SARS CoV-2 ভ্যাকসিনের ইতিবৃত্ত (পর্ব-৬)
আচ্ছা বলুন তো, ভ্যাকসিন তৈরী করার প্রথম ধাপটা কী?
ট্রায়াল?
উহু!
লাইসেন্স?
তাও নাহ!
ভ্যাকসিন তৈরীর প্রথম ধাপটি হচ্ছে একটি Candidate vaccine তৈরী করা এবং সেটাকে কোনো Animal model এ প্রয়োগ করে যাচাই করা যে সেটি আসলেই কার্যকর কিনা। কার্যকর হলে সেটি পরবর্তী ধাপে চলে যাবে। আর কাজ না করলে বেকার খাটনী; আবার প্রথম থেকেই সব শুরু কর! আবার নতুন কোনো Vaccine Candidate তৈরী কর,পরীক্ষা কর। পুরো প্রক্রিয়াটি আবার করতে গিয়ে হয়ত আরো কয়েকটি মাস কেটে গেল। সাধারণ সময়ে এটি হয়ত হরহামেশাই হয়। কিন্তু কোভিড-১৯ এর এই “New Normal” এর সময়ে এই কয়েকটা মাস ই হতে পারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ; বাঁচতে পারে অনেকগুলো প্রাণ!
এখন পর্যন্ত এমন কোনো কোম্পানির নাম শুনেছেন কি যারা একাধারে ৪ টি Vaccine Candidate দিয়ে তাদের গবেষণা শুরু করেছে এবং ৪টিকেই তাদের হিউম্যান ট্রায়েল এ ব্যবহার করছে?যাতে ১টা ব্যর্থ হলেও বাকিগুলো দিয়ে গবেষণা সামনে এগিয়ে নেয়া যায়?
আজকের লেখাটি এমনি একটি ভ্যাকসিন নিয়ে যার নাম BNT162mRNA. যুক্তরাষ্ট্রের Pfizer এবং জার্মানীর BioNTech এর যৌথ ভ্যাকসিন এটি।
Mechanism of action:
যুক্তরাষ্ট্রের Moderna অথবা যুক্তরাজ্যের Imperial college ভ্যাকসিনের মতই কার্যপ্রণালী এই BNT162 mRNA এর। করোনা ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং থেকে Spike protein এর Modified mRNA তৈরী করা হয়। এরপর এটিকে একটি Lipid nanoparticle এ যুক্ত করে ভ্যাকসিনটি প্রস্তুত করা। দেহের Cell membrane lipid bilayer হওয়ায় Nanoparticle সহজেই কোষের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে।
কোষের ভেতরে বিভিন্ন এনজাইমের কারণে nanoparticle ভেঙে গিয়ে mRNA টি কোষের সাইটোপ্লাজমে উন্মুক্ত হয়। পরবর্তীতে এই mRNA থেকে রাইবোজোম স্পাইক প্রোটিন তৈরী করে যা আমাদের দেহে Foreign particle হিসেবে গন্য হয়। APC (antigen presenting cell) MHC-II এর সাহায্যে স্পাইক প্রোটিনকে Naive T cell এর কাছে উপস্থাপন করে। এটি পরবর্তীতে Helper T cell এ পরিণত হয় (IL-4 এর উপস্থিতিতে) এবং Helper T cell থেকে IL-4 এবং IL-5 রিলিজ হয়। এর ফলে B cell, Plasma cell এ রূপান্তরিত হয়। এই Plasma cell থেকে পরবর্তীতে তৈরী হয় এন্টিবডি যা পরবর্তীতে SARS CoV-2 ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কাজ করে। সংক্ষেপে,
Modified mRNA তৈরী
⬇
mRNA টিকে Lipid particle এর সাথে যুক্তকরণ
⬇
ভ্যাকসিন প্রয়োগ
⬇
কোষের সাইটোপ্লাজমে Lipid nanoparticles degradation এবং mRNA translation
⬇
স্পাইক প্রোটিন তৈরী
⬇
স্পাইক প্রোটিনকে MHC-II এর মাধ্যমে Naive T cell এর কাছে উপস্থাপন
