লকডাউনের কারণে অনেকদিন অর্ক মামা ফাহিমদের বাসায় আসেন নি। লকডাউন চলাকালীন ফেসবুকে কিটো ভাই নামক এক ব্যক্তি গানে গানে লকডাউন মেনে চলার প্রচারণা চালিয়ে বেশ খ্যাতি অর্জন করেন। তখনই ফাহিমের এই কিটো ভাই সম্পর্কে কৌতুহল জাগল।
কে এই কিটো ভাই?
খোঁজ নিয়ে সে জানতে পারল, কিটো ভাইয়ের পরিবারের সবাই ডা. জাহাঙ্গীর কবির স্যারের keto diet ফলো করা শুরু করে। ফলে সুস্বাদু খাবার থেকে বঞ্চিত হয়ে মনের দুঃখে কিটো ভাই ফেসবুকে একটা পোস্ট দেন৷ সেখানে একজন কমেন্ট করে বসেন, “কিটো ভাই”। তখন থেকেই তিনি কিটো ভাই নামে পরিচিত৷
এটা জানার পর ফাহিমের মনে কৌতুহল জাগল কিটো ডায়েটটা আবার কী। তখন সে ইউটিউবে ডা. জাহাঙ্গীর কবির স্যারের ভিডিওগুলো দেখল। সেখানে সে জানতে পারল keto diet এ carbohydrate জাতীয় খাবার একদম কম খেতে বলা হয় (৫%)।
Protein আর fat বেশি খেতে বলা হয়৷ এতে নাকি শরীরের ওজন কমবে। ফাহিমের খুব অবাক লাগল। এ আবার কেমন কথা? এতদিন সে জেনে এসেছে ওজন কমাতে হলে fatty food পরিহার করতে হবে৷ আর জাহাঙ্গীর স্যার বলছেন fatty food খেলে ওজন কমবে? সে সাথে সাথে অর্ক মামাকে কল দিল৷
ফাহিম: হ্যালো, অর্ক মামা।
অর্ক: কীরে ফাহিম। কী খবর তোর? নিশ্চয়ই কোন পড়া বুঝতে সমস্যা হচ্ছে৷ তা না হলে তো অর্ক মামার কথা মনেই পড়ে না তোর।
ফাহিম: এভাবে বলতে পারলে মামা?
অর্ক: আরে ফান করছিলাম। এবার বল কোন টপিক বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে তোর?
ফাহিম: পড়ার কোন টপিক না মামা। ডাঃ জাহাঙ্গীর কবির স্যারের keto diet ব্যাপারটা খটকা লাগছে। Fat খেলে ওজন কমে কীভাবে? অদ্ভুত না ব্যাপারটা?
অর্ক: মোটেই না৷ আমি কাল তোদের বাসায় এসে ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিচ্ছি।
পরদিন সকালে অর্ক মামা ফাহিমদের বাসায় এসে ফাহিমের রুমে বসলেন।
অর্ক: ফাহিম, তোর Biochemistry র metabolism card শেষ না?
ফাহিম: জ্বি মামা।
অর্ক: তাহলে তো keto diet এর ব্যাপারটা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা না। যা হোক, তুই আমাকে বল, আমরা বাঙ্গালিরা যে ৩ বেলা ভাত খাই, এগুলোর পুরোটাই কি ATP produce করে?
ফাহিম: না মামা। শুরুতে শরীরের কোষগুলো glycolysis প্রক্রিয়ায় glucose ভেঙে ATP তৈরি করে। আবার, Liver কিছু Glucose কে glycogen এ পরিণত করে সঞ্চিত রাখে (Glycogenesis)। যা পরবর্তীতে Fasting state এ ATP তৈরি করে (Glycogenolysis)।
এরপরেও ৩০-৪০% carbohydrate থেকে যায়৷ এগুলো Lipogenesis এর মাধ্যমে fat এ convert হয়ে Adipose tissue তে জমা থাকে।
অর্ক: এটা কীভাবে হয়? মানে glucose কীভাবে fat এ convert হয়?
