হলো পুলিশ সন্ত্রাসীর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। পুলিশের সংখ্যা ছিল বেশি, তাদের গোলাগুলিতে সন্ত্রাসী কিছু মরলেও হোটেলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হল, গরম হয়ে গেল চারপাশের পরিবেশ। এরই ফাঁকেই কিছু সন্ত্রাসী পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাস্তার অলিগলিতে লুকিয়ে থাকলো। তারপর সুবিধামত সময়ে অনেকগুলো প্রাইভেট বিমান এসে কিছু কিছু সন্ত্রাসীদের উদ্ধার করে নিয়ে চলে গেল। আমার গল্প ফুরালো, মাথা কি ঘুরালো?
উপরে যা পড়লাম তা আর কিছুই না, Malaria রোগের plasmodium পরজীবীর জীবনচক্র।
বিমানটা হল Anopheles mosquito। ল্যান্ড করলো বিমান বন্দরে, মানে আপনার হাতের উপর। Mosquito এসেই কুট করে কামড় দিল, আর লালার সাথে রক্তে ঢুকে গেল একগাদা সন্ত্রাসী মানে plasmodium sporozoite। সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলে গেল হোটেল রেডিসন এ – হোটেল রেডিসন হল Liver। রেডিসনে পৌছেই খাওয়া দাওয়া শুরু করলো – Liver এর Hepatocyte এ শুরু হল hepatic schizogony।
কিছু সন্ত্রাসী আবার হোটেলে গিয়েই ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে – কিছু sporozoite hypnozoite হয়ে hepatocyte এর মধ্যে লুকিয়ে থাকে। চারটা plasmodium এর মধ্যে যে দুটোর নাম ছোট অর্থাৎ vivax ও ovale, এরাই সাধারণত hypnozoite হিসেবে hepatocyte এ লুকিয়ে থাকে।
এতে অসুবিধা হবে দুটো –
- কামড় খেয়ে জীবাণু আপনার শরীরে ঢুকলেও আপনি অনেকদিন ভাল থাকবেন, ভাল থাকতে থাকতে ভুলেই যাবেন বান্দরবন গিয়ে মশাদের ব্যাপক আক্রমণের স্বীকার হয়েছিলেন। তাই কোন চিকিৎসা না নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকবেন, আর একদিন হুট করেই আক্রান্ত হবেন জ্বরে।
- কামড় খেয়ে জ্বর হল। আর আপনি শুধু রক্তের parasite ধ্বংস করার ওষুধ খেলেন। জ্বর ভাল হয়ে গেল, কিন্তু কিছুদিন পর আবার হল, কারণ আপনার Liver এ hypnozoite ছিল। এই ঘটনাকে বলে Relapse malaria, এই relapse সাধারণত ২ বছরের মধ্যে হয়।
তাই vivax আর ovale malaria এর ক্ষেত্রে erythrocytic parasite kill করতে পারে এমন ওষুধের পাশাপাশি hepatic hypnozoite kill করতে পারে এমন ওষুধও খেতে হবে।
Plasmodium malariae ও Plasmodium falciparum এর ক্ষেত্রে এই hepatic hypnozoite দশা নাই, তবে কোন কারণে ওষুধ যদি RBC এর মধ্যে থাকা সব পরজীবীকে kill করতে ব্যর্থ হয়ে তবে চিকিৎসার অনেকদিন পরেও সেগুলো থেকে নতুন করে malaria হতে পারে, একে বলে Recrudescence malaria। Plasmodium malariae এর ক্ষেত্রে এই recrudescence অনেক বছর পরেও হতে পারে, আর Plasmodium falciparam এর ক্ষেত্রে সাধারণত ১ বছরের মধ্যে হয়।
সন্ত্রাসীরা রেডিসনে খেয়ে দেয়ে মোটা হল – sporozoite থেকে সংখ্যাবৃদ্ধি করে merozoite তৈরি হল – এই সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে Liver এর সাইজ একটু বড় হয়ে যাবে – Hepatomegaly।
পুলিশের ভয়ে রেডিসন থেকে হোটেল সোনারগাঁয়ে – সোনারগাঁ হল erythrocyte – অর্থাৎ Liver থেকে erythrocyte এ, শুরু হল erythrocytic schizogony।
এই schizogony erythrocyte এর মধ্যে merozoite থেকে schizont তৈরি হয়ে merozoite এর সংখ্যা বৃদ্ধি হবে। সংখ্যা এতই বৃদ্ধি হবে যে merozoite এর চাপে erythrocyte এর wall যাবে ভেঙে – এভাবে ভাঙতে ভাঙতে erythrocyte এর সংখ্যা যাবে কমে – develop করবে severe anaemia। তবে এই anaemia Plasmodium falciparum এ সবচেয়ে বেশি হবে, কারণ এটি সামনে যাকেই পায় তাকেই মারে, কোন বাছবিচার নাই!
