জুন ২৬, ২০১৫। কোপা আমেরিকার খেলা চলছে, আর্জেন্টিনা বনাম কলাম্বিয়া-কোয়ার্টার ফাইনাল। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে, সেখান থেকে টাইব্রেকার। Sudden death-এ আর্জেন্টিনার হয়ে দ্বিতীয় শটটি নিতে আসে বিখ্যাত ফুটবলার ‘কার্লোস তেভেজ’ । কিন্তু অদ্ভুতভাবে সেই টানটান উত্তেজনার মূহুর্তে আমার চোখ আঁটকে যায় তেভেজের চেহারায়- ডান কান থেকে নিচের দিকে প্রায় বুক পর্যন্ত চামড়া কেমন যেন কুঁচকে আছে। তখনো মেডিকেলে ভর্তি হইনি। তাই ভেবেছিলাম হয়ত কোন চর্মরোগ। এরপর মেডিকেলে ভর্তি হই। থার্ড ইয়ারে উঠে যাওয়া শুরু করলাম ওয়ার্ডে। হঠাৎই একদিন এক আগুনে পুড়ে যাওয়া রোগীকে দেখলাম আর সাথে সাথেই মনে পড়ে গেলো দু’বছর আগের সেই তেভেজের চেহারা। ততদিনে নামটা অন্তত শিখে গেছি, ‘Post burn contracture’!
থার্ড ইয়ার থেকে শুরু করে একেবারে ফাইনাল প্রফ পর্যন্ত সার্জারী পরীক্ষাগুলোতে জেনারেল সার্জারীর রোগীর পাশাপাশি হরহামেশাই Post burn contracture এর রোগীও দেওয়া হয় শর্ট কেইস হিসাবে। চলুন, আজকে তবে এই বিষয়েই কিছু জানার চেষ্টা করি।
Burn কে মুলত ৩ ভাগে ভাগ করা হয়।
- Superficial partial thickness burn
- Deep partial thickness burn
- Full thickness burn
Full thickness burn এ ত্বকের dermis অংশটি পুরোপুরিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হয় না কোনো capillary return। পোড়া জায়গাটি হয়ে যায় সম্পূর্ণ অসাড়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, এই অবস্থায় ওই পোড়াস্থানে একটা সুঁই ঢুকিয়ে দেয়া যাবে কোনোরকম ব্যথা কিংবা রক্তপাত ছাড়াই। আর যেকোন ধরণের contracture তৈরি হয় মূলত এই deep burn এর কারনেই।
Pathophysiology:
সাধারণত শরীরের যেকোন স্থানে ক্ষত নিরাময় হয় epithelialization এর মাধ্যমে। কিন্তু deep burn এ যেহেতু ত্বকের সম্পূর্ণ epithelium ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাই এর নিরাময় ঘটে epithelialization নয় বরং fibrosis এর মাধ্যমে। স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী কারো এই ধরণের পুড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটলে পোড়া স্থানে resurfacing করতে হয়, graft কিংবা flap দিয়ে। কিন্তু যদি তা না করা হয় কিংবা সঠিকভাবে না করা হয় তখনই বাঁধে বিপত্তি। সেক্ষেত্রে নিরাময় ঘটে granulation tissue তৈরি এবং fibrosis এর মাধ্যমে। এর ফলে সেখানে হয় scarring। এই scar tissue-র ধর্মই হলো তা যত ম্যাচিউর হয়, ততই সংকুচিত হবে। আর এই ঘটনাই শেষ পর্যন্ত তৈরি করে contracture!
