Blog

Why Are We Getting Aged?

একটা বাচ্চা জন্মগ্রহণ করার পর আস্তে আস্তে বড় হয়, তার শৈশব পেরিয়ে যৌবন আসে, যৌবন পেরিয়ে বার্ধক্য এবং অবশেষে মৃত্যু। জীবনচক্রে ঘড়ির কাঁটার সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের বয়সও বাড়তে থাকে। মানুষের বয়স বাড়ার পেছনে স্রষ্টার তৈরি অসাধারণ বায়োলজিকাল মেকানিজমই আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।

আমাদের শরীর ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন কোষের সমন্বয়ে গঠিত। বয়স বৃদ্ধি পেলে কোষগুলোর কার্যক্ষমতা কমে যেতে থাকে, তখন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোও দুর্বল হয়ে যায়। ফলে মানুষ ধীরে ধীরে বয়স্ক হতে থাকে। বিভিন্ন কারণে কোষগুলোর কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে।এর জন্য জেনেটিক ব্যাপার যেমন দায়ী, বাহ্যিক কিছু পদার্থও দায়ী। আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস, লাইফস্টাইল, চারপাশের পরিবেশ কোষের মাঝে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন ঘটাতে থাকে।

প্রথমত, শরীরে জেনেটিক পরিবর্তন সংঘটিত হয়।নিউক্লিয়াসে থাকা DNA সিকুয়েন্সে অদলবদল মানবদেহের বয়স বাড়ানোর জন্য দায়ী। কোষের একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো মাইটোকন্ড্রিয়া। মাইটোকন্ড্রিয়া কোষের শক্তি (ATP) উৎপাদনের মূল উৎস ও কোষের জ্বালানি। আমাদের কোষগুলো বিভাজিত হতে হতে একটা নির্দিষ্ট সময়ে পরে মাইটোকন্ড্রিয়াগুলো ধ্বংস হয়ে যায়, এতে কোষ আর শক্তি তৈরি করতে পারে না, কোষের মৃত্যু হয় এবং Organ Failure হতে পারে। এভাবেই মাইটোকন্ড্রিয়ার মৃত্যু বয়সের বৃদ্ধির সাথে জড়িত।

Figure : Role of Mitochondria in Aging

মানবদেহের বেশিরভাগ কোষের বিভাজন ক্ষমতা আছে। একটা থেকে দুটো কোষ হয়, দুটো থেকে চারটে কোষ। বিভাজিত হতে হতে নির্দিষ্ট একটা সময়ের পরে কোষের বিভাজন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। একে আমরা বলি Cellular Senescence। আমাদের নিউক্লিয়াসে থাকা ক্রোমোজোমের দুইপ্রান্তে টেলোমিয়ার নামক জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল লাগানো থাকে। টেলোমিয়ারের কাজ হলো ক্রোমোজোমকে বিভক্ত করা এবং নতুন ক্রোমোজোমগুলো যাতে নষ্ট না হয়ে যায় তার দেখভাল করা। কোষের প্রতিবারের বিভাজনে ক্রোমোজোমের টেলোমিয়ারের দৈর্ঘ্য ছোট হতে থাকে। একটা সময় বিভাজনের ফলে টেলোমিয়ার ছোট হতে হতে একেবারেই হারিয়ে যায়। একে আমরা বলি Telomere Attrition। এতে ক্রোমোজোমের নতুন কোন কপি তৈরিও হয়না, কোষের বিভক্তিও ঘটে না আর। ফলস্বরূপ Cellular Senescence ঘটে।

