বেল বাজল। দরজা খুলতেই লালমোহন বাবু একগাল হাসি হেসে ঘরে ঢুকলেন।
‘কি হে তপেশ ভায়া, কেমন আছ?’
‘ভালো আছি, আপনি কেমন আছেন?’
‘আমার নতুন উপন্যাস বেড়িয়েছে, তিন দিনে সোল্ড আউট, হেহে।’
‘এই যে লালমোহনবাবু, সুখবর মনে হচ্ছে।’ ফেলুদা নিজের ঘর থেকে বের হয়েই জিজ্ঞাসা করল।
‘সুখবর তো বটেই মশাই, আপনি কীভাবে বুঝলেন?’
‘নতুন পাঞ্জাবী, সাথে দাড়ি কামিয়ে নতুন আফটারশেভ যার গন্ধে পুরো বাড়ি ম ম করছে, সাধারণত বাড়ি এলে একটি বেল দেন, আজ দুটো, এ থেকে দুইয়ে দুইয়ে চার মেলানো কি খুব অসম্ভব কিছু?’
‘তা যা বলেছেন মশাই, একটা সুখবর তো আছেই। নতুন বই বেড়িয়েছে, যথেষ্ট কাটতি হয়েছে, হাতে ও এখন তেমন কাজ নেই, তাই ভাবছিলুম এবারের বই এর টাকা দিয়ে আমরা থ্রি মাস্কেটিয়ার্স ঘুরতে যেতে পারলে মন্দ হত না।’
‘তা কোথায় যাবেন? আমার হাতেও কাজ নেই এখন, তোপসে ও ঘরে বসে আছে।’
‘বাংলাদেশ এর কথা অনেক শুনেছি মশাই, কখনো যাওয়া হয়নি, চট্টগ্রাম বলে একটা জায়গা আছে, যেখানে নাকি খুব সুন্দর আবহাওয়া, চলুন না মশাই, হাওয়া বদল করে আসি।’
‘বলছেন?’
‘আলবাত মশাই, পাহাড়ে ঘুরব, কর্ণফুলীর বুকে নোউকায় ঘুরব। পূর্ণিমার রাতে সমুদ্র সৈকতে শুয়ে সাগরের ঢেউ দেখব, উফফ, ভাবতেই কেমন একটা থ্রিল হচ্ছে।’
‘যথা আজ্ঞা, আমাদের ও পাসপোর্ট করাই আছে, ভিসা টা বসিয়ে নিলেই সোজা বাংলাদেশ।’
‘হিপ হিপ হুররে।’
পরের ক’টাদিন খুব ব্যস্ত সময় গেল। ভিসার কাজ শেষ কিরা, উপযুক্ত কাপড় গুছিয়ে আমরা প্লেন এ চড়লাম ঠিক ষষ্ঠীর দিন সকালে।
এয়ারপোর্টে উল্লেখ্য বিশেষ কিছু ঘটেনি, শুধুমাত্র প্লেন ওড়ার সময় লালমোহন বাবু দাঁত কপাটি লেগে গিয়েছিল। এতবার প্লেনে চড়েও উনার ভয় টা কাটানো গেল না।
প্লেন এসে থামল শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। সব কাজ সেরে লাগেজ নিয়ে বাইরে বেড়িয়ে এলাম। আগে থেকে হোটেল বুক করা ছিল, সিএনজি নিয়ে চলে এলাম হোটেল সেইন্টমার্টিন এ। বিশাল হোটেল, আলাদা পার্কিং লট, হোটেলের লবি দেখে মন ভরে গেল। আগে থেকে দুটো রুম বুক করা ছিল, চাবি নিয়ে রুমে চলে এলাম। যেহেতু রাত হয়ে গিয়েছিল, রুমে ঢুকতেই এক উজ্জ্বল সোনালী আভার দেখা পেলাম। আমি, লালমোহন বাবু দুজনেই অবাক, রুমে সোনালী আভা?