আবার এর ব্যতিক্রমও আছে। contracture তৈরি হতে পারে superficial burn এর ক্ষেত্রেও, যদি তা সংক্রমিত হয়ে যায়। তখন এই infection এর কারনে dermis এর টিস্যুগুলোতে slough তৈরি হয়। এরপর সেখান থেকে fibrosis, তারপর scar হয়ে সেই contracture-এ সমাপ্তি।
প্রতিরোধে করণীয়ঃ
প্রাথমিকভাবে যদি পোড়াস্থানের সঠিক চিকিৎসা করা যায় তবে এই পরিণতি এড়ানো সম্ভব। এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত উপায়গুলো কাজে লাগানো হয়ঃ-
● Deep burn:
■ এক্ষেত্রে, বিশেষত তা যদি হয় হাত-পা, মাথা কিংবা মুখমণ্ডল তবে প্রথমেই আক্রান্ত অংশকে যথাযথভাবে splinting করা হয়।
■ এরপর সেখানে granulation tissue তৈরি হলে ক্ষতটি split thickness skin graft -এর মাধ্যমে ঢেকে দেওয়া হয় যাতে সেখানে পরবর্তীতে আর fibrosis হতে না পারে।
■ শেষ ধাপে, আক্রান্ত স্থানে আবারো splinting করে নিয়মিত ফিজিওথেরাপির পরামর্শ দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, splint হলো এমন একটি মেডিকেল ইকুইপমেন্ট যার মাধ্যমে আক্রান্ত স্থানকে নড়াচড়া করা কিংবা পুনরায় আঘাত পাওয়া থেকে রক্ষা করা হয়।
● Superficial burn:
■ এক্ষেত্রে মূলত খেয়াল রাখা হয় যাতে পোড়াস্থানে সংক্রমণ না ঘটে। এজন্য যথাযথ prophylactic antibiotic ব্যবহার করা হয়।
আক্রান্ত রোগী যেসব জটিলতায় ভুগতে পারেঃ
- Cosmetic deformity
- Limited movement of affected joints
- Ectropion of eyelid causing keratitis and corneal ulcer
- Contracture in the neck causing restricted neck movement
- There may be difficulty in sucking and chewing food
- Hypertrophic scar and keloid formation
- Marjolin’s ulcer etc.
চিকিৎসাঃ
Post burn contracture যদি একবার হয়েই যায় তবে তার চিকিৎসা একটাই- সার্জারী। তবে এর পূর্বে রোগী এনেস্থিসিয়া এবং সার্জারীর জন্য উপযুক্ত কিনা তা নির্ণয়ের জন্য কিছু
সাধারণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। যেমন-
– Complete hemogram: Hb%, TLC, DLC and ESR
– Blood for serum urea, serum creatinine and random blood sugar
– Blood for BT & CT
– Blood for serum albumin and serum globulin
– Urine RME
– X-ray of affected joint to see any deformity
– Chest X–ray PA view etc.
যদি এইগুলোয় রোগী পাশ করে যায়, তবে এবার অপারেশনের পালা। তাতেও আছে ভিন্নতা। যেমন-
● for neck: এক্ষেত্রে প্রথমেই scar tissue-র maximum tension point এ কাটা হয়, যাকে বলে release incision এবং তা প্রসারিত করা হয় দু’পাশের sternocleidomastoid muscle পর্যন্ত। এরপর এই incision কে আরো deep করা হয় strap muscles অব্দি। শেষে এই উন্মুক্ত অংশের পুরোটা ঢেকে দেওয়া হয় split thickness skin graft দিয়ে।
● for axilla and limbs: এক্ষেত্রে contructure এর চিকিৎসা করা হয় এক বা একাধিক ‘z plasty’ এর মাধ্যমে।
● for joints: প্রথমে জয়েন্টে চেতনানাশক ব্যবহার করে scar release করা হয়। তারপর split thickness skin graft কিংবা skin flap ব্যবহার করে resurfacing করা হয়। আর সম্পূর্ণ নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত splint দিয়ে রাখা হয়।
Post burn contracture এর অপারেশন করা হয় scar tissue maturation এর পর। এর জন্য সাধারণত ৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত সময় লাগে। কেতাবী ভাষ্যমতে, Mature scar has a whitish hue, is soft and supple in texture.
