Blog

অপহরণকারীর প্রতি ভালোলাগা! Let’s Know about Stockholm Syndrome

হলিউড মুভির Money heist-এর মনিকা এবং ডেনভারের জুটির কথা কে না জানে! বর্তমানে সিনেমা জগতের বহুল প্রচলিত এই রোমান্টিক কাপলের সম্পর্কটা কিন্তু স্বাভাবিক ছিলো না। ডাকাতি করার সময় প্রফেসর গ্যাং-এর সহজ সরল মনিকার রয়াল মিন্ট অফ স্পেনে ডাকাত দলের সর্দার ডেনভারের সাথে মনের অজান্তে এক গভীর প্রনয় হয়ে যায়। 

তারপর kingkong মুভির আন্দ্রেয়িও এবং কিংকং-এর ক্ষেত্রেও কিন্তু একই ঘটনা ঘটে। আন্দ্রেয়িও যখন ঘটনাচক্রে কিংকং-এর রাজ্য বনে চলে যায় তখন বনের রাজা কিংকং তার প্রেমে পরে। তাইতো পরে  আন্দ্রেয়িও তার শহরে চলে আসলে কিংকং তার টানে সুদূর বন থেকে লোকালয়ে চলে আসে। যদিও কিংকং মারা যাওয়ার পরে আন্দ্রেয়িও কিংকং-এর এই ভালোবাসাকে মেনে নিয়েছিলো কি না তাও ভাবার বিষয়!   

আবার যদি বলিউড মুভির কথা ধরি, Highway মুভিতে রানদিপ হুদা যখন আলিয়া ভাটকে কিডন্যাপ করে করে নিয়ে যায় আলিয়া যেন এক নতুন স্বাধীন  জীবন উপলব্ধি করে। সবসময় বাধাধারার নিয়মে চলা আলিয়া যখন অপহরণের পর স্বাধীনতা পায়, সে অপহরণকারী রানদিপের প্রতি অন্য অদ্ভূত এক অনুভূতি টের পায়। 

শুধু যে বড়দের ক্ষেত্রে এমনটা হয়, তা কিন্তু নয়। প্রয়াত অভিনেতা ইরফান খানের Madaari মুভিতেও দেখা যায় ছোট্ট যে শিশুটিকে সে অপহরণ করে তার সাথে এক অজানা ভালোবাসা, মায়ার সৃষ্টি হয় তাদের উভয়ের মনে। 

এই অদ্ভুত অনুভূতিগুলোর কারণ কি আসলে? যে আপনাকে অপহরণ করেছে, আপনার ক্ষতি করতে চায়, তার প্রতিই এতো মায়া জন্মানো তো স্বাভাবিক নয়। 

আসলে এ সব কাহিনী একই জিনিসের সূত্রধারা আর তা হলো – Stockholm syndrome

চলুন জেনে নেই এই অদ্ভুত অনুভূতি Stockholm syndrome সম্পর্কে-

⚫ কি এই Stockholm syndrome?

 ➡ Stockholm syndrome is a psychological condition that occurs when a victim of abuse identifies and attaches, or bonds, positively with their abuser. This syndrome was originally observed when hostages who were kidnapped not only bonded with their kidnappers, but also fell in love with them.

That means in this condition hostages develop a psychological alliance with their captors during captivity.

অর্থ্যাৎ Stockholm syndrome হলো এমন একটি syndrome, কোনো মানসিক ব্যাধি বা মানসিক অসুস্থতা নয়। এটি সাধারণত জিম্মিদের মধ্যে দেখা এমন একটি মানসিক অবস্থা, যার দরুন জিম্মিরা তাদের অপহরণকারীদের প্রতি আনুগত্য ও আবেগপ্রবণ টান অনুভব করে। এর সূত্রপাত পরিস্থিতিগত, প্যাথোলজিকাল নয়।

বলা হয়ে থাকে যে, প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে জটিল হলো মানবদেহ। আর তার চেয়েও জটিল হলো মানুষের মন। প্লাবনের জলের মতো এই মন ধাবিত হতে পারে স্থান-কাল-দিকের তোয়াক্কা না করেই। ভাবুন তো, আপনাকে তুলে নিয়ে গেল কেউ, মুক্তিপণ হিসাবে টাকা চাইলো, টাকা পেয়ে আবার ছেড়েও দিলো, কিন্তু আপনার আর ফিরে আসতে ইচ্ছা করছে না। কী হবে তখন?