‘অবাক হচ্ছিস তো? এ হল চট্টগ্রাম বন্দর এর জাহাজের আলো, শুধু এই আলো দেখে পুরো রাত পার করে দেওয়া সম্ভব। রাতে আলো ও জ্বালাতে হয় না।’
‘ফ্যান্টাবুলাস, ট্রিমেন্ডাস, অবর্ণনীয়, অসাধারণ মশাই। না এলে জানতেই পারতুম না বন্দর এর আলোর ছটা এত সুন্দর হতে পারে।’
‘আপনারা ফ্রেশ হয়ে নিন, হোটেলে ডিনার করব না।’
‘কেন মশাই? হোটেলের ডিনার কি খারাপ?’
‘খারাপ হতে যাবে কেন? নতুন শহরে এসেছেন, একটু ঘুরে দেখবেন না? তবে ডিনার কিন্তু আমার অনারে।’
‘ওকে স্যার, আমি এখন ই ফ্রেশ হয়ে নিচ্ছি।’
লালমোহন বাবু নিজের ঘরে চলে গেলেন। ফেলুদা টয়লেট এ গেল। আমি জানালায় দাঁড়িয়ে বন্দর এর আলো দেখছিলাম, কি সুন্দর! মায়াবী আলোর রোশনাই ঘরটিকেও মায়াবী মনে হচ্ছে।
একসাথে বের হলাম। কোথায় যাব জিজ্ঞাসা করতে ফেলুদা উত্তর দিল, ‘হোটেল পেনিনসুলায় চল, সেখানে দেখলাম বিভিন্ন ধরণের খাবার আছে বুফে ডিনার এ, লাইভ কিচেন এ মেক্সিকান রান্না করে দেয়।’
ডিনার শেষে আমাদের তিনজনের ই মন খুব চাঙ্গা হয়ে উঠল। এত সুস্বাদু খাবার ছিল, মনে হল চট্টগ্রাম আসা স্বার্থক।
জিইসি মোড় এ গিয়ে ফেলুদা মিঠে পান নিল। এখানে তার চারমিনার নেই দেখে গোল্ডলিফ ধরাল। আমরা তিনজন হাটতে লাগলাম। ফেলুদা চিনিয়ে দিচ্ছিল, এই হল ওয়েলফুড, এটা গোলপাহাড় শ্মশান কালীবাড়ি। কালীবাড়ি শুনেই লালমোহন বাবুর হাত কপালে। প্রণাম ঠুকে চলেছেন। আরেকটু সামনে এগিয়ে গিয়ে আরেকটা মোড় এল, সেটা নাকি গোলপাহাড় মোড়। ফেলুদা বলে চলল, আমরা শুনতে থাকলাম। আমার দাদা টা কে চলন্ত ম্যাপ বলা যায়। ফেলুদা বলে, ‘যেকোন জায়গায় যাওয়ার আগে সেই জায়গা টা সম্পর্কে একটু ভালো করে স্টাডি করে না নিলে আমি ঠিক যুত পাই না সেখানে গিয়ে।’
কথা বলে নাকি খাবারের প্রভাবে নাকি প্লেন জার্নিতে জানিনা, কিন্তু বেশ ক্লান্তি লাগছিল। ফেলুদা কে বলে তিনজনেই ফিরে এলাম হোটেলে। যেহেতু দিন দশেক আছি চট্টগ্রামে, সব ঘুরেফিরে সময় নিয়ে দেখা যাবে।
হোটেল এ এসে লালমোহন বাবু আমাদের থেকে বিদায় নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল। আমরাও আমাদের ঘরে এসে আলো নিভিয়ে দিলাম। বন্দর এর সুন্দর আলো দেখতে দেখতে কখন ঘুম চলে এল, টের ই পেলাম না।
