‘অপুষ্টির শিকার’- বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত শব্দগুলোর মধ্যে একটি। সাধারণ মানুষের ধারণা এই যে, যেকোন মানুষ ঠিকঠাকভাবে খেতে না পেলেই হতে পারে অপুষ্টির শিকার। কিন্তু আমরা যারা চিকিৎসাশাস্ত্রে অধ্যয়ন করি, তাদের নিশ্চয়ই অবিদিত নয় যে এর কারণ কত বিস্তৃত। Post-operative period-এ একজন রোগী যতগুলো জটিলতায় আক্রান্ত হতে পারেন তার মধ্যে অন্যতম হলো malnutrition। এই বিষয় নিয়েই মূলত আমাদের এই আলোচনা। বাতুলতা পরিহারের প্রেক্ষিতে কয়েকটি পর্বে লিখার প্রয়াস পেয়েছি। আজ থাকছে প্রথম পর্ব।
পরিসংখ্যান বলছে, পরিপাকতন্ত্রের যেকোন অপারেশন হওয়া রোগীদের শতকরা ৩০ ভাগ এবং জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন হাসপাতালে থাকা অপারেশনের রোগীদের শতকরা ৬০ ভাগই শিকার হয় অপুষ্টির। কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা যথাযথ গুরুত্ব পায় না। এর ফলে তারা ভুগতে থাকে নানা জটিলতায় এবং এই রোগীদের মৃত্যুঝুঁকিও তুলনামূলক বেশি। তাহলে এককথায় এই রোগীদের প্রয়োজন যথাযথ ‘nutritional support’. কেতাবী ভাষায় যদি বলি,
“The aim of nutritional support is to identify those patients at risk of malnutrition and to ensure that their nutritional requirements are met by the most appropriate route and in a way that minimises complications.”
Metabolic response to starvation :
একজন মানুষ যদি মোটামুটি ১২ ঘণ্টার মত না খেয়ে থাকেন, তবে ততক্ষণে তার সর্বশেষ গ্রহণ করা খাবার পুরোপুরিভাবে শোষিত হয়ে যায়। Plasma তে কমে যায় insulin এর পরিমাণ, বাড়ে glucagon। এই অবস্থা উদ্দীপনা যোগায় যাতে liver এ সঞ্চিত থাকা glycogen (প্রায় ২০০ গ্রাম) রুপান্তরিত হয় glucose এ। অর্থাৎ fasting condition এ liver হয়ে যায় glucose তৈরির কারখানা। প্রক্রিয়াটি জরুরী ভিত্তিতে সম্পন্ন হতে হয় কারণ আমাদের শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ যেমন brain tissue, red and white blood cells, renal medulla ইত্যাদি তাদের যেকোন জৈবরাসায়নিক প্রয়োজনে প্রাথমিকভাবে শুধু glucose ই ব্যবহার করতে পারে।
এছাড়াও শরীরে আছে glycogen এর আরেকটি বড় উৎস- মাংসপেশী (প্রায় ৫০০ গ্রাম)। কিন্তু এটি liver এর মত সরাসরি glucose এ পরিণত হতে পারে না। Glycogenolysis প্রক্রিয়ায় এই glycogen প্রথমে ভেঙ্গে গিয়ে তৈরি করে lactate এবং চলে যায় liver এ। সেখানে আরেকটি প্রক্রিয়ায় lactate থেকে তৈরি হয় glucose যাকে বলে cori cycle।
এই তো গেলো ১২ ঘণ্টার হিসেব। কিন্তু যদি একজন মানুষ পুরো একদিন (২৪ ঘণ্টা) কিংবা তারও বেশি অভুক্ত থাকে তখন কী হবে? চলুন দেখা যাক-
অভুক্ত অবস্থায় ২৪ ঘণ্টা বা তার বেশি অতিবাহিত হওয়া মানে ইতিমধ্যেই শরীরের সঞ্চিত সকল glycogen তথা glucose এর ভান্ডার ফুরিয়ে গেছে। এই অবস্থায় liver এ শুরু হয় নতুন প্রক্রিয়া, gluconeogenesis যার নাম। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে glucose তৈরি হয় শর্করা ব্যতীত অন্য উৎস গুলো থেকে যথা, আমিষ ও স্নেহ। এককথায় যাদের বলা হয় non-carbohydrate precursors। আর এই পদ্ধতির নাম ‘De novo glucose productions‘। ‘De novo’ একটি ল্যাটিন শব্দ যার ইংরেজি মানে দাঁড়ায় ‘from the beginning’। এই প্রক্রিয়ায় মূলত গ্লুকোজ এর উৎস হিসেবে কাজ করে amino acid, বিশেষত glutamine ও alanine যা আসে skeletal তথা ঐচ্ছিক পেশীর ভাঙ্গনের মাধ্যমে। দিনে যার পরিমাণ দাঁড়াতে পারে সর্বোচ্চ ৭৫ গ্রাম পর্যন্ত। তবে এই অবস্থায় যদি বাইরে থেকে glucose ( মিষ্টি জাতীয় খাবার, glucose ট্যাবলেট, জেল কিংবা স্যালাইন এর মাধ্যমে) ব্যক্তির শরীরে দেওয়া হয় তবে খুব দ্রুতই মাংসপেশীর এ ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যায়।