গত কয়েক যুগে বেশ কয়েকবার এমন ঘটেছে বলে জানা যায়, যখন কিডন্যাপ হওয়া আর খুব খারাপ লাগেনি জিম্মির কাছে। বরং ভিকটিম হয়ে উঠেছিলো সহানুভূতিশীল, এমনকি বিশ্বস্তও। মনের এই অদ্ভূত পরিবর্তিত অবস্থার নামই স্টকহোম সিনড্রোম (Stolkholm Syndrome)। 

⚫ এই Stockholm syndrome নামকরণ কিভাবে হয়?

➡ সাধারণত সুইডিস ক্রাইমিনোলোজিস্ট নিলস্ বেজেরটে একে Norrmalmstorg syndrome বলা হতো, কিন্তু সুইডেনের বাহিরে এটি Stockholm syndrome নামে বেশি পরিচিতি পায়।

মূলত প্রথমে এর সাধারণ নাম ছিল “Capture bonding syndrome”। পরে ১৯৭৩ সালের ২৩ শে অগাস্ট, স্টকহোমের ব্যাংকটিতে এমন নাটকীয়তার সূত্রপাত হলো যা সারা বিশ্বের খবরের কাগজের প্রথম পাতায় জায়গা করে নিলো এবং মনোবিজ্ঞানের জগতে Stockholm syndrome নামের এক নতুন বিষ্ময়ের জন্ম দিলো। ব্যাংকে ঢুকে অপরাধীরা তাদের বন্দুক চালিয়ে ঘোষণা করলো যে “The party has just begun”। দুজন ডাকাত তখন পরবর্তী প্রায় ১৩১ ঘণ্টার জন্যে চারজনকে জিম্মি করলো, যার মধ্যে তিনজন ছিলো মহিলা এবং একজন পুরুষ। Stockholm syndrome নামটা তখন থেকেই চালু হয় যখন এই চারজন অপহৃত ব্যক্তি মুক্তি পাবার পর অদ্ভুত ব্যবহার করা শুরু করে। মুক্তি পাবার পর গণমাধ্যমে দেওয়া তাদের সাক্ষাৎকারে বিষয়টি আস্তে আস্তে পরিষ্কার হয়ে ওঠে যে, তারা মানসিকভাবে তাদের অপহরণকারীদের সমর্থন করা শুরু করেছে এবং মনে করছে আইনরক্ষাকারী বাহিনী তাদের আঘাত দেওয়ার চেষ্টা করছে। তারা মনে করতে থাকলো যে, অপরাধীরাই তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে। তারা শুধু অপরাধীদের কোর্টে দোষী হিসেবে চিহ্নিত করতে অস্বীকারই করেনি, বরং তাদের মুক্তির জন্য অর্থ সংগ্রহ করা শুরু করে। এমনকি তাদের মধ্যে একজন মহিলা, অপহরণকারীদের একজনের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে যান। স্পষ্টভাবে এই ঘটনাটিতে অপরাধীদের সাথে অপরাধে শিকার ব্যক্তিরা মানসিকভাবে আবদ্ধ হয়ে যায়।

অত্যন্ত চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার পর থেকেই আক্রান্ত ব্যক্তির মনের এই অবস্থাকে ‘Stockholm syndrome’ বলে ডাকা শুরু হয়।

⚫ এবার একটু সিনেমার জগৎ থেকে বের হয়ে বাস্তবে ফিরে আসি। সিনেমা ছাড়া বাস্তব জীবনে এই Stockholm syndrome-এর কি কোনো অস্তিত্ব কি নেই? অবশ্যই আছে।

চলুন জেনে নেই বাস্তবে ঘটে যাওয়া কয়েকটি বিখ্যাত কেস Stockholm syndrome সম্পর্কে?

➡ ১. Patty Hearst And The Symbionese Liberation Army :

Hearst-কে গেরিলা গ্রুপ অপহরণ করেছিল। মায়ায় এতোটাই জরিয়ে পরেন যে পরবর্তীতে তিনি ডাকাত দলের সাথে যুক্ত হয়ে সাহায্য করেন ব্যাংককে ছিনতাই করতে সহায়তা করেছিলেন। তাকে এজন্য পরে গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো।

 ২. Natascha Kampusch and Kidnapper  Wolfgang  Prilklopil :

কাম্পুশকে আট বছর ধরে পাইক্লোপিলের বাড়ির এক ভাণ্ডারে বন্দি রাখা হয়েছিলো। যখন সে চলে গেল, পাইক্লোপিল নিজেকে হত্যা করে। পরে কাম্পুশ পাইলোপিলকে রেখে চলে যাওয়ার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন এবং যে বাড়িতে তাকে কারাবন্দী করা হয়েছিল সেই বাড়ি কিনে সেখানেই থাকতেন। 