সকালে যখন ঘুম ভাঙ্গল, সূর্য উঠে গিয়েছে। ফেলুদা যোগব্যায়াম সেরে নিয়েছে, দেখলাম বারান্দায় দাঁড়িয়ে গোল্ডলিফ টানছে, আরেক হাতে চায়ের কাপ। ‘এতক্ষণে উঠলি? নে ফ্রেশ হয়ে নে, রুম সার্ভিস এ ফোন দিয়ে চা দিতে বল, আর লালমোহন বাবু কে ডেকে নিয়ে আয়, চা খেয়ে নিচে ব্রেকফাস্ট করতে যাব।’
ফ্রেশ হয়ে লালমোহন বাবু কে ডাকতে গেলাম। রুমের দরজায় ধাক্কা দিতে যাব, দেখি দরজা টা নিজ থেকেই খুলে গেল। ঘরে ঢুকে দেখি বিছানা বালিশ তছনছ করা, জিনিসপত্র ছড়ানো ছিটানো চারদিকে এবং ঘরে বা বাথরুমে কোথাও ই লালমোহন বাবু নেই।
দৌড়ে এসে ফেলুদা কে জানাতেই ফেলুদা ছুটে গেল, ঘরের অবস্থা দেখে তার চোয়াল শক্ত হল। মেঝেতে দেখা গেল এক ফোঁটা রক্তের দাগ, পাশে ফুলদানি টা উল্টে আছে এবং সেখানেও রক্তের দাগ।
টেবিলের উপরে একটা ভাঁজ করে রাখা কাগজ, ফেলুদা হাতে নিয়ে দেখল, তাতে লেখা,
‘কি মিস্টার মিত্তার, ভালো আছেন? চট্টগ্রাম এলেন, দেখা করলেন না, তাই আংকল কে নিয়ে এলুম আমার সাথে, আংকল কে খুঁজতে হলেও তো দেখা করবেন। আপনার হাতের ফোন টি অন রাখবেন, সময় সময় আপনার কাছে কল করা হবে, আমার কয়েকটি কাজ করে দিন, আংকল কে ছেড়ে দেব।
আপনার পুরনো বন্ধু
মগনলাল মেঘরাজ’
চিঠিটা পড়ে ফেলুদা কপাল কুঁচকে খাটে বসে পড়ল। ‘স্কাউন্ড্রেল, কি মজা পায় এই সহজ সরল লোকটাকে নিয়ে বুঝি না।’
‘এখন কি করবে ফেলুদা?’
‘খোঁজ তো নিতেই হবে, আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব।’
রুম তালাবন্ধ করে হোটেলের রিসেপশনে এসে খোঁজ নিলাম। রিসেপশনিস্ট জানাল, আজ সকালে ৬ঃ০০ টার দিকে এক ব্যক্তি এসেছিল লালমোহন বাবুর খোঁজে, মিনিট দশেক এর মধ্যেই লোকটা বেরিয়ে যায়। হাতে বিশাল একটা স্যুটকেস ছিল। ঠেলে ঠেলে নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে বলে জানাল।
‘আপনারা জানতে চাইলেন না কিছু?’
‘আসলে স্যার, আমাদের তখন শিফটিং টাইম, কে আসে বা যায় এতটা খবর রাখা হয় না।’
‘একটু চোখ কান তো খোলা রাখবেন, আপনাদের সামনে দিয়ে সে লোক এক জলজ্যান্ত মানুষ কে স্যুটকেসে ভরে নিয়ে গেল, আপনারা টের ও পান নি।’
‘সরি স্যার।’
ফেলুদা কে দেখে মনে হল তার মত এতটা হতাশ কেউ কখনো হয়নি।
‘চল তো, ডবলমুরিং থানায় একটু ঢুঁ মেরে আসি। ওসি শহীদুল এর সাথে আমার পরিচয় আছে।’
‘ফেলুদা, তুমি পুলিশের কাছে যাবে?’
