১৮৬৬ সাল। আমেরিকায় গৃহযুদ্ধ পরবর্তী সময়। জুলাই মাসের ‘আটলান্টিক মান্থলি’ ম্যাগাজিনে বহুল সাড়া জাগানো একটি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিবেদন হয় । খুব অদ্ভুত একটি গল্প। গৃহযুদ্ধে হাত পা হারানো এক সৈন্য ‘জর্জ ডেডেলো’ কোন অজানা কারণে তাঁর হারানো হাত-পা গুলোতে ব্যথা পাচ্ছেন। গুজব ছড়িয়ে গেল এটা ভৌতিক ব্যাপার। রাষ্ট্রের বিত্তবান দানশীল ব্যাক্তিগণ সাহায্য নিয়ে নিজ উদ্যোগে ফিলাডেলফিয়া পৌঁছালেন। কিন্তু বাস্তবে ডেডলো নামক কোন রোগী কে পাওয়া গেল না। পাওয়া যাবে কি করে! এ তো নিছক গল্প! বেরিয়ে এলো সেই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লেখক আর কেউ নন, তিনি স্যার সিলাস ওইয়ার মিশেল, মেডিকেল নিউরোলজির জনক। তিনি প্রথম শরীরের অনুপস্থিত অঙ্গে ব্যথা অনুভব করা ব্যাপারটিকে ‘Phantom limb pain’ নামে নামকরণ করেন।
Phantom limb কী?
জন্মগত ভাবে অনুপস্থিত অথবা Amputation (অঙ্গচ্ছেদ) করার পরও হাত-পায়ে অনুভূতি বোধ করা যেন এখনো হাত-পা স্বাভাবিক অবস্থানেই আছে। উপসর্গ হতে পারে চুলকানো, ঝাঁকি, অস্বাভাবিক ভঙ্গিতে আছে এমন অস্বস্তি অনুভূত হওয়া , এমনকি কিছু ক্ষেত্রে ব্যথাও হতে পারে। তখন একে বলা হয় Phantom limb pain (PLP)
একইভাবে শরীরের অন্য অঙ্গেও হতে পারে যেমন, ব্রেস্ট, দাঁত বা চোখের রিমুভাল অপারেশনের পর।
হাইপোথিসিস:
না, কোনো অদ্ভুতুড়ে বিষয় নেই তবে Phantom limb pain এর কারণ বহুল বিতর্কিত এবং গবেষণাধীন । বিংশ শতাব্দীর আগ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা ছিল Irritation of peripheral nervous system at amputation site. কিন্তু জন্মগত ভাবে (congenital) অঙ্গ অনুপস্থিত রোগীদের মধ্যেও Phantom limb pain লক্ষ করা যায় বলে পরবর্তিতে এ তত্ত্ব গ্রহণযোগ্যতা হারালো। ১৯৯১ সালে ইন্ডিয়ান নিউরোসায়েন্টিস্ট ভি. এস. রামাচন্দন, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ এর গবেষণার উপর ভিত্তি করে নতুন হাইপোথিসিস করেন। তাঁর মতে, Sensory input নেই এমতাবস্থায় Phantom limb pain এর কারণ হতে পারে reorganisation of somato-sensory cortex of brain.
চিকিৎসা:
Phantom limb pain এর জন্য নানা মডালিটিস এর চিকিৎসা প্রস্তাবিত আছে তবে কার্যকারিতা স্বল্প।Antidepressants, Acupuncture, Vibration therapy ইত্যাদির পর সাড়া জাগিয়েছে ইন্ডিয়ান নিউরোসায়েন্টিস্ট ভি. এস. রামচন্দন স্যারের প্রস্তাবিত Mirror box. এটি খুব চমৎকার, সুলভ, সহজলভ্য চিকিৎসা। এক কথায় একে বলা যায়, Fooling the brain and fooling the pain. ম্যাজিক শো তে যেমন চার দেয়ালে আয়না লাগানো বক্স ব্যাবহার করা হয়, তেমন একটি বক্সে স্বাভাবিক হাত রাখলে আয়নার ছবিতে দেখে মনে হবে যেন অন্য হাতটি দেখা যাচ্ছে। এই ইল্যুশন তৈরী করে স্বাভাবিক হাতের ভঙ্গি পরিবর্তন করে ফ্যান্টম হাতের অস্বস্তি দূর করা সম্ভব।
কথায় আছে , সময় সবচেয়ে বড় চিকিৎসক। এখানেও তাই। সাধারণত কয়েক বছরের মধ্যে ফ্যান্টম উপসর্গ গুলো প্রতিকার হয়ে যায়।
আজ এটুকুই। করোনার এই প্রকোপে আগেকার সুন্দর সময়গুলো ফ্যান্টম মেমরি হয়ে সবাইকে সাহস দিক। শুভকামনা।
Dr Sumona Hoque Mumu
Medical College for Women & Hospital
Session:2013-14