নিচের দিকে তাকাই-
- Plasmodium falciparum – kill all stages of erythrocytes
- Plasmodium vivax, Plasmodium ovale – kill only reticulocytes
- Plasmodium malariae – kill only normoblasts
ওদিকে ভাঙা erythrocyte এর hemoglobin বেশি বেশি bilirubin এ রূপান্তরিত হয়ে jaundice তৈরি করবে। ভাঙা erythrocyte process করতে গিয়ে spleen এর উপর বেশি চাপ পড়বে, আর তা সামলাতে গিয়ে spleen এর সাইজও যাবে বড় হয়ে – Splenomegaly।
আবার গল্পে ফিরে আসি। পুলিশ এসে সোনারগাঁ হোটেল ঘিরে ফেললো – Leucocyte চলে এল erythrocytytic merozoite kill করতে। Leucocyte ও merozoite এর মধ্যে মারদাঙ্গা যুদ্ধের ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে – গোলাগুলিতে তৈরি হবে pyrogen – pyrogen stimulate করবে hypothalamus, ফলে হবে জ্বর, অনেক বেশি জ্বর – Fever with chills & rigor।
রক্তে প্রবেশের কতদিন পর জ্বর আসবে?
- Plasmodium vivax, Plasmodium ovale, Plasmodium falciparum – ৮ থেকে ২৫ দিন
- Plasmodium malariae – ১৫ থেকে ৩০ দিন
Malaria তে যত জ্বরই আসুক না কেন, সেটা কিন্তু একটানা থাকে না, কমে যেয়ে আবার হয় – Intermittent fever
- Plasmodium vivax, Plasmodium ovale – নিয়মিতভাবে ৪৮ ঘন্টা পরপর
- Plasmodium malariae – নিয়মিতভাবে ৭২ ঘন্টা পরপর
- সবচেয়ে ভয়ংকর Plasmodium falciparum – অনিয়মিতভাবে কখনো ১২, কখনো ২৪, কখনো বা ৩৬ ঘন্টা, কোন ঠিক ঠিকানা নাই, তবে অবশ্যই ৪৮ ঘন্টার বেশি না।
অভ্যন্তরীণ পুলিশ (WBC) কিন্তু সব সন্ত্রাসী মারতে পারবে না, কিছু সন্ত্রাসী পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিমানে করে এ দেশ ছেড়ে পালাতে থাকবে – Anopheles mosquito এসে malaria infected কাউকে কামড় দিলে plasmodium এর gametocyte গুলো ওই mosquito এর শরীরে চলে যাবে। মশকীর পেটের মধ্যে নিরাপদে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি হবে- Sexual cycle (gamogony ও sporogony) – সংখ্যা বৃদ্ধি শেষ হলে সন্ত্রাসীরা নতুন করে প্রস্তুতি নিবে নতুন নতুন দেশ আক্রমণের – অন্য সুস্থ মানুষকে কামড় দিবে – আর এভাবেই এক আক্রান্ত মানুষ থেকে অন্য সুস্থ মানুষে ছড়িয়ে পড়বে malaria।
আর একটা বিষয়, এই সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক ও এলিট শ্রেণীর হল Plasmodium falciparam। সোনারগাঁ ছাড়া যেন তেন হোটেলে তারা থাকেন না – অর্থাৎ যাদের শরীরে Hb অস্বাভাবিক যেমন HbF (ফিটাল হিমোগ্লোবিন thalassaemia তে ), HbS (sickle cell anaemia) তাদেরকে এটা আক্রমণ করতে পারে না।
উপরে পড়েছি Plasmodium falciparum হল সবচেয়ে বেশি ভয়ংকর। সামনে যাকে পায় তাকেই মারে – অর্থাৎ liver, lung, kidney, heart, brain সব কিছুরই ক্ষতি করে।
- Liver বড় করে jaundice করে,
- Lung এ pulmonary oedema,
- Kidney তে renal failure,
- Heart এ heart failure,
- Brain এ করে cerebral malaria.
- এটি এতটাই বজ্জাত যে গর্ভবতী মায়েদের placenta কে attack করে। ফলে হতে পারে abortion ও foetal growth retardation।
Diagnosis:
Thick film – Parasites
Thin film – Specific parasites
এবং ICT for malaria
Millennium Development Goals (MDGs) এর মধ্যে ‘ম্যালেরিয়ার সাথে যুদ্ধ’ একটি অন্যতম লক্ষ্য। এ যুদ্ধে আমরা অনেকটাই সফল।
ডা. কাওসার উদ্দীন
ঢামেক, কে-৬৫