‘মগনলালের হাত থেকে লালমোহন বাবু কে আমি ই উদ্ধার করব, কিন্তু আমাকে দিয়ে নিশ্চয় কোন গর্হিত কাজ করাতে চায়, যাতে সময়মতো সাহায্য পাই পুলিশের সেজন্য যেতে হবে।’
বের হলাম হোটেল থেকে, ইতিমধ্যে ফেলুদার মোবাইল ফোনে কিছু ছবি আসল, সাথে একটি ভিডিও।
ছবিগুলো খুলে ফেলুদা দেখল, কিছু এক্সরে এর ছবি। আর ভিডিও তে দেখা গেল, লালমোহন বাবু একটি ঘরের এক কোণে কাত হয়ে পড়ে আছেন। বোঝাই যাচ্ছে উনাকে বেদম মারধোর করা হয়েছে। সাথে এল একটি খুদেবার্তা। ‘এসব ই আংকল এর এক্সরে, বুঝতেই পারছেন, খুব বেশি ভালো নেই আংকল, যদি বাঁচাতে চান, তাহলে এখনি রিকশা নিয়ে কর্ণফুলী শিশুপার্ক এর সামনে যান, সেখানে হামার এক আদমি থাকবে, নীল শার্ট, আপনাকে একটি প্যাকেট দিবে।’
ফেলুদা দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ ভাবল, এরপরে গুগল থেকে কিছু ঘেটে মোবাইলে কি যেন টাইপ করল। ‘চল, যাই।’
‘কি লিখলে ফেলুদা?’
‘পরে বলব, এখন লালমোহন বাবু কে বাঁচানো প্রথম কাজ।’
‘এক্সরে গুলোতে কি ছিল ফেলুদা?’
‘প্রথমটি ছিল Tension pneumothorax এর। কি জিনিস এটা? এটা হল, Communication between Lung and Pleural cavity with one way valve, which allows air to enter during inspiration and prevents leave during expiration। অর্থাৎ, সে শ্বাস নিলে বাইরে থেকে বাতাস Pleural cavity তে ঢুকবে কিন্তু শ্বাস ছাড়কে সেই বাতাস বের হবে না। ফলে চাপ বাড়তে থাকবে Lung এর উপরে। এর এক্সরে তে এখানে Collapsed lung margin, flattening of the diaphragm পাওয়া যায়। এটা এক ধরনের Valvular type pneumothorax. Feature এ যদি দেখি, তাহলে কি কি পাব? Feature এ পাব-
- Severe chest pain
- Severe and progressively increasing dyspnoea
- Cough
-Tachypnoea - Tachycardia
- Features of shock (cold clammy skin, hypotension, central cyanosis)
- Raised JVP
Immediately, wide bore needle insertion করে Second intercostal space থেকে বাতাস বের করে নিতে হয়,
একই সাথে, 4th/5th intercostal space এ Midaxillary line বরাবর Water seal drainage দিতে হয়।
ব্যথা কমাতে 5-10 mg morphine IV তে
আর টানা অক্সিজেন, বসিয়ে রেখে।’
‘এগুলো না করলে কি হবে ফেলুদা?’
‘Lungs collapse করে রোগী মারাও যেতে পারে।’
‘Water seal drainage টা কি?’
‘Mid axillary line এ 4th/5th intercostal space এ একটা Tube দিয়ে দিতে হয়, যার অপর প্রান্ত একটি বোতলে কিছু অংশ পানি ভরে তাতে দিতে হয়। এতে Bubbling হলে বোঝা যায়, কাজ করছে। যদি Bubbling থেমে যায়, ২৪ ঘন্টা পরে Tube টি সরিয়ে নেওয়া যায়, কিন্তু তার আগে আরেকটি এক্সরে করে দেখতে হয় Lungs expand হয়েছে কিনা। কিন্তু ৫-৭ দিনেও কোন কাজ হচ্ছে না, বা Bubbling হয়েই যাচ্ছে, সেক্ষেত্রে Surgical treatment ছাড়া গতি নেই। দুইভাবে করা যায়, - VATS (Video Assisted Thoracoscopic Surgery)
- Thoracotomy
আর যদি Pleural adhesion হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে - Pleurectomy
- Pleural abrasion
- Chemical pleurodesis
করতে হয়।’
‘আর বাকি এক্সরে গুলো?’
