Accidental Drowning
লোকটি পাঁচ দিন ধরে ডুবে ছিল।
ডা. মুনসি আর কিছু না পারুক অন্তত এটি আমাকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছে। ডা. মুনসি হল একজন প্রখ্যাত ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং তার মতামত অবশ্যই বরাবরের মতো গ্রহণযোগ্য । কিন্তু কেন যেন আমার মন তার মতামেত এবার সায় দিচ্ছে না।
পুলিশের অনেক তদন্তের পরে লোকটির পরিচয় বেরিয়ে আসে। লোকটির নাম মোহনলাল। এই এলাকারই একজন বাসিন্দা। এই তদন্ত চলাকালীন পুলিশ কিছু সন্দেহজনক প্রমাণ নিয়ে আসে যে মোহনলাল কাদের চাচার হাতে হত্যা হয়েছে এবং হত্যার পর মোহনলালের লাশটি লুকিয়ে ফেলার চেষ্টায় বাইগার নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এরকম হত্যাকাণ্ড প্রায়শই আমাদের দেশে হয়ে থাকে যেখানে লাশ গুম করার জন্য গভীর নদী বা জলাশয়ে ফেলে দেওয়া হয়।
কিন্তু পুলিশের চোখে কাদের চাচার মতো মানুষকে সন্দেহের তালিকায় রাখা আমার একটুও ভালো লাগেনি। কারণ লোকটি আমার অতি নিকট এবং পরিচিত। যেই লোক একটি পিঁপড়াকেও কষ্ট পেতে দেয় না তিনি নাকি এরকম একটা অপরাধ করবে! সাত পাঁচ না ভেবে কাদের চাচার সামনে যেয়ে উপস্থিত হই এবং তার কাছ থেকে সব প্রশ্নের জবাব নেই। লোকটি আমাকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে এবং তাকে এই বয়সে এমন একটি জঘন্য অপবাদ থেকে বাঁচাতে বলে।
আমার মনে এখন একটাই প্রশ্ন, মোহনলাল যদি হত্যা না হয় তাহলে সে কীভাবে মারা গেল? হঠাৎ মনে হল এটা accidental case হতে পারে, নদীতে গোসল করার সময় নদীর প্রবল স্রোত তাকে টেনে নিয়ে যায় আর সেই সময়ই তিনি দুর্ঘটনাক্রমে ডুবে মারা যান। কিন্তু না সেটা সম্ভব না কারণ তদন্ত রিপোর্ট বলে তিনি একজন দক্ষ সাঁতারু। সাঁতারুরাও যে ডুবে মারা যায় না এমন না। হয়তো নদীর স্রোত এতই শক্তিশালী ছিল যে তিনি সাঁতার কাটতে সক্ষম হচ্ছিল না এবং এক পর্যায়ে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েন এবং শেষ পর্যন্ত মোহনলাল ডুবে যান।
কিন্তু আইন কেবল অনুমানের উপর মনোযোগ দেয় না, চায় শক্ত প্রমাণ। এরই মধ্যে কাদের চাচাকে ১৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। আমাকে যা করতে হবে তাড়াতাড়ি করতে হবে।
ডা. মুনসির সাথে আলোচনা করে ময়নাতদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিলাম। এরকম case এ autopsy করার আগে আমাদের ante-mortem এবং post-mortem drowning এর উপর পরিস্কার ধারণা থাকতে হবে। Ante-mortem drowning হল ব্যক্তি জীবিত অবস্থায় ডুবে যান এবং post-mortem drowning হল অপরাধ গোপন করার জন্য মৃত ব্যক্তির লাশ পানিতে ফেলে দেওয়া অথবা ডোবানো।
আরও একটি বিষয়ে আমাদের clear concept থাকতে হবে, তা হল diatom test.
What is diatom? Diatoms are unicellular algae present in all forms of water bodies. তার মানে হচ্ছে autopsy করে যদি এই diatoms তার সমস্ত internal organs (including brain) এ পাওয়া যায় তখন বুঝতে হবে এটি ante-mortem drowning.
আরো একটি বিষয় দেখেও ante-mortem drowning বুঝতে পারব তা হল Paultuff’s hemorrhage. Ante-mortem drowning এর সময় মানুষ নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য সহিংস প্রচেষ্টা করে। এই সময় পানি ব্যক্তির শ্বাসনালি দিয়ে alveoli তে চলে যায় এবং এই শ্বাস নেওয়ার তীব্র প্রচেষ্টার সময় কিছু alveoli ফেটে যায়। এই alveoli এর পানি তখন alveoli এর চারপাশে ক্ষুদ্র রক্তনালী দিয়ে blood এ চলে যায় এবং circulation এর ফলে প্রথমে heart তারপর ধীরে ধীরে বাকি সব organs এ চলে যায়। Post-mortem drowning এর ক্ষেত্রে এসব কিছুই পাওয়া যাবে না।
এবার autopsy এর গল্প ফিরে যাওয়া যাক। Autopsy করার জন্য inquest report আর চালান হাতে পেলাম। সাথে সাথেই কাজে লেগে পড়লাম। Autopsy করে মোহনলালের internal organ গুলো থেকে cells নিয়ে স্লাইড বানিয়ে ল্যাবে পাঠাই। ইতিমধ্যে autopsyকরার সময় lungs এ paultuff’s hemorrhage এর দেখা পাই, তাছাড়া intestine কেটে দেখার সময় পানি এবং বালুকণাও upper intestine এ দেখতে পাই। তাছাড়া ante-mortem drowning এর অন্যান্য findings তো আছেই। আমাকে autopsy room এ যিনি সাহায্য করছিলেন হঠাৎ বলে উঠেন, “স্যার উনি মনে হয় মদ পান করেন, দেখেন লিভারটা কেমন fatty liver এর মতো দেখতে।“ তাকিয়ে দেখি সত্যিই তো। কথা না বাড়িয়ে চোখ থেকে vitreous humor এর কিছু অংশ সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠিয়ে দেই।
রিপোর্ট হাতে পাই সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা নাগাদ। রিপোর্টে দেখি diatom test positive সেই সাথে vitreous humor এও ethanol এর উপস্থিতি। সাথে সাথেই মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো ইউরেকা শব্দটি। আমার হাতে এখন কাদের চাচাকে বাঁচানোর জন্য এত শক্তিশালী প্রমাণ রয়েছে যে প্রতিপক্ষ চাইলেও কাদের চাচাকে আর অপরাধী সাব্যস্ত করতে পারবে না। কারণ মোহনলাল একজন নেশাখোর এবং ঘটনার দিন ও তিনি মদ পান করে নেশাগ্রস্ত ছিলেন এবং দুর্ঘটনাবশত তিনি নদীতে পড়ে ডুবে মারা যান।
কোর্ট আমার সেই ময়নাতদন্ত ও ল্যাব রিপোর্ট এ পাওয়া তথ্য গ্রাহ্য করেন এবং কাদের চাচাকে রিমান্ড থেকে মুক্তি দেন।
Rabeya Ahmed
MHSMC
2017-18