২৪ জুলাই,২০২০
এখন পর্যন্ত পুরো বিশ্বে SARS-Cov-2 ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দেড় কোটির অধিক। মারা গিয়েছেন প্রায় ৬লাখ ৩৭হাজার জন মানুষ। ঠিক এই মূহুর্তে দাঁড়িয়ে মানুষ হন্য হয়ে খুঁজছে এর প্রতিকার। তবে কারো কাছেই কোনো উত্তর নেই এই গোলকধাঁধার। উদ্ভাবিত মেডিসিনগুলোর কোনটিই পুরোপুরি সুরক্ষা দিচ্ছে না এই প্যান্ডেমিক থেকে। তাই শেষ ভরসা হয়ত একটাই; একটি ভ্যাকসিন।
সময়ের সাথে পাল্লা দেয়ার এ প্রতিযোগিতায় প্রথম সারিতেই আছে চীনের SinoVac Biotech Ltd. আজ অব্দি যে ৩টি SARS-CoV-2 ভ্যাকসিন ফেজ-৩ ট্রায়ালে প্রবেশ করেছে তাদের মধ্যে একটি হল এই Sinovac Biotech এর “CoronaVac”। আজকের লেখাটি এই CoronaVac নিয়েই।
Mechanism of Action:
CoronaVac একটি Inactivated বা Killed ভ্যাকসিন। এটি ভ্যাকসিন তৈরীর সবচেয়ে পুরোনো ও নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি। বর্তমান কালের Rabies, Influenza এবং Polio ভ্যাকসিনগুলোতেও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।
ভাইরাসগুলোকে প্রথমে একটি কালচার মিডিয়ামে তৈরী করা হয়। এরপর একে সেন্ট্রিফিউজ করে এর থেকে অবাঞ্চিত সেল আলাদা করা হয়। এরপরের ধাপ হচ্ছে Inactivation। এই ধাপে beta-propiolactone ব্যবহার করে ভাইরাসকে নিস্ক্রিয় করে ফেলা হয়। এর ফলে ভাইরাসটি বংশবৃদ্ধি করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এরপর একে পর্যায়ক্রমে Concentration buffer exchange, Benzonase, Chromatography, filtration এই ধাপগুলো পার করতে হয়। এরপর এতে যুক্ত করা হয় Aluminum adjuvant।
এখন প্রশ্নটি হল,”কেন?”
👉মূলত Inactivated বা Killed ভ্যাকসিন আমাদের দেহে খুব স্বল্প Immune response তৈরী করে। কারণ ভাইরাসটি মৃত এবং বংশবৃদ্ধিতে অক্ষম। এটি আমাদের দেহের Immune system কে ঠিকভাবে Stimulate করতে ব্যর্থ হয়। এতে উপকারের চেয়ে বরং ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি থাকে। Aluminum adjuvant ব্যবহারের ফলে ভ্যাকসিনে ব্যবহৃত ভাইরাসটি মানবদেহে ধীরগতিতে উন্মুক্ত হয় এবং Immune system ও এই সময়ে সঠিকভাবে Stimulated হয়। এই Adjuvant adding অনেক পুরোনো একটি পদ্ধতি যেটি ১৯৩০ সাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে (ডিপথেরিয়া এবং টিটেনাস ভ্যাকসিনে)। “CoronaVac” এ Aluminum adjuvant হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে Al(OH)3।
এই পর্যন্ত কাজসম্পন্ন হলে তবেই আপনার ভ্যাকসিন তৈরী। ধাপগুলো সংক্ষেপে বললে,
1.Virus Production
Virus seed
⬇
Vero cells
⬇
Cell factory
⬇
Clarify, store<40°C
2.Inactivation:
Cell supernatent
⬇
Beta-propiolactone
⬇
Inactivation
3.Purification:
Inactivated supernatant
⬇
Concentration buffer exchange
⬇
Benzonase
⬇
IEX & size-exclusion chromatography
⬇
Filtration(0.22 microgram)
⬇
Al(OH)3 formation
⬇
Vaccine product