‘দ্বিতীয় এক্সরে টি ছিল Shoulder joint dislocation এর। Shoulder joint তো Anteroinferior দিকেই সবচেয়ে বেশি Dislocation হয়। কেন বলতে পারবি?’
‘Rotator cuff নিচের দিকে মাসল সাপোর্টে থাকে না।’
‘হ্যাঁ, Examination করলে patient এর Abduction আর External rotation movement loss হবে।
আমরা যদি Ultrasound বা MR arthrogram করি, তবে Detachment of the anteroinferior labrum পাব। যার অপর নাম Bankart lesion।
এক্ষেত্রে আমাদের Close reduction করতে হবে। General anaesthesia র under এ। এরপরে Immobilization করে রাখতে হবে, Collar and cuff triangular sling bandage দিয়ে।’
‘বুঝলাম।’
‘তাড়াতাড়ি চল, আমরা পৌঁছাতে না পারলে লালমোহন বাবুর জীবন সংকটে পড়বে।’
কর্ণফুলী শিশুপার্ক এর সামনে এসে মগনলালের লোকটিকে খুঁজে পেতে কষ্ট হল না। প্যাকেট টি পাওয়া মাত্র ফেলুদার ফোনে মেসেজ এল,
‘মিস্টার মিত্তার, ওই প্যাকেটে এক শিশি Anaesthesia আছে, সাথে ছোট একটা সিরিঞ্জ, জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরে যান, গার্ড কে অজ্ঞান করুন, পেন্টিং আছে, নিয়ে আসুন আমার জন্য, আংকল কে নিয়ে যান।’
সাথে ছোট একটি ভিডিও। ভিডিও দেখেমাত্র ফেলুদা একটি মেসেজ লিখল ওসি শহীদুল কে। দ্রুত হোটেলে এল, ব্যাগ খুলে বের করে নিল নিজের রিভলবার। পকেটে চালান করে সাথে আরো ছ’টি গুলি নিয়ে নিল। আমার মনে হতে লাগল, এখন বেশ জম্পেশ ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে।
বেরিয়ে এসে সিএনজি ডেকে গলফ ক্লাব উচ্চারণ করে উঠে পড়ল। পুরো রাস্তা সে চোয়াল শক্ত করে বসে রইল। আমিও তাকে কিছু জিজ্ঞাসা করার সাহস পেলাম না।
গলফ ক্লাবে পৌঁছাতেই দেখা গেল, বাইরে একটি জিপ দাঁড়ানো। ফেলুদা দ্রুত গলফ ক্লাবে ঢুকল। প্রথমে একটি প্রহরী কে দেখা গেল, ফেলুদা পেছন থেকে তার ঘাড়ে এক ক্যারাটের প্যাঁচ কসাল। সাথে সাথে সে ধরাশায়ী হল। এভাবে আরো তিনজন কে ধরাশায়ী করে ফেলল। একটি হলঘরের মত রুম সামনে, গজলের গান ভেসে আসছে, সামনে সোফায় দেখা গেল আমাদের দিকে পেছন ফিরে টেলিভিশনের দিকে তাকিয়ে আছে মগনলাল মেঘরাজ। পাশে মাটিতে উপুড় হয়ে পড়ে আছেন লালমোহন বাবু।
বাজের ক্ষিপ্রতায় দৌড়ে গিয়ে ফেলুদা এক টানে কলার ধরে মগনলাল কে তুলে দাঁড়া করাল। ফেলুদা কে দেখে মগনলালের চোখ বিস্ফারিত হল।
‘যারা টাকার লোভে একজন সহজ সরল মানুষ কে কিডন্যাপ করে, যারা একজন গোয়েন্দা কে দিয়ে গর্হিত কাজ করাতে চায়, আমার হাত থেকে তারা কখনো রেহাই পাবে না মিস্টার মগনলাল মেঘরাজ।’
ফেলুদার কথা শেষ হতেই দেখা গেল মগনলাল এর চোখ উল্টে গেল, সে অজ্ঞান হয়ে পড়ল। সপ্তমীর সকালের সূর্যের আলোয় দেখা গেল ফেলুদার হাতে চকচক করছে মগনলালের ই দেওয়া সেই সিরিঞ্জ।
মগনলাল কে ওসি শহীদুল এর হাতে তুলে দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স এ করে লালমোহন বাবু কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে ফেলুদা কে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ফেলুদা, তুমি কিভাবে বুঝেছ, মগনলাল লালমোহন বাবু কে গলফ ক্লাবে এনেছে?’
