Coogee Aquarium and swimming baths এর মালিক Charlie Hobson, ১৯৩৫ সালে ব্যবসায়িক মন্দা কাটানোর জন্য তার নোনাপানির সুইমিং পুলে একটি ৪ মিটার দীর্ঘ ও ১ টন ওজনের একটি tiger shark ছাড়ে দর্শক আকৃষ্ট করার জন্য কারণ সামনেই ছিলো aznac day(২৬শে এপ্রিল) এর ছুটি। Coogee beach হতে ৩ কিলোমিটার দূরে এই tiger shark টি ধরা হয় সুইমিং পুলে ছাড়ার ৮ দিন আগে।
প্রথমদিকে শার্কটি ঠিকই ছিলো, কিন্তু aznac day এর দিনে অদ্ভুত আচরণ করা শুরু করে। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে চলাচল ধীরে হয়ে যায়, violent convulsion শুরু হয় এবং বমি করা শুরু করে। তার মধ্যে পাওয়া যায় একটি ইঁদুর, একটি পাখি ও একটি মানুষের হাত।
সুইমিং পুলের মালিক Hobson Randwick Police Station এ খবর পাঠায় এবং হাতটিকে জল থেকে তুলে। পরে দেখা গেলো এটি একটি বাম হাত, কব্জির সাথে একটি দড়ি বাঁধা এবং forearm এর ভিতরের দিকে two boxers sparring এর একটি prominent tattoo পাওয়া যায়।
আপাতদৃষ্টিতে এটা শার্কের কাজ মনে হলেও medical examination এর সাহায্যে প্রমাণ হয় যে কোনো ছুড়ি বা ধারালো অস্ত্রের সাহায্যে হাতটি দেহ থেকে আলাদা করা হয়েছে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে। সিডনি নিউজপেপারে রিপোর্ট এর মাধ্যমে ঘটনা সম্পর্কে জানতে পেরে Edwin Smith দাবি করে এই বিচ্ছিন্ন হাতটি তার ভাই Jim Smith এর যিনি কয়েক সপ্তাহ যাবৎ নিখোঁজ। ঐ হাত থেকে ম্যানেজ করা fingerprint এবং হাতের ঐ tattoo এর মাধ্যমে প্রমাণ হয় যে এই হাত Jim Smith এরই।
Jim Smith ছিলেন একজন ইংরেজ বংশোদ্ভূত বক্সার। তিনি Gladesville এ থাকতেন। স্থানীয় সংবাদপত্র “Truth” এ প্রচারিত সংবাদের মতে, তিনি ছিলেন City Tattersall’s Club এর সাবেক বিলিয়ার্ড মেকার, শহরতলির একজন বিখ্যাত বিলিয়ার্ড সেলুন কিপার এবং এক সময়ের সম্ভবনাময় লাইটওয়েট বক্সার। সিডনির অপরাধ জগতের সাথেও তার যোগসাজশ ছিলো। ত্রিশ শতকের শুরুতে সে নির্মাতা হিসেবে কাজ শুরু করে এবং সেখানেই পরিচয় হয় Reginald Lloyd Holmes এর সাথে এবং পরবর্তীতে তার অধীনে বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত হন।
Reginald Holmes ছিলেন একজন রহস্যময় মানুষ। তিনি তার পিতা ও পিতামহের পদাঙ্কই অনুসরণ করেছিলেন, ছিলেন Lavendar bay এর McMohan’s point এর একজন সম্মানিত এবং সফল বোটবিল্ডার। Royal Sydney Yacht Club এর সাথে যুক্ত ছিলেন এবং ছিলেন স্থানীয় Presbyterian Church এর একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি। তিনি বোটনির্মাতা হিসেবে সফল হলেও তার আয়ের মূল উৎস ছিলো সিডনিগামী জাহাজগুলো থেকে ফেলা কোকেন, সিগারেট এবং অন্যান্য নিষিদ্ধ পন্য এনে শহরে বিক্রি করা, স্পিডবোটগুলো তিনি এই কাজেই ব্যবহার করতেন।
তিনি বীমা কেলেঙ্কারীর কাজও করতেন। একটি ঘটনা এমন ছিলো- তিনি এবং তার আরও কয়েকজন বন্ধু Pathfinder নামে একটি ক্রুজার কিনেছিলেন, এটিতে অতিরিক্ত বীমা করা হয় এবং পরবর্তীতে ডুবিয়ে দেয়া হয়। এই সমস্ত কাজে Jim Smith সহযোগিতা করতেন, তিনি প্রায়শই কোকেন আনার স্পিডবোটগুলি চালাতেন এবং Pathfinder তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন।