⬇
Helper T cell(IL-4 এর উপস্থিতিতে)
⬇
B cell এর plasma cell এ রূপান্তর (IL-4,IL-5 এর উপস্থিতিতে)
⬇
এন্টিবডি তৈরী
⬇
ইমিউনিটি
Trial:
ভ্যাকসিনটির ট্রায়াল সম্পর্কে জানার আগে একটি ভ্যাকসিন তৈরীর ধাপগুলো জেনে নেয়াটা জরুরী। একটি Vaccine candidate তৈরী করার পর এটি সর্বপ্রথম Pre-clinical phase পার করে। ভ্যাকসিনটি আশানুরূপ সাফল্য পেলে এটি Human trial এর উপযোগী হয়।Human trial এর Phase-I এ ভ্যাকসিনটির Immunogenicity, Phase-II এ Dose & delivery এবং Phase-III এ ভ্যাকসিনটির Safety & Side effect পরীক্ষা করা হয়। ৩ধাপে ভ্যাকসিনটি সফল হলে তবেই ভ্যাকসিনটিকে লাইসেন্স দেয়া হয়। এরপর উৎপাদন শুরু করে ভ্যাকসিনগুলো বাজারজাত করা হয়। কিন্তু এই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে ১০ বছরের ও বেশি সময় লেগে যেতে পারে যা SARS CoV-2 এর ভ্যাকসিন তৈরীর ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়।
এর সমাধানও খুঁজে বের করেছে Pfizer এবং BioNTech. ভ্যাকসিন ট্রায়াল এর Phase গুলো একসাথে যুক্ত করে স্টাডি ডিজাইন করা হয়েছে এবং ভ্যাকসিনটি ট্রায়ালে থাকা অবস্থাতেও এর উৎপাদন শুরু করার প্রক্রিয়া চলছে। এতে পুরো প্রক্রিয়াটি দ্রুততার সাথে করা যাচ্ছে।
Phase-I/II জার্মানি এবং যুক্তরাষ্ট্রে সম্পন্ন করা হয়। উভয়ক্ষেত্রেই ৪ টি Vaccine Candidate প্রয়োগ করা হয় যার মধ্যে শুধুমাত্র BNT162b1 এবং BNT162b2 এর ফলাফল ই প্রকাশ করা হয়েছে।
• জার্মানিঃ
এটি ছিলো Open-labelled, Non-randomized, Non-placebo-controlled, dose escalation trial. BNT162b1 এর ট্রায়ালে মোট ৬০ জন স্বেচ্ছাসেবক অংশগ্রহণ করেন। ভ্যাকসিনের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে (১, ১০, ৩০, ৫০ এবং ৬০ মাইক্রোগ্রাম) স্বেচ্ছাসেবকদেরকে ৫ টি গ্রুপে ভাগ করা হয়। ভ্যাকসিনটি ২১ দিনের ব্যবধানে দুই ডোজে প্রয়োগ করা হয়। দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগের ৪৩ দিন পর স্বেচ্ছাসেবকদের দেহে Neutralizing antibody এর উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়। এর পরিমাণকে Convalescent Plasma therapy তে তৈরী হওয়া এন্টিবডির পরিমাণের সাথে তুলনা করা হয়। ১ মাইক্রোগ্রাম ডোজ গ্রুপে Convalescent plasma therapy এর ০.৭ গুণ এবং ৫০ মাইক্রোগ্রাম গ্রুপে ৩.২ গুণ পর্যন্ত Neutralizing antibody এর অস্তিত্ব লক্ষ্য করা গিয়েছে যা সত্যিই আশাব্যঞ্জক। এছাড়া ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর ফ্লু এবং ব্যথা (Vaccination Site এ) ছাড়া কোনো Severe local & Systemic reaction দেখা যায়নি।
• যুক্তরাষ্ট্রঃ
এটি ছিলো একটি Placebo controlled, Observer-blinded clinical trial.
