রমযান মাস। এ মাসে প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমদের সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোযা রাখার আদেশ করা হয়েছে। তবে অসুস্থতাজনিত কারণে রোযা রাখার ক্ষেত্রে শিথিলতা আছে।
পবিত্র কুরআনে এ ব্যপারে বলা হয়েছে,
“আর তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে তারা অন্য সময় তা পূর্ণ করে নেবে। (সূরা বাকারা : ১৮৫)”
সেই হিসেবে ডায়বেটিক রোগীদের রোযা রাখার ক্ষেত্রে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। তবে তারা চাইলে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন মেনে সিয়াম সাধনা করতে পারেন।
রোযা রাখার ক্ষেত্রে diabetes রোগীদের ৩ টি বিষয় সম্পর্কে খেয়াল রাখতে হবে-
- Diabetes সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান রাখা। যেমন: কমে গেলে কি হতে পারে, বাড়লে কি হতে পারে। এমন কিছু হলে প্রাথমিকভাবে কি করণীয়, এবং কোন ধরণের বিশেষ সেবা গ্রহণ করতে হবে।
- নিয়মিত বা জরুরী প্রয়োজনে blood glucose check করার সুযোগ আছে কিনা। বাসায় glucometer আছে কিনা।
- রোগী যে ওষুধ গুলো খায় বা insulin নেয়, সেগুলো রমযানের রুটিনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা।
ওষুধ পরিবর্তন করতে হলে রোযার কমপক্ষে ১ মাস আগেই সেটি করতে হবে, যাতে করে নতুন ওষুধগুলো শরীরের সাথে খাপ খেয়ে নিতে পারে এবং diabetes নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট সময় পায়। তাই যারা diabetic রোগী তাদের উচিৎ রোযা শুরু হওয়ার আগেই ডাক্তারের কাছে যেয়ে ওষুধ adjust করে নেয়া।
প্রচলিত Biphasic ও Rapid acting insulin injection, এবং মুখে খাওয়ার ওষুধের মধ্যে Insulin Secretagogues (Sulphonylureas), যেমন-
- Glimepiride,
- Gliclazide ও
- Glipizide, এ গুলো Hypoglycaemia করে অর্থাৎ glucose কমিয়ে দেয়।
রমযান মাসে Fasting এর জন্য রক্তে glucose এমনিই কিছুটা কমে যায়, তার উপর উপরের ওষুধগুলো যেহেতু hypoglycemia করে, তাই এসব ওষুধ গ্রহণকারী রোগীদের খুব সতর্ক থাকতে হবে। রোযা রাখা অবস্থায় কখনো hypoglycemia র লক্ষণ দেখা দিলে, রোযা ভেঙে ফেলতে হবে।
এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআন ও হাদীসে বলা হয়েছে,
“তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে হত্যা করোনা। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের প্রতি অতিশয় দয়ালু। (সূরা নিসা : ২৯)”
ওষুধের dose adjustment করার সময় যেটা মনে রাখতে হবে, স্বাভাবিক সময়ে দিনের প্রধান খাবার সকালের নাস্তা হলে, রোযায় প্রধান খাবার কিন্তু ইফতারি। তাই সকালে নাস্তার সময় যে dose এ ওষুধ খেতো সেটা সে খাবে ইফতার করার সময়। আর রাতে যে ওষুধ খেতো সেটা খাবে সেহরীতে।
এবার একটা বিষয় চিন্তা করতে হবে। ইফতার করার সময় অনেক বেশি খাওয়া হয়, মাঝে রাতেও আবার খাওয়া হয়, কিন্তু সেহরীর পর দীর্ঘ সময় থাকতে হয় না খেয়ে। তাই সেহরীর dose কে স্বাভাবিক dose এর চেয়ে কমাতে হবে!
কতটুকু কমাতে হবে?