যদি ব্যক্তি অভুক্ত থাকে আরো বেশি সময় পর্যন্ত তবে এবারে glucose তৈরির উৎস হিসেবে কাজ করে শরীরে জমে থাকা ফ্যাট- প্রক্রিয়ার নাম fat oxidation। এই প্রক্রিয়ায় সঞ্চিত ফ্যাট ভেঙ্গে গিয়ে তৈরি করে দুটি জিনিস৷ প্রথমত glycerol যা কিনা পরিবর্তিত হয় glucose এ। দ্বিতীয়ত fatty acid যা শরীরের tissue গুলো কর্তৃক জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়- mitochondria তে অক্সিজেন এর উপস্থিতিতে glucose থেকে শক্তি উৎপাদন প্রক্রিয়ায়। শরীরে insulin এর পরিমাণ কমে যাওয়ায় liver এ fatty acid থেকে তৈরি হয় ketone body। ৪৮-৭২ ঘণ্টা অভুক্ত থাকার পর কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র glucose এর পরিবর্তে এই ketone body কেই প্রাথমিক জ্বালানী হিসেবে ব্যবহারের জন্য অভিযোজিত হয়ে যায়। এর খুব সুন্দর একটা নামও আছে, ‘fat fuel economy‘ যা কিনা মাংসপেশীর ভাঙ্গন কমিয়ে দিতে পারে দৈনিক ৫৫ গ্রাম পর্যন্ত।
★★এছাড়াও শক্তি তথা glucose এর ঘাটতিতে শরীর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযোজন পদ্ধতির আশ্রয় নেয়। তা হলো, নিষ্ক্রিয় thyroxin (T4) এর সক্রিয় tri-iodothyronin (T3) -এ রুপান্তর কমিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে ‘resting energy expenditure’ কমিয়ে দেওয়া।
তবে, শরীর যতই অভিযোজিত হোক না কেনো, বাধ্যতামূলকভাবে শরীরের প্রতিদিন ন্যূনতম ২০০ গ্রাম glucose প্রয়োজন এমনকি ব্যক্তি যদি দীর্ঘসময় পর্যন্ত অভুক্ত থাকে তথাপি। একে বলে ‘obligatory glucose requirement‘।
তো এই ছিলো অভুক্ত অবস্থায় কি কি metabolic response করে শরীর তার সারসংক্ষেপ। কিন্তু এরপরও যদি আপনার মনে হয় যে কঠিন লাগছে, তবে নিচের বুলেট পয়েন্টগুলো অন্তত একবার দেখে নিতে পারেন :-
Metabolic response to starvation In Short :
● Low plasma insulin
● High plasma glucagon
● Hepatic glycogenolysis
● Protein catabolism
● Hepatic gluconeogenesis
● Lipolysis: mobilisation of fat stores (increased fat oxidation) – overall decrease in protein and carbohydrate oxidation
● Adaptive ketogenesis
● Reduction in resting energy expenditure (from approximately 25–30 kcal/kg per day to 15–20 kcal/kg per day )
Biochemistry ভাইভায় metabolism এর বর্ণনা বলতে হবে এই ভয়ে অনেকসময় ই ‘সকালে কি নাস্তা করেছো’ স্যার/ম্যামদের এমন প্রশ্নের ভয়ে আমরা বলে বসি, ‘কিছু খাই নি’! পরীক্ষক তখন অগ্নিবাণ ছুঁড়েন যে তবে বলো, অভুক্ত অবস্থায় শরীরে কি কি পরিবর্তন হয়? তাই সার্জারীর বিষয় হলেও, প্রথম এবং দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরাও লিখাটি পড়তে পারেন।
পরের পর্বে থাকবে ‘Metabolic response to trauma’ নিয়ে আলোচনা।
Reference:
- Bailey HH, Love RJM. Surgery: short practice. 27th ed. NewYork: CRC Press, Taylor & Francis Group ; 2018.
প্ল্যাটফর্ম একাডেমিক /মো. হাসিবুল বাশার
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ
২০১৫-২০১৬