👉BNT162b1 Vaccine Candidate এ মোট ৪৫ জন স্বেচ্ছাসেবক অংশগ্রহণ করেন। ১২ জন করে মোট ৩৬ জনকে যথাক্রমে ১০, ৩০ এবং ১০০ মাইক্রোগ্রাম মাত্রায় ২ ডোজে ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করা হয়। বাকি ৯ জনকে Placebo দেয়া হয়। ১০০ মাইক্রোগ্রাম গ্রুপে ২ ডোজ দেবার কথা থাকলেও প্রথম ডোজের পরেই Injection Site এ Severe pain দেখা দেয়। এজন্য ১০০ মাইক্রোগ্রাম গ্রুপে দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগ করা হয়নি। দ্বিতীয় ডোজের ৭ দিন পর অর্থাৎ ২৮ তম দিনে স্বেচ্ছাসেবকদের দেহে Neutralizing antibody এর উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়। ১০ মাইক্রোগ্রাম গ্রুপে যা ছিলো Convalescent Plasma therapy এর ১.৮ গুণ এবং ৩০ মাইক্রোগ্রাম গ্রুপে ২.৮ গুণ। ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগের পর ১০ মাইক্রোগ্রাম গ্রুপের ৮.৩% এবং ৩০ মাইক্রোগ্রাম গ্রুপের ৭৫% জ্বরে আক্রান্ত হন।
এছাড়া অন্যান্য Local ও Systemic recation ছিলো Mild অথবা Moderate. কোনো গ্রেড ৩ Severe reaction দেখা যায়নি।
👉BNT62b2 Vaccine candidate টি ৩০ মাইক্রোগ্রাম মাত্রায় দুই ডোজে প্রয়োগ করা হয়। দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগের ৭ দিন পরে ১৮-৫৫ বছর বয়স্ক স্বেচ্ছাসেবকদের দেহে Convalescent plasma therapy এর তুলনায় ৩.৮ গুণ Neutralizing antibody শনাক্ত করা হয়। ৬৫-৮৫ বছর বয়স্ক স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে Neutralizing antibody ছিলো প্রায় ১.৬ গুণ। এছাড়া মাত্র ২০% স্বেচ্ছাসেবকদের দেহে Mild or Moderate, Local and Severe reaction দেখা দেয়।
Phase-II/III এ বিশ্বের ১২০ টি জায়গায় মোট ৩০০০০ জনের ওপর BNT162b2 Vaccine Candidate টি প্রয়োগ করা হবে। Phase-I/II এ ৪ টি Vaccine Candidate এর মধ্যে BNT162b2 ই ছিলো সবচেয়ে সফল। এজন্য Phase-II/III তে BNT162b2 কে নিবার্চন করা হয়। ৩০ মাইক্রোগ্রাম মাত্রায় দুই ডোজে ভ্যাকসিনটি ইতোমধ্যেই ১১০০০ জনের ও বেশি স্বেচ্ছাসেবকদের দেহে প্রয়োগ করা হয়েছে। অক্টোবর মাসের মধ্যে তাদের এই ট্রায়াল শেষ হবে।
Lipid nanoparticles & mRNA অপেক্ষাকৃত নতুন প্রযুক্তি হলেও Pfizer এই ভ্যাকসিন ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন নয়। Pfizer ই সর্বপ্রথম 7 Valent Pneumococcal Vaccine এর লাইসেন্স নেয়। এছাড়াও তাদের আরো ৬টি ভ্যাকসিন ১৬০ টি দেশে ব্যবহৃত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার ইতোমধ্যেই তাদের সাথে ১.৯৫ বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি করেছে। Pfizer আশা করছে ২০২০ সালের শেষ নাগাদ তারা ১০০ মিলিয়ন ভ্যাকসিন ডোজ বাজারে আনতে পারবে। ২০২১ এর শেষ নাগাদ যার সংখ্যা হবে প্রায় ১.৩ বিলিয়ন ডোজ। এছাড়া এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে BNT162 এর Neutralizing antibody এর পরিমাণ ই সবচেয়ে বেশি। তাই তুলনামূলক পিছিয়ে থেকেও এখনো আশার আলো দেখাচ্ছে BNT162b2!
Reference:
• https://www.pfizer.com/news/hot-topics/how_pfizer_and_biontech_are_moving_with_safety_and_speed_to_develop_a_potential_covid_19_vaccine
• https://pfe-pfizercom-d8-prod.s3.amazonaws.com/2020-05/Pfizer_fact_sheets_mRNA.pdf
• https://pfe-pfizercom-d8-prod.s3.amazonaws.com/PFIZER-MRNA_Vaccine-COVID_Infographic_final_square.png
• https://www.pfizer.com/news/press-release/press-release-detail/pfizer_and_biontech_dose_first_participants_in_the_u_s_as_part_of_global_covid_19_mrna_vaccine_development_program
• https://www.nature.com/articles/s41586-020-2639-4
• https://www.pfizer.com/news/press-release/press-release-detail/pfizer-and-biontech-announce-early-positive-data-ongoing-0
• https://www.pfizer.com/news/press-release/press-release-detail/pfizer-and-biontech-granted-fda-fast-track-designation-two
• https://www.pfizer.com/news/press-release/press-release-detail/pfizer-and-biontech-announce-early-positive-update-german
মোঃ আদিব সিদ্দিকী
হলিফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ
সেশনঃ ২০১৭-২০১৮
Pingback: SARS CoV-2 Vaccine এর ইতিবৃত্ত (পর্ব-৭) – Platform | CME