মানবদেহে প্রয়োগের পর ভ্যাকসিনটি Foreign particle হিসেবে বিবেচিত হয়। Inactivated/Killed virus টিকে Antigen presenting cell(APC) MHC-I এর সাহায্যে Naive T cell এর কাছে উপস্থাপন করে। IL-4 এর উপস্থিতিতে Naive T cell, Helper T cell এ পরিণত হয়। Helper T cell থেকে IL-4 এবং IL-5 রিলিজ হয়; যার উপস্থিতিতে B cell, plasma cell এ পরিণত হয়। এই Plasma cell থেকে পরবর্তীতে ভাইরাসটির বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরী হয় (Mostly IgG)। পরবর্তীতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও দেহ এর বিরুদ্ধে দ্রুত এন্টিবডি তৈরী করে। এভাবেই মূলত ভ্যাকসিনটি আমাদের দেহে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। অর্থাৎ সংক্ষেপে বললে,
Inactivated/Killed
ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ
⬇
কোষের সাইটোপ্লাজমে Virus এর উপস্থিতি
⬇
APC এর ভাইরাসটিকে MHC-I এর মাধ্যমে Naive T cell এর কাছে উপস্থাপন
⬇
Helper T cell (IL-4 এর উপস্থিতিতে)
⬇
B cell এর plasma cell এ রূপান্তর (IL-4,IL-5 এর উপস্থিতিতে)
⬇
এন্টিবডি তৈরী
⬇
ইমিউনিটি
Trial:
Phase 0 এ ভ্যাকসিনটিকে রেসাস বানরের ওপর প্রয়োগ করা হয় যার প্রত্যেকটির বয়স ৩-৪ বছর । বানরগুলোকে চারটি গ্রুপে ভাগ করে একটি গ্রুপে হাই ডোজ ভ্যাকসিন(৬মাইক্রোগ্রাম) , একটিতে লো ডোজ ভ্যাকসিন(১.৫ মাইক্রোগ্রাম), একটিতে Aluminum adjuvant, এবং অন্য গ্রুপটিতে শুধু স্যালাইন প্রয়োগ করা হয়। Intramuscularly ভ্যাকসিনটি ০, ৭ ও ১৪ দিনের ৩টি ডোজে প্রয়োগ করা হয়। ভ্যাকসিন প্রয়োগের ৩সপ্তাহ পরে বানরগুলোকে করোনা ভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত করা হয়। ৭দিন পর পরীক্ষা করে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা কোনো বানরের দেহেই করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। লো ডোজ প্রয়োগ করা কিছু বানরের দেহে “Virus blip” দেখা যায়। Placebo প্রয়োগ করা সকল বানরগুলো করোনা ভাইরাসের আক্রান্ত হয় এবং লক্ষণ উপসর্গ প্রকাশ করে। এছাড়া ইদুঁরের ওপর ও ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করে সফলতা মিলেছে।
Phase I & II এ যথাক্রমে ১৪৪ ও ৬০০ জন অংশগ্রহণ করেন যাদের বয়স সীমা ১৮ থেকে ৫৯ এর মাঝে। এটি ছিলো একটি Randomized, double-blind & placebo-controlled study. স্বেচ্ছাসেবকদের High dose, Low dose এবং Placebo এই তিনটি গ্রুপে ভাগ করে ট্রায়েলটি সম্পন্ন হয়। ভ্যাকসিন প্রয়োগকৃত ৯০% এর দেহে ভ্যাকসিন প্রয়োগের ১৪দিন পর Neutralizing antibody শনাক্ত হয়। এছাড়া অন্য কোনো তথ্যই এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।
ব্রাজিলে ইতোমধ্যেই Phase III ট্রায়াল শুরু হয়েছে। Sinovac Biotech ও Instituto Butantan এর মধ্যে চুক্তির ফলে ব্রাজিলের সাও পাওলোতে ৯০০০ স্বাস্থ্যকর্মীর দেহে এই ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করা হবে যারা কোভিড-ডেডিকেটেড হসপিটাল গুলোতে কর্মরত আছেন।
বাংলাদেশের জন্যও রয়েছে আশার বাণী। Bangladesh Medical Research Council(BMRC) Sinovac কে বাংলাদেশে Phase-III ট্রায়াল এর অনুমতি দিয়েছে। ICDDRB এর অধীনে এতে ৪২০০ জন অংশগ্রহণ করবেন যার মধ্যে অর্ধেকের দেহে ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করা হবে। ট্রায়ালটি আগামী আগস্ট মাসে শুরু হয়ে নভেম্বর নাগাদ চলবে।
ভ্যাকসিনটি সফল হলে Sinovac এর সামনে দুটি চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করবে; ১.কত দ্রুত ভ্যাকসিনটি সবার জন্য সহজলভ্য করা যাবে?