‘প্রথমে বুঝিনি, তার দ্বিতীয় ভিডিও টি দেখার পরেই আমার সন্দেহ জাগে।’
‘কি ছিল সে ভিডিও তে?’
‘মগনলাল লোক টা যতই খারাপ হোক, সে আমাকে দিয়ে কার্যসিদ্ধির জন্য লালমোহন বাবু কে অত্যাচার করবে, এ কথাটা আমি মন থেকে মেনে নিতে পারছিলাম না। এক্সরে গুলো ও আমার নকল মনে হয়েছিল। দ্বিতীয় ভিডিও টি আসার পরে আবার এক্সরে গুলো দেখলাম, সেটা আজ থেকে ৬-৭ মাস আগের এক্সরে। তখন তো আমরা এখানে আসি ই নি, তাহলে সেই এক্সরে গুলো কার? এরপর ভিডিও টি দেখলাম। সেখানে দেখলাম লালমোহন বাবুর কনুই এ লাল হয়ে ফুলে আছে, অর্থাৎ Medial epicondylitis। সাধারণত কেউ গলফ খেললে তার ক্ষেত্রে এমন টা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অর্থাৎ হয়ত উনাকে এনে গলফ খেলতে বলেছিল মগনলাল। সেক্ষেত্রে বারবার গলফ স্টিক চালানোর ফলে হতে পারে উনার Golfer’s elbow develop করেছে, অথবা এমন ও হতে পারে overuse এর কারণে Fatigue হয়ে Tendon injury হয়েছে। হাসপাতালে গেলে ডাক্তার রাই ভালো বলতে পারবেন।’
‘তাহলে উনি senseless হলেন কিভাবে?’
‘হয়তো anaesthesia দিয়ে উনাকে senseless করে রাখা হয়েছে।’
ক’টা দিন লালমোহন বাবু কে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি গেল।
ফেলুদার চিন্তাই ঠিক। Tendon injury হয়েছিল উনার, সাথে anaesthesia এর জন্য অজ্ঞান ছিলেন।
দেখতে দেখতে পূর্ণিমা চলে এল। আগের দিন হাসপাতাল থেকে রিলিজ পেলেন লালমোহন বাবু। ফেলুদা বলল, ‘কি লালমোহন বাবু, চট্টগ্রাম কেমন দেখলেন?’
‘আর বলবেন না মশাই, উফফ, এই লোকটা এত বজ্জাত।’
‘কাল তো পূর্ণিমা, আপনার আশাটাও পূর্ণ করে দি, কাল সীবিচে চলুন, চাঁদ দেখবেন আর সাগরের ঢেউ উপভোগ করবেন।’
‘বেশ একটা থ্রিলিং এক্সপেরিয়েন্স হল মশাই, চট্টগ্রাম আসা সার্থক।’
‘আপনার গল্পের চেয়েও বেশি থ্রিলিং বলছেন?’
‘দূর মশাই, আমার গল্প এর কাছে কোন ছার।’
‘তাহলে, বলে ফেলুন সেই বিখ্যাত কথাটা।’
‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, সে তো বটেই। থ্রি চিয়ার্স ফর থ্রি মাস্কেটিয়ার্স। হিপ হিপ হুররে।’
প্ল্যাটফর্ম একাডেমিক উইং/ধ্রুব ধর
চট্টগ্রাম মা-ও-শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজ
সেশন:২০১৩-২০১৪