৩. Mary Mcelroy and her four kidnappers :

 ১৯৩৩ সালে ২৫ বছর বয়সী Mary Mcelroy-কে বন্দুকের নির্দেশে চারজন লোক ধরে নিয়ে যায় এবং তাকে দেয়ালে বেঁধে রেখেছিল। যখন তাদের শেষ পর্যন্ত দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল, তখন তিনি বলেছিলেন যে তারা তার সাথে ভাল ব্যবহার করেছে। পরে অপহরণের মূল পরিকল্পনাকারীকে মৃত্যুদণ্ডে দন্ডিত করা হলে, বহু বছর ধরে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা এবং মাদকের আসক্ত থাকতেন তিনি। পরে ১৯৪০ সালে তিনি আত্মহত্যা করেন এবং একটি নোটে লিখে যান- “আমার চারজন অপহরণকারী সম্ভবত পৃথিবীর সেই চারজন মানুষ যারা আমাকে একেবারে বোকা মনে করে না। আমার এখন শুধু মৃত্যুদণ্ডের পথ খোলা রয়েছে সুতরাং দয়া করে আমাকে আত্মহত্যার সুযোগ দিন – মেরি।”

⚫ Stockholm syndrome কি শুধু অপহরণকারী এবং জিম্মির মধ্যে একটি সম্পর্ক?

➡ তা কিন্তু নয়।  যদিও কেবল অপহরণের ঘটনাগুলোই বলা হয়েছে, কিন্তু অন্য পরিস্থিতিতে অন্য নির্যাতিত মানুষদের মধ্যেও তাদের প্রতি অন্যায়কারীদের প্রতি একই মনোভাব দেখা যায় । বিশেষত নারী নির্যাতন, দীর্ঘ দিন থেকে চলে আসা শিশু নির্যাতন, যুদ্ধবন্দি, ধর্মীয় কারণে আটক রাখা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে, নিকটাত্মীয় দ্বারা ধর্ষণের স্বীকার এমন কেউ বা ব্যক্তিসত্ত্বা ধ্বংসকারী সম্পর্কে জড়িত থাকা ব্যক্তির ক্ষেত্রেও প্রায়ই স্টকহোম সিনড্রোমের লক্ষণগুলো দেখা যায়। এগুলোও এই সিনড্রোমেরই আলাদা প্রকার।

Fig : Who can suffer from Stockholm syndrome.

⚫ Is Stockholm Syndrome a real diagnosis?

➡ উত্তর হ্যাঁ এবং না উভয়ই হতে পারে। কেননা Stockholm Syndrome কোনও DSM-5 (Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders) অনুসারে মানসিক অসুস্থতা বা ব্যাধি সম্পর্কিত স্বীকৃত মানসিক রোগ নয় বরং কিছু অপহরণকারী এবং জিম্মি দ্বারা প্রদর্শিত কিছু অদ্ভুত symptoms যা ক্লিনিকাল উপায়ে প্রদর্শিত হয় ।

⚫ এবার জানা যাক Stockholm syndrome এর Symptoms গুলো তাহলে কি কি?

➡ 1. The victim develops positive feelings toward the person holding them captive or abusing them.

2. The victim develops negative feelings toward police, authority figures, or anyone who might be trying to help them get away from their captor. They may even refuse to cooperate against their captor.

3. The victim begins to perceive their captor’s humanity and believe they have the same goals and values.

⚫ এখন অনেকেই জানতে চাইবে এই অদ্ভুত মানসিক রোগের কি কোনো চিকিৎসা আছে?

➡ হ্যাঁ অবশ্যই আছে। এ রোগের চিকিৎসা  একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শের মাধ্যমে নিতে হবে। প্রথমে Psychologists and psychotherapists কে কাউন্সিলিং-এর মাধ্যমে জানতে হবে জিম্মি কোথায়, কিভাবে, কোন ঘটনার দরুন, কার সাথে এরকম সম্পর্কে জড়িয়েছিল। সে অনুযায়ী তাকে পর্যায়ক্রমে কাউন্সিলিং এবং থেরাপি দিতে হবে।

সাধারণত short term-এর ক্ষেত্রে, post-traumatic stress disorder এর জন্য counseling or psychological treatment দেওয়া হয়। 

আর Long term-এর ক্ষেত্রে  psychotherapy দেয়া হয়। 

যেহেতু কোনও ব্যক্তি এক্ষেত্রে মানসিক, এবং শারীরিক উভয় ধরনের নির্যাতনের শিকার হতে পারে, তাই এর চিকিৎসায় কয়েক মাসের counseling এবং psychotherapy, এমনকি বছরও লাগতে পারে। 

⚫ এই Stockholm syndrome এর মতোই আরেকটি টার্ম আছে Helsinki Syndrome। কিন্তু কিছুটা ভিন্ন।

তাহলে কি এই Helsinki Syndrome কি?