উদ্ভূত সমস্যাবলীঃ
এই রোগে আক্রান্ত রোগীর ম্যানেজমেন্টে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমনঃ
– যথাযথভাবে চেতনানাশক প্রয়োগ করতে না পারা
– অপারেশনের সময় প্রচুর রক্তপাত
– ত্বকের নিচে থাকা গুরুত্বপূর্ণ স্নায়ু ও রক্তনালি শনাক্ত করতে না পারা
– কখনো কখনো একাধিক অপারেশনের প্রয়োজনীয়তা
– এছাড়া দীর্ঘদিন হাসপাতালে থাকা এবং উচ্চখরচ ও কখনো কখনো এই চিকিৎসার অন্তরায় হয়ে দেখা দেয়।
তো এই ছিলো post burn contracture নিয়ে কিছু আলোচনা।এবারে কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তির কথা বলবো যারা তাদের নিত্য জীবনে শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন এই ক্ষতচিহ্ন। কার্লোস তেভেজ এর কথা তো আগেই বলেছি।
– এই contracture ছিলো প্রয়াত বিশ্ববিখ্যাত পপ তারকা ‘মাইকেল জ্যাকসন’ এর শরীরেও। ১৯৮৪ সালে ‘পেপসি’-র একটি বিজ্ঞাপন নির্মাণকালে বিস্ফোরণে তার মাথার চামড়া পুড়ে যায় এবং আর কোনোদিনই একারনে তার মাথায় ঠিকভাবে চুল গজায় নি। এর ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রাপ্ত দেড় মিলিয়ন ডলারের পুরোটাই তিনি ক্যালিফোর্নিয়া মেডিকেল সেন্টারে দান করে দেন।
– অন্যতম জনপ্রিয় টিভি শো CSI:CRIME SCENE INVESTIGATION এর ড. আলবার্ট রবিন্স এর চরিত্র অভিনয় করা বিখ্যাত আমেরিকান অভিনেতা রবার্ট ডেভিড হল ১৮ বছর বয়সে এক দূর্ঘটনায় পড়েন। পুড়ে যায় তার শরীরের ৬৫ শতাংশ। শরীরে তৈরি হয় contracture। পরবর্তীতে তার দু’টো পা-ই কেটে ফেলতে হয়। বর্তমানে তিনি একজোড়া প্রোস্থেটিক পা ব্যবহার করেন।
এছাড়াও পুড়ে যাওয়ার এই ক্ষতচিহ্ন আছে জে আর মার্টিনেজ, কেটি পাইপার, এমান্ডা রেডম্যান, পারমিন্ডা ন্যাগ্রা প্রমুখ বিখ্যাতদের শরীরেও।
আজকের লিখাটা মূলত তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য যারা সার্জারী ওয়ার্ডের পুরোটা সময় শুধু জেনারেল সার্জারীর কেসগুলোই পড়ে আর পরীক্ষা দিতে গিয়ে দেখে বেড এ বসে আছে বার্ণ এর পেশেন্ট।
আর শেষ করতে চাই এই বলে যে, সব মানুষ পারে না এই contracture এর যথাযথ চিকিৎসা গ্রহন করতে। ফলে অনেকেই এই রোগ বয়ে বেড়ায়-জীবন হয় দুর্বিষহ, বেছে নেয় ভিক্ষাবৃত্তি। চলুন না, তাদের প্রতি একটু সহানুভূতির হাত বাড়াই। একটু সুখের ছোঁয়া পৌঁছে দেই-তাদের হৃদয় মন্দিরেও।
প্ল্যাটফর্ম একাডেমিক ডিভিশন/মো.হাসিবুল বাশার
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ
২০১৫-১৬
REFERENCES:
1. Bailey and Love’s SHORT PRACTICE of Surgery ;27th edition.
2. Bedside Clinics in Surgery by Makhan Lal Saha ;3rd edition.
3. SRB’s Manual of Surgery by Sriram Bhat M ;5th edition.