ফাহিম: খুব সহজ মামা। Glucose প্রথমে Glycolysis প্রক্রিয়ায় Pyruvate তৈরি করে। এরপর Pyruvate Mitochondria য় গিয়ে Pyruvate dehydrogenase enzyme এর মাধ্যমে Acetyl CoA তে পরিণত হয়।
অর্ক: তারপর?
ফাহিম: তারপর সেই Acetyl-CoA, Fatty acyl-CoA তৈরি করে।
অন্যদিকে Glycolysis প্রক্রিয়ার একটা ইন্টারমিডিয়েট হল Dihydroxyacetone phosphate (DHAP)। এটা Glycerol-3-phosphate dehydrogenase enzyme এর মাধ্যমে Glycerol-3-phosphate এ পরিণত হয়৷ এই Fatty acyl CoA এবং Glycerol-3-phosphate liver এবং Adipose tissue তে গিয়ে Triacylglycerol (TAG) তে পরিণত হয়। আমাদের শরীরের Stored fat এর ৮৫-৯০% হল এই TAG।
অর্ক: তাহলে কী বুঝলি? আমরা যে ৩ বেলা এত Carbohydrate খাচ্ছি, এগুলোই TAG তে convert হয়ে আমাদের মোটা করে দিচ্ছে৷
ফাহিম: তা তো বুঝলাম মামা। কিন্তু এই মোটা শরীরে যদি Fatty ফুড খায়, তাহলে শরীরের ওজন আরো বেড়ে যাওয়ার কথা না?
অর্ক: না। তুই নিজেই বুঝবি ব্যাপারটা৷ তার আগে তুই আমাকে বল, আমরা খাবার খাওয়ার ২-৪ ঘণ্টা পর শরীর কীভাবে তার শক্তির চাহিদা মেটায়?
ফাহিম: আগে যে বলেছিলাম liver এ Glycogen সঞ্চিত থাকে, সেগুলো ভেঙে glucose এ পরিণত হয়ে blood glucose maintain করে। এই প্রক্রিয়ার নাম Glycogenolysis। এটা ১২-১৮ ঘণ্টা Blood glucose level ঠিক রাখে। কিন্তু এরপর glycogen store শেষ হয়ে যায়।
অর্ক: Glycogen তো শেষ হয়ে গেল। এরপরও যদি আমি খাবার না খাই, তখন শরীর কী করবে?
ফাহিম: তখনও blood glucose ঠিক রাখার একটা প্রক্রিয়া শরীরের আছে। এটার নাম Gluconeogenesis। এই প্রক্রিয়ায় শরীরের protein ভেঙে Glucogenic amino acid এ পরিণত হয়। এই Amino acid গুলো Liver এ গিয়ে Gluconeogenesis প্রক্রিয়ায় Glucose এ পরিণত হয়৷
অর্ক: কিন্তু এভাবে protein ভাঙতে থাকলে তো শরীরের প্রয়োজনীয় সব protein যেমন enzyme, hormone ইত্যাদির অভাবে মারা যেতে হবে।
ফাহিম: জ্বি মামা। এজন্য শরীরের মোট protein এর মাত্র ৩০% ভাঙার পরেই Gluconeogenesis প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।
অর্ক: এরপর শরীর কীভাবে তার শক্তির চাহিদা মেটাবে?
ফাহিম: শরীরের কাছে একটা Plan-C আছে মামা।
অর্ক: কী সেই Plan-C?
ফাহিম: তখন Adipose tissue তে জমে থাকা TAG, Lipolysis প্রক্রিয়ায় Fatty acid আর Glycerol এ পরিণত হয়। এই Fatty acid শরীরের বিভিন্ন অংশে Beta oxidation প্রক্রিয়ায় Acetyl CoA তৈরি করে যা TCA cycle এবং Oxidative phosphorylation প্রক্রিয়ায় ATP তৈরি করে।
অর্ক: খুব ভাল। কিন্তু অত বড় বড় fatty acid গুলো কি Blood-brain barrier এর ক্ষুদ্র ছিদ্র দিয়ে ঢুকতে পারবে?
ফাহিম: না মামা।
অর্ক: তাহলে Brain বাঁচবে কীভাবে?
