Blog

SARS-CoV-2 Vaccine এর ইতিবৃত্ত | পর্ব ১

এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় সম্ভবত করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন। কবে আসবে, কিভাবে আসবে, কারা ই বা নিয়ে আসবেন- এই প্রশ্নগুলো প্রতিনিয়তই ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণ মানুষের মনে। ১৩জুন, ২০২০ পর্যন্ত মোট ১৩৫ টি ভিন্ন ধরনের ভ্যাকসিন ট্রায়ালের বিভিন্ন ধাপে আছে এবং গবেষকরা তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।

চলুন, প্রথমে জেনে নেওয়া যাক কিভাবে ভ্যাকসিনগুলো তৈরী করা হচ্ছেঃ

• করোনা ভাইরাসের Spike protein এর RNA মানুষের দেহে প্রবেশের করানোর মাধ্যমে।
• সরাসরি Spike protein মানবদেহে প্রবেশ করানোর মাধ্যমে।
• অন্য কোন একটি ভাইরাস যেটি মানবদেহে কোনো ক্ষতিসাধন বা বংশ বিস্তারে অক্ষম, সেটির ভেতরে Spike protein এর RNA স্থাপন করে মানবদেহে প্রবেশ করানোর মাধ্যমে।
• Corona virus এর ক্ষমতা হ্রাস করে তাকে মানবদেহে প্রবেশ করানোর মাধ্যমে, যাতে তার বিরুদ্ধে ইমিউনিটি তৈরী হয়।

মূলত এই ৪টি মূলনীতির ওপর ভিত্তি করেই ১৩৫ টি আলাদা ধরণের ভ্যাকসিনের ট্রায়াল চলছে। তবে এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ভ্যাকসিন অগ্রগামী-

  1. ChAdOx-1 nCoV-19 (UK)
  2. Moderna vaccine(US)
  3. Sinovac(China)
  4. Imperial Covid-19 vaccine(UK)

আজকের লেখাটি মূলত অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সাড়া জাগানো সুপারভ্যাকসিন ChAdOx-1 nCov-19 নিয়ে।

Mechanism of action:

মূলত “ChAdOx-1” নামটিই এই ভ্যাকসিনের কাজের ধরণটির ব্যাপারে ধারণা দেয়। ভ্যাকসিনটিতে এক ধরনের জেনেটিক্যালি মডিফাইড Adenovirus ব্যবহৃত হয় যেটি মানব দেহকে আক্রান্ত করতে অক্ষম। Adenovirus থেকেই Ch“Ad”Ox-1 নামকরণ করা হয়। “Ox” দিয়ে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিকে বোঝানো হচ্ছে। এই ভাইরাসটি মূলত ক্যারিয়ার হিসেবে কাজ করে। এর ডিএনএ এর সাথে করোনা ভাইরাসের Spike protein এর RNA যুক্ত করে দেয়া হয়। এরপর এটি মানবদেহে প্রবেশ করানো হয়। প্রবেশের পর Adenovirus টি কোষের সাইটোপ্লাজমে প্রবেশ করে এবং সেখানে Spike protein এর RNA টি মুক্ত হয়। কোষের রাইবোজোম এরপর এর থেকে Spike protein তৈরী করে। এই Spike protein আমাদের দেহে Foreign particle হিসেবে বিবেচিত হয় এবং MHC-II এর সাহায্যে Antigen presenting cell (Macrophage, Dendritic cell, B cell) এই spike protein কে Naive T cell এর কাছে উপস্থাপন করে। পরবর্তীতে IL-4 এর উপস্থিতিতে এটি Helper-T সেলে পরিণত হয়। Helper -T cell থেকে IL-4 এবং IL-5 রিলিজ হয়; যার উপস্থিতিতে B cell, Plasma cell এ রূপান্তরিত হয়। Plasma cell এরপর Spike protein এর বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরী করে। পাশাপাশি দেহে মেমরি সেল তৈরী হয়। এতে পরবর্তীতে ভাইরাস আক্রান্ত হলে খুব দ্রুত সময়ে Spike protein এর বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরী হয়। এভাবেই ভ্যাকসিনটি আমাদের শরীরে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরী করবে এমনটাই দাবী করছেন গবেষকরা।

Trial:

  • Phase-I টি UK তে সম্পন্ন করা হয়। প্রায় ১০০০ জন স্বেচ্ছাসেবক এতে অংশ নেয়। ২৪ এপ্রিল Elisa Granato এর দেহে সর্বপ্রথম ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করা হয়। ১০০০ জনের সবাইকেই এখনো পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। কারণ প্রত্যেকেই করোনা ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার আগ পর্যন্ত ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা বুঝে ওঠা সম্ভব হবে না এবং গবেষণার ফলাফল ও প্রকাশ করা যাবে না।
  • Phase-II এ UK তে প্রায় ১০২৬০ জন অংশগ্রহণ করবেন। তিনটি বয়স সীমায় এদের বিভক্ত করা হবে; ৫-১২ বছর, ৫৬-৬৯ বছর এবং ৭০ ঊর্ধ্ব। এছাড়া সাউথ আফ্রিকা এবং ব্রাজিলেও Phase-II ট্রায়াল পরিচালনা করা হবে। ব্রাজিলের সাও পাওলোতে ২০০০ জন ডাক্তার এবং নার্স এবং রিও ডি জেনিরোতে ১০০০ জন ডাক্তার ও নার্সের দেহে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে।

এখন স্বভাবতই প্রশ্ন হতে পারে, কেন ব্রাজিলে পরীক্ষা করা হচ্ছে? কেন ডাক্তার এবং নার্সদের এর ভেতরে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে?