শীঘ্রই এরা দুইজন জালিয়াতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়া প্রাক্তন সেনা Patrick Brady এর সাথে জুটি বেঁধেছিল। তারা Holmes এর ধনী ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে চেক জালিয়াতি করতে শুরু করে।
পরবর্তীতে, Smith এবং Holmes উভয়েই একটি ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনার পর থেকেই Smith Holmes কে ব্ল্যাকমেইল করতে শুরু করে। Smith জানতো যে Holmes এর অনেক কিছু হারানোর আছে কারণ সিডনিতে তার সম্মানজনক অবস্থান ছিলো। তিনি বুঝতেও পারলেননা সে নিজেই তার জীবনকে বিপদে ফেলেতে চলেছে।
৭ই এপ্রিল, রবিবার রাতে, Jim Smith ও Patrick Brady মদ্যপানে এবং তাস খেলায় নিমগ্ন ছিলো Cronulla এর Cecil Hotel এ। Smith তার জীবনের শেষ রাত অতিবাহিত করছিলো। তারা শীঘ্রই হোটেল থেকে ২ কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে Tallombi Street এ Brady এর ভাড়া নেয়া একটি ঘরে চলে যায়। সম্ভবত এখানেই Smith কে খুন করা হয়েছিলো। সেদিন গভীর রাতে মতান্তরে পরের দিন সকালে Brady Tallombi Street এর বাড়ি থেকে 3 Bay View Street, McMahons Point এর উদ্দেশ্যে একটি ট্যাক্সি ভাড়া করে। এটি ছিলো হোমসের বাড়ির ঠিকানা।
Smith এর চূড়ান্ত গতিবিধি শনাক্ত করতে পারার কারণে Brady এর সাথে তার অবস্থান নিশ্চিত করা বেশ সহজ ছিল। যে ট্যাক্সিচালক Brady কে Holmes এর বাড়ির উদ্দেশ্যে নিয়ে যায়, সেই ট্যাক্সিচালক Brady কে শনাক্ত করে, দুটি ঠিকানাই সে শনাক্ত করতে পেরেছিলো। ট্যাক্সিচালক এও বলেন যে Brady স্পষ্টভাবে তার জ্যাকেটের নীচে কিছু লুকিয়ে রেখেছিল। Tiger shark টি Jim Smith এর হাত সুইমিংপুলে বমি করার মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে, Patrick Brady কে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছিল।
একটি মাত্র সমস্যা ছিল- হত্যার ঘটনা যে ঘটেছে সেটা একটি দেহ ছাড়া, শুধুমাত্র একটি হাত দিয়ে প্রমাণ হয় নাহ। Brady এবং Holmes এর বিরুদ্ধে পুলিশ এখন পর্যন্ত যে সমস্ত প্রমাণ সংগ্রহ করেছিল তা যথেষ্ট ছিল না। তাদের একটি স্বীকারোক্তি দরকার।
তবে একজন সন্দেহভাজন যখন গ্রেফতার হয়েছে,
প্রমাণ হতে আর বেশি সময় লাগবে নাহ এটাই ধারণা হয়েছিলো সবার। আরো তথ্যপ্রমাণের জন্য সেদিনই Lavendar bay তে Holmes-এর বোটসেড এ পুলিশ গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলো। তখন তিনি Brady কে চেনার বিষয়টিও অস্বীকার করেছিলেন।
এরপরে মামলার অগ্রগতি শ্লথ হয়ে যায়। মামলাটি ২০ মে পর্যন্ত স্থগিত বলে মনে হয়েছিল, ঐদিনই মামলাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকে মোড় নেয়।