ফাহিম: তার জন্যও একটা প্রক্রিয়া আছে মামা। Ketogenesis। Liver এ glucose কমে গেলে Glycolysis কম হয়। ফলে Pyruvate কম তৈরি হয়৷ ফলে Pyruvate থেকে Oxaloacetic acid (OAA) কম তৈরি হয়৷ OAA হল Acetyl CoA এর TCA cycle/Krebs cycle/Citric acid cycle এ প্রবেশ করার দরজা। কিন্তু liver এ Fatty acid এসে অনেক Acetyl CoA তৈরি হচ্ছে। ওদিকে TCA cycle এ ঢোকার প্রবেশপথ কমে গেছে। তখন সেই অতিরিক্ত Acetyl CoA গুলো Ketogenesis এর মাধ্যমে ketone body তৈরি করে। এই Ketone body গুলো brain এ গিয়ে Acetyl CoA তে convert হয়ে ATP তৈরি করে।
অর্ক: খুব ভাল। শরীরে কী কী ketone body তৈরি হয়?
ফাহিম: Acetoacetate, 3-hydroxybutyrate আর Acetone।
অর্ক: ৩টাই কি Acetyl CoA তৈরি করে?
ফাহিম: না। শুধু Acetoacetate আর 3-hydroxybutyrate, Acetyl CoA তৈরি করে।Acetone এর কোন Metabolic role নেই। এটা একটা Metabolic by product।
অর্ক: Acetone এর কোন Metabolic role না থাকলেও ডাক্তারদের কাছে এর একটা গুরুত্ব আছে। কোন রোগীর শ্বাসে এই acetone এর গন্ধ পেলে আমরা Diabetic ketoacidosis (DKA) Diagnosis করতে পারি।
ফাহিম: DKA কী বল না মামা।
অর্ক: Type-II Diabetes রোগীদের শরীরে Insulin এর অভাবে glucose কোষে ঠিকমত ঢুকতে পারে না। ফলে Blood এ glucose level বাড়তে থাকে। আবার liver এ Glycogenolysis এর মাধ্যমে আরো glucose blood এ আসে। ফলে blood glucose level অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু কোষ Glucose পাচ্ছে না। তখন Adipose tissue তে Triacylglycerol (TAG) ভেঙে Fatty acid আর Glycerol তৈরি হবে। সেই Fatty acid ব্লাডে চলে আসবে যাকে আমরা Fat mobilization বলি। এই fatty acid liver এ গিয়ে ketone bodies তৈরি করে।
ফাহিম: দারুণ তো।
অর্ক: মোটেও দারুণ না৷ এটা রোগীর জন্য লাইফ থ্রেটেনিং একটা কন্ডিশন।
ফাহিমঃ সরি মামা।
অর্ক: ইট’স ওকে৷ আমরা যে টপিকে কথা বলছিলাম সেটায় ফিরে আসি৷ Keto diet এ carbohydrate কম খেতে বলা হয় আর protein এবং Fat বেশি খেতে বলা হয়। কারণ, শরীরে carbohydrate দ্রুত কমে গেলে Adipose tissue তে TAG ভেঙে Fatty acid আর Glycerol তৈরি হবে। সেই Fatty acid blood এ চলে আসবে। তাহলে কী হবে? শরীরের fat কমতে কমতে ওজন কমে যাবে। এর পরের ঘটনা তো তুইই বলে দিলি।এই Fatty acid গিয়ে Ketone body তৈরি করবে যা Brain খাবার হিসেবে গ্রহণ করবে। আবার এই Fatty acid কে শরীরের অন্যান্য কোষগুলো খাবার হিসেবে গ্রহণ করবে৷ বুঝলি?
ফাহিম: জ্বি মামা। এবার একদম ক্লিয়ার।
অর্ক: এখন তাহলে তোর ল্যাপটপে কিটো ভাইয়ের সেই বিখ্যাত গানটা প্লে কর।
এরপর ফাহিমের ল্যাপটপে সেই গানটা চলতে লাগল: ” এ গেদু, সমেস্যা কী?”
হাসিবুর রহমান অয়ন,
শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ
২০০৯-১০
গৌরী চন্দ / প্ল্যাটফর্ম একাডেমিক ডিভিশন