👉মূলত গবেষকদের এখন দ্রুত ফলাফল প্রয়োজন। যদি এমন কোন জায়গায় পরীক্ষাটি করা হয় যেখানে সংক্রমণের হার খুবই কম, সেখান থেকে গবেষণার সর্বশেষ তথ্য পেতে বেশ খানিকটা সময় লেগে যাবে। তাই গবেষকরা ব্রাজিলকে উপযুক্ত জায়গা হিসেবে বাছাই করেছেন। যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১.৩৫ মিলিয়ন এবং মৃতের সংখ্যা ৫৭,৬৫৮ জন।প্রতিনিয়তই এখানে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে।

👉ডাক্তার এবং নার্সরা সাধারণত হাসপাতালগুলোতে উচ্চ ঝুঁকিতে আছে। যেহেতু তাদের আক্রান্তের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি, তাই তাদের দেহেই ভ্যাকসিন প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

Phase-II এ ChAdOx-1 ভ্যাকসিনের সাথে কন্ট্রোল গ্রুপের জন্য MenACWY ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হবে। এটি মেনিনজাইটিস এর ভ্যাকসিন, যেটি ২০১৫ সাল থেকে UK তে ব্যবহার করা হচ্ছে। এখানে আরেকটি প্রশ্নের জন্ম হতে পারে।

Why MenACWY?

মেনিনজাইটিস ভ্যাকসিনটি প্রয়োগের পর এটি ChAdOx-1 ভ্যাকসিনের মতই লক্ষণ উপসর্গ তৈরী করে। এগুলো হচ্ছেঃ
• Pain in the site of administration
• Fever
• Headache
মূলত কন্ট্রোল গ্রুপ যাতে পার্থক্য করতে না পারে- এই উদ্দেশ্য মাথায় রেখেই MenACWY ভ্যাকসিনটি বাছাই করা হয়েছে।

Phase-III পরিচালনার অনুমোদন ইতোমধ্যেই পাওয়া গেছে। অক্টোবর মাস নাগাদ গবেষকরা এটি শুরু করতে পারবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ট্রায়ালটি সফলভাবে সম্পন্ন হলে এটি ডিসেম্বরের মধ্যেই বাজারজাতকরণ সম্ভব হবে। ব্রিটিশ সরকার ইতোমধ্যেই “Astrozeneca” নামের একটি কোম্পানীর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে, যারা এর ৩০ মিলিয়ন ডোজ প্রস্তুত করবে। এছাড়াও বিশ্বের প্রায় ৭টি স্থানে এটি তৈরী হবে, যার মধ্যে আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারত ও রয়েছে।

তবে প্রানীদেহে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে যে পরীক্ষা চালানো হয় (phase-0 নামে পরিচিত) তাতে এটি আংশিক সফল হয়েছে। ৯টি বানরের মধ্যে ৬টি বানরের শরীরে এই ভ্যাকসিনটি এবং বাকি তিনটিতে অন্য ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে ৭দিন পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। প্রতিটি বানরই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। অর্থাৎ ভ্যাকসিনটি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়। তবে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা ৬টি বানর, বাকি ৩টি বানরের তুলনায় কম লক্ষণ/ উপসর্গ প্রকাশ করে। এদের মধ্যে নিউমোনিয়ার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এছাড়া যে Spike protein কে টার্গেট করে ভাইরাসটি তৈরী করা হচ্ছে তাতেও এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোন মিউটেশন দেখা যায়নি, যেটা গবেষকদের আশার আলো দেখাচ্ছে।

মানুষ বাঁচে আশায়। ধরিত্রীর এই ক্রান্তিলগ্নে মানুষ হয়তো সেই একবুক আশা নিয়েই বেঁচে আছে, প্রতীক্ষায় আছে। যতদিন পর্যন্ত গবেষকরা ভ্যাকসিনে সফল হচ্ছেন, ততদিন পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নিজেরাই নিজেদের ভ্যাকসিন হয়ে থাকাটাই শ্রেয় নয় কি?

মোঃ আদিব সিদ্দিকী
হলিফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ
সেশনঃ ২০১৭-২০১৮

One thought on “SARS-CoV-2 Vaccine এর ইতিবৃত্ত | পর্ব ১

  1. Pingback: SARS-CoV-2 Vaccine এর ইতিবৃত্ত | পর্ব ২ – Platform | CME

Leave a Reply