- ২৫-৫০% কম। অর্থাৎ স্বাভাবিক ওষুধের অর্ধেক বা তিন ভাগের দু ভাগ খাবে সেহরীতে।
- Sulphonylurea – Glimepiride সকালে ১ বেলা খেলে, রোযার সময় সেটি ইফতারে খাবে।
- আর Gliclazide দিনে দুবেলা খেলে, রোযার সময় স্বাভাবিক dose এর অর্ধেক সেহরিতে ও পুরোটা ইফতারে খাবে।
যেহেতু এই ওষুধগুলো Hypoglycaemia করে, সেহেতু ইফতারির সময় হালকা কিছু দিয়ে ইফতারি করে, এরপর ওষুধটা খেয়ে তার ৩০ মিনিট পর ভারী ইফতারি করতে হবে।
Biphasic Insulin এর ক্ষেত্রে উপরের ওই একই নিয়ম। অর্থাৎ সকালের insulin ইফতার করার সময়, আর রাতের insulin এর অর্ধেকটা সেহরীতে। এরপরেও ইফতারের পর ও সেহরীর আগে glucometer দিয়ে blood glucose check করে dose adjust করা যাবে।
কিন্তু যারা ৩ বেলা Rapid acting insulin নেয়, তাদের ক্ষেত্রে সেটি change করে উপরের নিয়মে সেহরি ও ইফতার এই দু’বেলা Biphasic insulin দেওয়া যেতে পারে।
Insulin এর ক্ষেত্রে আর একটি ভাল option-
Long acting insulin, যা প্রতিদিন সন্ধ্যায় ১ বার নিলেই হয়, আবার hypoglycemia ও করে না। তাই যারা Biphasic বা Rapid acting insulin নেয়, রমযান মাসে তাদের জন্য একটি ভাল বিকল্প হল এই Long acting insulin। তবে problem হল –
- এর দাম বেশি,
- সহজলভ্য নয়,
- Diabetes নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় নেয় বেশি।
রমযান মাসে আর একটি ভাল option হল, GLP-1 agonists
যেমন-
- Exenatide,
- Liraglutide, এগুলোও insulin এর মত injectable ওষুধ। Insulin এর বিকল্প হিসেবে এগুলো দেওয়া যায়।
এগুলোর সুবিধা হলঃ
- এরা Glucose dependent insulin secretagogue. Glucose বাড়লেই কেবল এরা insulin secretion বাড়ায়, তাই তারা hypoglycemia করে না।
- অন্যদিকে insulin এর মত তারা weight gain ও করে না, তাই obese patient দের ক্ষেত্রে সহজেই এদের ব্যবহার করা যায়।
আর যারা injectable agent নিতে চায় না, আবার sulphonylurea ব্যবহারে hypoglycemia র ঝুঁকি আছে, তাদের জন্য মুখে খাওয়ার ওষুধের মধ্য সবচেয়ে ভাল হল- Incretin mimetics (DPP-4 inhibitors), যার মধ্যে আছে-
- Sitagliptin,
- Vildagliptin,
- Linagliptin ইত্যাদি। GLP-1 agonist এর মত এরাও glucose dependent insulin secretagogue, অর্থাৎ রক্তে glucose বাড়লে insulin secretion বাড়ায়, তাই এদের ক্ষেত্রেও hypoglycemia হওয়ার ঝুঁকি নেই।
উপরের আলোচনা থেকে একটি বিষয় clear, আর সেটি হল – রমযানে diabetes রোগীদের অন্যতম ঝুঁকি হল hypoglycemia!
রোযা রেখে তাই-
- Hypoglycemia হয় এমন drug খুব সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা।
- সবচেয়ে ভাল হয় DPP-4 inhibitors বা GLP-1 agonists এর মত incretin mimetics ব্যবহার করা যারা hypo করে না।
- আর একটা বিষয় যা আমরা সবাই জানি, diabetes নিয়ন্ত্রণে প্রধান দুটি নিয়ামক হল-
- Diet ও
- Discipline.
রমযান মাসে Diet control করতে যেয়ে যেন ইফতারির পর রাতের খাবার miss না হয়। আর Discipline maintain করতে যেয়ে যেন দিনের বেলায় অতিরিক্ত exercise করা না হয়। কারণ meal skipping ও strenuous exercise দুটোই hypoglycemia র ঝুঁকি বাড়ায়।
রোযা অবস্থায় রোগী অসুস্থ হয়ে গেল, কারণ যদি হয় Hypoglycaemia তবে যে symptoms গুলো থাকবেঃ
- Weakness
- Sweating
- Palpitation
- Trembling
- Confusion
- Unconscious
এসব প্রকাশ পেলে ভাল হয় সাথে সাথে blood glucose check করে দেখা। যদি সেটা 4 mmol/L এর নিচে নেমে যায় তাহলে confirm Hypoglycaemia!
Check করা সম্ভব না হলেও যেহেতু symptoms আছে, তাই-
- যদি রোগীর জ্ঞান থাকে তাহলে সাথে সাথে glycose বা carbohydrate জাতীয় খাবার যেমন চিনির পানি, মিষ্টি, শরবত বা অন্য কোন শর্করা যা আছে বাসায় সেটাই খাইয়ে দিতে হবে।
- আর জ্ঞান না থাকলে সোজা হাসপাতাল, চিকিৎসা সেখানেই হবে, glucose শিরায় দিতে হবে।
আর এরকম কোন ঘটনা ঘটলে একটু খোঁজ খবর নিয়ে দেখতে হবে স্বাভাবিক খাবার গ্রহণে তার কোন অনিয়ম হয়েছে কিনা। যদি তেমন কিছু হয় সেটা ঠিক করা। আর সেটা ঠিক থাকলে রোযা না রাখতে নিরুৎসাহিত করা এবং রোগীকে এ ব্যাপারে বুঝিয়ে বলা।
পৃথিবীর সকল অসুস্থ মানুষ সুস্থ হয়ে উঠুক, এবং চিকিৎসকরা সেই সুস্থতার আস্থাশীল নিয়ামক হিসেবে কাজ করুক, এই কামনায় শেষ করছি। ধন্যবাদ সবাইকে।
ডা. কাওসার উদ্দীন
ঢামেক, কে-৬৫
প্ল্যাটফর্ম একাডেমিক /সাঈদা আলম