এই হত্যাকান্ড Holmes এর মনে গভীর প্রভাব ফেলে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের চার দিন পরে, ২০ মে সোমবার সকালে, Holmes এক বোতল ব্র্যান্ডি এবং একটি পিস্তলসহ একটি স্পিডবোট নিয়ে সমুদ্রের দিকে যাত্রা করে। অতিরিক্ত মদ্যপ অবস্থায় তিনি Lavendar bay উপকূলে গিয়ে থামে এবং আত্মহত্যার চেষ্টা করে। পিস্তল বের করে নিজের মাথায় গুলি করলেও অলৌকিকভাবে সে বেঁচে যায়। বুলেটটি তার কপালে হাড়ে আঘাত করে এবং বুলেটের ধাক্কায় সে পিছন দিকে জলে পড়ে যায়। তার কব্জির কাছে একটি দড়ি তাকে ডুবে যাওয়ার থেকে বাঁচায়। পুনরায় সে বোটের উপর উঠে আসে এবং স্পিডবোট নিয়ে সিডনি হারবারের দিকে যাত্রা করে। সে Circular Quay এর চারপাশে উদ্ভ্রান্তভাবে স্পিডবোট চালাচ্ছিল। এতে সকালের ফেরিগুলোর চলাচল ব্যাহত হচ্ছিল। হারবারের চারপাশে তিনি প্রায় চার ঘন্টা যাবৎ স্পিডবোট নিয়ে ঘুড়ছিলেন। দুটি নৌপুলিশের বোট এসময় তাকে ধাওয়া করে এবং Holmes তাদের ২ কিলোমিটার দূরে সমুদ্রের দিকে নিয়ে যান এবং অবশেষে নৌকা থামিয়ে তিনি আত্মসমর্পণ করেন। “Jimmy Smith is dead and there is only another left”- এই কথা তিনি বার বার বলছিলেন, তিনি এও বলছিলেন-“If you leave me until tonight I will finish him”। ধরা পড়ার সময়, স্পিডবোটের নীচে একটি ব্র্যান্ডি বোতল ছিল, খালি।
অবশেষে কিছু সপ্তাহ পরে যখন Holmes কে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল, তখন সে পুলিশকে Brady এর প্রতি দোষের দিকে ইঙ্গিত করে সর্বদা অসংলগ্ন গল্প বলেছিলো। সে প্রমাণ করার চেষ্টা করছিলো যে স্মিথের মৃত্যুর সাথে তার কোনও যোগসূত্র নেই।
Holmes কে বলতে শুনা যায় যে সে চাঁদাবাজির শিকার হয়। তিনি গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন Smith এর একটি কাটা হাত নিয়ে Brady এক গভীর রাতে তার বাড়িতে এসেছিলো। তিনি Holmes কে ৫০০ ডলার না দিলে ব্ল্যাকমেইল করার হুমকি দিচ্ছিল। সে Holmes কে খুলে বলেছিলো যে কীভাবে Smith কে হত্যা করা হয়েছে, তার দেহের অংশগুলো আলাদা করে সেই অংশগুলো একটি ট্রাঙ্কে রেখে Gunnamatta Bay তে নিক্ষেপ করেছিলো। এইরকম ocean burial ’২০ এবং ’৩০ এর দশকে অপরাধজগতে ” Sydney send-off” হিসেবে পরিচিত ছিলো এবং এই পদ্ধতিই ছিলো কোনও দেহের নিষ্পত্তি করার সর্বোত্তম উপায়। বাম হাতটি, এর স্বতন্ত্র বক্সিং ট্যাটুর রাখা হয়েছিল যাতে প্রমাণ হিসেবে দেখানো যায়।
Brady কে Holmes টাকা দিয়েছিল এবং হোমসের বসার ঘরে সেই হাতটি রেখে Brady চলে যায়। Holmes আতঙ্কিত হয়ে Maroubra এর দিকে গাড়ি নিয়ে চলে যায় এবং অন্ধকারে হাতটি সাগরে ফেলে দেয়। এই হাতটিই Tiger shark টির পেটে যায় যেটা প্রদর্শনীর জন্য সুইমিং পুলে নেয়া হয়। হত্যার নয় দিন পরে (১৭ই এপ্রিল), Bert এবং Hobson এই হাঙ্গরটিকে সমুদ্র থেকে ধরার পর কিনে নেয়, প্রদর্শনীর জন্য রাখে এবং নিখুঁত এই অপরাধটি উন্মোচিত হতে শুরু করে।