👉Sinovac এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী এটি বছরে ১০০ মিলিয়ন ডোজ তৈরী করতে সক্ষম যা ChAdOX-01, Moderna বা Imperial college এর ভ্যাকসিনের তুলনায় অনেক কম। কারণ Infected/Killed ভ্যাকসিনে ভাইরাসটি একটি কালচার মিডিয়ামে তৈরী করতে হয় যা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার
২.ক্রমাগত মিউটেশন হওয়া ভাইরাসের বিপরীতে এটি আদৌ কার্যকরী হবে কি?
👉এই আশংকায় Sinovac ইতোমধ্যেই একটি চমকপ্রদ কাজ করেছে। তারা চীন, ইতালি, সুইজারল্যান্ড, স্পেন ও ইংল্যান্ডের বিভিন্ন আক্রান্ত মানুষের থেকে করোনা ভাইরাসের ১০টি স্ট্রেইন সংগ্রহ করেছেন। এরপর টেস্টিটিউবে এই ভাইরাসগুলোর বিপরীতে বানর এবং ইঁদুরের দেহে তৈরী হওয়া এন্টিবডিগুলো পরীক্ষা করেছেন। প্রতিক্ষেত্রেই ভাইরাসগুলো নিস্ক্রিয় হয়েছে।
ভ্যাকসিন তৈরী একটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। এই ক্রান্তিকালে বিজ্ঞান তার সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছে পুরো পৃথিবীকে রক্ষা করতে। আমাদের শুধু প্রয়োজন একটু সচেতনতা, ধৈর্য এবং কুসংস্কার থেকে দূরে থেকে বিজ্ঞানের ওপর আস্থা রাখা। কারণ আর যাই হোক,বিজ্ঞান কখনোই আপনাকে থানকুনি পাতা আর গোমূত্রে করোনামুক্তির কথা শোনাবে নাহ!
Reference:
• https://www.sciencemag.org/news/2020/04/covid-19-vaccine-protects-monkeys-new-coronavirus-chinese-biotech-reports
• https://www.biorxiv.org/content/10.1101/2020.04.17.046375v1
• https://science.sciencemag.org/content/369/6499/77
• https://science.sciencemag.org/content/sci/suppl/2020/05/05/science.abc1932.DC1/abc1932_Gao_SM.pdf
• https://www.reuters.com/article/us-health-coronavirus-bangladesh/bangladesh-allows-late-stage-trial-of-chinas-sinovac-covid-19-vaccine-idUSKCN24L0KO
• https://www.aljazeera.com/news/2020/07/china-sinovac-starts-late-stage-trials-covid-19-vaccine-200707052455342.html
• http://www.sinovac.com/?optionid=754&auto_id=904
• http://www.sinovac.com/?optionid=754&auto_id=897
• http://www.sinovac.com/?optionid=754&auto_id=896
• https://www.cdc.gov/vaccinesafety/concerns/adjuvants.html
মোঃ আদিব সিদ্দিকী
হলিফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ
সেশনঃ২০১৭-২০১৮
Pingback: SARS CoV-2 ভ্যাকসিনের ইতিবৃত্ত ( পর্ব৫) – Platform | CME