Telomerase নামক RNA Protein ক্রোমোজোমের বিভাজনের পরেও টেলোমিয়ারের দৈর্ঘ্যকে বৃদ্ধি করতে পারে, এতে টেলোমিয়ারের দৈর্ঘ্য বিভাজিত হয়েও ছোট হয়ে যায় না। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, উন্নত প্রাণীর শরীরে স্বাভাবিক অবস্থায় টেলোমারেজ প্রোটিনটি থাকেনা। তাই, টেলোমিয়ারের বৃদ্ধিও প্রতিবারের কোষবিভাজনে বজায় রাখা সম্ভব হয়না।এই প্রোটিনটি শুধুমাত্র দেহের অস্বাভাবিক অবস্থা, যেমন ক্যান্সার সেলে বিদ্যমান থাকে। ক্যান্সার হলো শরীরের এমন একটা রোগ, যেখানে কোষের বিভাজন কখনো শেষই হয় না, আজীবন চলতে থাকে। কারণ, টেলোমারেজ প্রোটিন টেলোমিয়ারকে কোষ বিভাজন হবার পরেও দৈর্ঘ্যের কোন পরিবর্তন হতে দেয়না, এতে ক্রোমোজোমের বিভাজন হতে থাকে, চলতে থাকে কোষ বিভাজনও। মানব শরীর ভোগে ক্যান্সারে।

Figure : Telomere Binding Proteins

আমাদের শরীরে আরেকধরনের বিশেষ কোষ হলো স্টেম সেল। স্টেম সেলের কাজ হলো দেহের কোন স্থানের কোষ মারা গেলে, স্টেম সেল সেই অঙ্গের কোষের আকার ধারণ করে এসে মৃত কোষের স্থানে বসে যায়। এতে ক্ষয়পূরণ হয়ে যায়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্টেম সেলের পরিমাণও দেহে কমতে থাকে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যুতে নতুন কোষের দেখা আর মিলে না। আমাদের টিস্যু এবং অঙ্গের কার্যক্ষমতা কমে যায়।

মানবদেহের বয়স বাড়ার ফলে কোষের নতুন প্রোটিন তৈরি ও পুরোনো বর্জ্যকে কোষ থেকে বের করে দেবার সক্ষমতা কমে যায়। তখন কোষের মেটাবলিক একটিভিটিতে আঘাত পরে। দুই বা ততোধিক কোষের মাঝে কেমিক্যালের আদান-প্রদানও ধীর হয়ে পড়ে।

শিশুকালে অনেক জিনই আমাদের শরীরে প্রকাশ পায়না। আমরা যতো বড় হতে থাকি, দেহে জিনের প্রকাশ বেড়ে যায় এবং এটাকেও বয়স বৃদ্ধির কারণ বলা হয়। Insulin Like Growth Factor-I কে বিশেষভাবে দায়ী করা হয়।

একটা মজার ব্যাপার বলি। কালো চামড়া বয়সের সাথে সাথে কুঁচকায় তুলনামূলক কম। এর সায়েন্টিফিক ব্যাখাও বিজ্ঞানীরা দিয়েছেন। কালো চামড়ায় এক ধরনের মেলানিন থাকে যার নাম Eumelanin। এই পদার্থ চামড়াকে সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির হাত থেকে রক্ষা করে এবং কোষের মৃত্যুকে ধীর করে দেয়। তাছাড়া কালো চামড়ায় তেল ও কোলাজেন বেশি থাকে। এতে বয়স বাড়লেও তাদের চামড়ায় কুঁচকানো ভাবটা সাদা চামড়ার থেকে তুলনামূলকভাবে কম আসে।

আমাদের খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপন, চারপাশের পরিবেশে, ফিজিকাল একটিভিটি এসব কিছুই বয়সকে নিয়ন্ত্রণে/বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে থাকে। স্রষ্টার অসাধারণ কারুকার্যে শোভিত মানবদেহে এমন অসাধারণ মেকানিজম সত্যিই সবাইকে মুগ্ধ করার মতোই সুন্দর।

Moinul Islam
Chattogram Ma-O-Shishu Hospital Medical College
Session:2017-18

প্ল্যাটফর্ম একাডেমিয়া / তাহসিন লাবিবা তানহা

Leave a Reply