পুলিশকে এই সমস্ত ব্যাখ্যা দেওয়ার পরে, ১২ই জুন অনুষ্ঠিত হওয়া Jim Smith মৃত্যুর inquest এ Holmes সাক্ষী হতে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদটি শুরু হবার দিন সকালে Holmes কে Harbour Bridge এর নীচে Hickson Road এ তার গাড়িতে(Nash sedan) এর ড্রাইভিং সিটে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল, তার বুকে তিনটি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ছিলো। অদ্ভুত এই টুইস্টে পুলিশ এই সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে Holmes সম্ভবত নিজের ভাড়া করা একজন হিটম্যানের দ্বারা আত্মহত্যা করার এক অদ্ভুত পন্থা বেছে নেয়।
হোমসের মৃত্যুর সাথে সাথে স্মিথের হত্যার জন্য Brady র বিরুদ্ধে মামলাটি ধসে পড়ে। যদিও ক্যাব চালক সাক্ষ্য দিয়েছিলো যে Brady সেদিন বিচলিত ছিলো, তার পকেটে একটি হাত রেখেছিল যা সে একবারো বের করেনি এবং ভয়ে ছিলো যেন কেউ তাকে অনুসরণ করে চলেছে, তাও বিচারকাজ দুই দিনেরও কম সময়ে শেষ হয়েছে। কেউই দোষী সাব্যস্ত হয়নি। Patrick Brady এর বিরুদ্ধে মামলা খারিজ করা হয়।
এই হত্যাকান্ডের জন্য আর কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়নি। ১৯৬৫ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত Patrick Brady অস্বীকার করেছিলেন যে এর সাথে তার কোনও যোগসূত্র রয়েছে।
তবে এরপরে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসে। Smith ছিলেন একজন পুলিশ ইনফরমার। সেইসময়ে ‘fizzer’ বা ‘ fizgig’ বলা হত এদের। Smith এর কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ Eddie Weyman এবং তার এক সাথীকে একটি ব্যাঙ্কে হানা দেবার সময় হাতেনাতে ধরতে পারে। যদিও অপরাধগুলোর মধ্যে আপাতদৃষ্টিতে কোনো সংযোগ নেই, তবে লেখক Alex Castles মতামত দিয়েছেন যে Eddie Weyman Holmes কে হত্যার জন্য সন্দেহভাজন ছিল।
১৯৩০-এর দশকে Eddie Weyman সিডনির অন্যতম বিপজ্জনক অপরাধী ছিলেন। তখনকার সময়ে আন্ডারওয়ার্ল্ডে যুক্ত অপরাধীরা যা চান তা পাওয়ার জন্য সহিংসতার পথ ব্যবহার করতেও দ্বিধা করেননা। Holmes লাভজনক কিন্তু বিপজ্জনক কোকেইন ব্যবসার সাথে গভীরভাবে জড়িত ছিল এবং সেও একটি হত্যার শিকার হতে পারত। কোকেন বিতরণ এবং পতিতাবৃত্তির নিয়ন্ত্রণের জন্য Kings Cross এবং East Sydney এর রাস্তায় বিভিন্ন দলের উন্মুক্ত যুদ্ধ ছিল খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। এখানে একটি অলিখিত নিয়ম ছিল – “Never squeal to the cops” অর্থাৎ পুলিশের কাছে গুপ্তচরবৃত্তি কিছুতেই করা যাবে না। সেইদিক বিবেচনায় নিলে Eddie Weyman এবং Holmes উভয়েরই কাছে Jim Smith এর হত্যা একটি ‘হাত-সাফাই’ করার ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা যায়।
তথ্যসূত্রঃ
১। https://dictionaryofsydney.org/entry/shark_arm_murder_1935
২। https://www.news.com.au/lifestyle/real-life/true-stories/how-severed-arm-regurgitated-by-tiger-shark-led-to-murder-mystery/news-story/183aa1246bdaa589cbc4b28965c04c1a
Name: Dhruba Jyoti Mondal
College: Abdul Malek Ukil Medical College, Noakhali.
Session: 2017-18