➡ Helsinki syndrome is a psychological syndrome in which a person being held captive begins to identify with and grow sympathetic to his or her captor, simultaneously becoming unsympathetic towards the police or other authorities। এখানে জিম্মি অন্যদের কাছে তার এই ভালোলাগার কথা বোঝাতে চায়। যেমনটি হয়েছিলো ১৯৭৩ সালের ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায়। এক জিম্মি অপহরণকারীর প্রেমে পরে যায়। এরপর জিম্মি তা সবার সামনে প্রকাশ করায় তাদের এ সম্পর্ক তাদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে।

⚫ সবসময় যে জিম্মিই প্রেমে পরবে তা তো নয়! অপহরণকারীরও মন আছে, মায়ার বন্ধনে সেও আটকে যেতে পারে। তখন কি তাকে Stockholm syndrome বলা যাবে? তখন আসলে তাকে Lima syndrome বলা হয়।

কি এই Lima syndrome?

➡  The reverse of Stockholm syndrome, wherein the captors develop feelings of sympathy for their hostages, is called Lima syndrome. ইহা ১৯৯৬ সালে পেরুর জাপানি এমবাসির লিমা নামক এক নারীর নামে করা হয়। 

Kingkong মুভির কিংকং-এর মূলত Lima syndrome এ আক্রান্ত ছিলো।

Fig : Facts about Lima syndrome.

⚫ কেউ আপনাকে অপহরণ করলো অথবা ক্ষতি করার চেষ্টা করছে, আপনি নিশ্চয়ই তার প্রেমে হাবুডুবু খাবেন না। রূপকথার গল্পে অথবা সিনেমায় এটা যতটা স্বাভাবিক, বাস্তবে এতোটা নয়!

তাহলে এই Stockholm syndrome-এর বিপরীত কি হতে পারে?

➡  The opposite of Stockholm syndrome is called London syndrome. It describes a situation where the hostages will not cooperate with their captors. ১৯৮০ সালে একজন ইরানীয় সেপারেটিস্ট লন্ডনের ইরানীয় এম্বাসিতে কয়েদিদের জামিন চাইলে ব্রিটিশ প্রাইম মিনিস্টার তা নাকোচ করে দেন। প্রেস সংযুক্তি আব্বাস লাসওয়ানী কয়েদিদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করলে, পরে তাদের মধ্যে একজন ক্ষুব্ধ হয়ে লাসওয়ানীকে মেরে ফেলে। 

 শিকারী আর শিকারের অদ্ভুত এই আচরণ সম্পর্কে জেনে অবাক হচ্ছেন তো তাইনা? সত্যি বলতে কি, মানুষের মনের চেয়ে বিচিত্র কিছু নেই! মনের উপর কি কারো জোর চলে? তাইতো কবি লালন শাহ বলেছেন- 

“ভাব দিয়ে খোল ভাবের তালা

দেখবি সে মানুষের খেলা।

ঘুচে যাবে মনের ঘোলা

থাকলে সে রূপ নিহারে।।”

আচ্ছা সবইতো জানা হলো, এবার বলুনতো বহুল প্রচলিত রূপকথার গল্প ‘Beauty and the Beast’-এর Belle তো Beast-এর সাথে বন্দি অবস্থায় এক অদ্ভুত মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলো। ছোটবেলার এই গল্পের Belle-এর মধ্যেও কি Stockholm syndrome দেখা দিয়েছিলো? এই প্রশ্নের উত্তরটা নাহয় আপনিই বের করুন খুঁজে। হয়তো এ উদ্দেশ্যে ছোটবেলার রূপকথার গল্পে নাহয় আরেকবার হারিয়ে যাওয়া যাবে!!     

Reference:

1.https://en.wikipedia.org/wiki/Stockholm_syndrome

2. https://www.healthline.com/health/mental-health/stockholm-syndrome

3. https://roar.media/bangla/main/plants-animals/stolkholm-syndrome

প্ল্যাটফর্ম একাডেমিয়া/ সাদিয়া কবির 

ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ

২০১৫-১৬ 

Leave a Reply