Blog

কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিলো যে সে মরে নাই ।। Apparent Death

রানীহাটের জমিদার শারদাশঙ্কর বাবুর ছোটভাইয়ের স্ত্রী ছিলো কাদম্বিনী। তার পিতার পরিবারে কেউ জীবিত ছিলো না, শ্বশুরবাড়িতেও আপনার বলতে কেউই ছিলো নাহ। স্বামী-পুত্রহীনা এই রমনীর দুই চোখের মণি ছিলো শারদাশঙ্করের ছোট ছেলে। এই ছেলে জন্মাবার পর তার মায়ের কঠিন অসুখ হয়, তখন থেকেই সে কাদম্বিনীর কাছে মানুষ। এই ছেলের উপর তার সামাজিক দাবি না থাকলেও স্নেহের দাবি ছিলো। একদিন সেই দাবিও সে অগ্রাহ্য করে অল্প বয়সেই যাত্রা করলো পরপাড়ের দিকে।

পুলিশের ঝামেলা এড়ানোর জন্য শারদাশঙ্কর দেহ সৎকারের কাজ গোপনেই সাড়তে চাইলো। সে তার চারজন বিশ্বস্ত ভৃত্য- নিতাই, গুরুচরণ, বিধু আর বনমালীকে দিয়ে দেহ শ্মশানে নিলো দাহ করবার উদ্দেশ্যে। তারা দেহটিকে একটি কুটিরের মধ্যে রেখে অপেক্ষা করছিলো কখন দাহ করবার জন্য কাঠ এসে পৌঁছায়। এদিকে কাঠ কাটবারও ব্যবস্থা হচ্ছিলো। কাঠ শ্মশানে পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় নিতাই ও গুরুচরণ বেরিয়ে পড়লো সেই ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে, বিধু আর বনমালী শ্মশানেই রয়ে গেলো। মৃতদেহ নিয়ে শ্মশানে সেই দুইজনের সময় যেনো কাটতেই চায় নাহ। বাইরে থেকে অবিশ্রান্তভাবে ঝিল্লি ও ভেকের ডাক শোনা যাচ্ছিলো। এরই মধ্যে সেই কুটিরের মধ্যে একটা শব্দ হলো যেনো মৃতদেহ পাশ ফিরেছে। বিধু আর বনমালী ভয়ে কাপতে লাগলো। হঠাৎ ঘরের মধ্যে দীর্ঘশ্বাসের শব্দ। সেই শব্দ শোনার সাথে সাথে সে দুইজন ভোঁদৌড়। প্রায় দেড়-ক্রোশ পথ পাড়ি দেবার পর অবশেষে অপর দুই জনের দেখা মিললো। বৃত্তান্ত শুনে নিতাই ও গুরুচরণ বিশ্বাসই করলো না। সময়ক্ষেপণ না করে তারা অবিলম্বে রওনা দিলো শ্মশানের দিকে। ফিরে এসে দেখলো যে খাট শূন্য, মৃতদেহ নেই। প্রথমে মনে হলো যেনো শৃগালে নিয়ে গেছে কিন্তু তার জামা-কাপড়ও তো নেই। কিছুক্ষণ পরেই নরম কাদার উপরে তার ক্ষুদ্র পদচিহ্ন খুঁজে পেলো।

জীবনের যখন কোনো লক্ষণ পাওয়া যায় না তখনো অনেক সময় জীবন প্রচ্ছন্নভাবে থাকে, এবং সময়মত পুনর্বার মৃতদেহে তার কার্য আরম্ভ হয়। কাদম্বিনীও মরে নাই-হঠাৎ কি কারণে তার জীবনের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেছিলো। জ্ঞান ফেরার পরে সে বুঝতে পারলো যে সে মরে যায়নি, বেঁচে আছে। তবে সে তার নিজের ঘরে ফিরতে চায়নি- পাছে তাদের অকল্যান হয়। পিতৃকুলে কেউ নেই, মনে পড়লো তার বাল্যসখী যোগমায়ার কথা। সেখানেই গেলো সে। বাল্যসখীরও ব্যবহার মনপুত হচ্ছিলো না বলে প্রায় মাসখানেক পরেই সে যোগমায়া দেবীর ঘর থেকে ফিরে এল নিজের ঘরে, তার খোকার কাছে। ঘরের মেয়েরা এমনকি তার নিজের জাও তাকে দেখে মূর্ছা গেলো, শারদাশঙ্কর স্বয়ং এসে তাকে অনুরোধ জানালো সে যেনো তার ছেলের পিছু ছাড়ে- তাকেও যেনো যমালয়ে নিয়ে না যায়। সে যে জীবিত একথা যেন কেউ বিশ্বাসই করতে চাইলো না। এটা প্রমাণ করার জন্য বাটি দিয়ে মাথা ঠুকে রক্ত বের করে দিলো, শেষ পর্যন্ত পুকুরেও ঝাপ দিলো- যদি বিশ্বাস করে যে সে এখনো বেঁচে আছে। জীবন দিয়েই তাকে প্রমাণ করতে হলো যে সে জীবিত ছিলো- “কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিলো, সে মরে নাই”

শুনতে অবাক লাগছে? এটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্প “জীবিত ও মৃত”- এর কাহিনীর সার সংক্ষেপ। মৃত ঘোষণার কিছুক্ষণ থেকে কয়েক ঘণ্টা পরে জীবিত হয়ে ওঠা- রূপকথার মত শোনালেও বাস্তবে এমনও হয়। এই ঘটনাগুলোই Apparent death/ Death trance/ Suspended animation নামে পরিচিত।

Apparent death বলতে বুঝায়– It is the condition in which signs of life are not found, as the functions are interrupted for sometime, or are reduced to minimum, although the person is alive.

In this condition, the functions of the nervous system, circulatory system or the respiratory system may not be perceived by conventional methods, though the person may actually not be dead and the functions of the these systems return after sometimes, either as such or proper resuscitation.

সাধারণত ডুবে যাওয়া Comatose ব্যক্তিদের প্রায়শই অষ্টাদশ শতাব্দীতে “Apparently dead” বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। “Amsterdam Society for the Rescue of Drowning Persons” থেকে প্রকাশিত বইগুলিতেই এই শব্দ প্রথম ব্যবহার হয়। ডুবে যাওয়া মানুষের পুনরুত্থানের জন্যই এই সমিতি প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল নেদারল্যান্ডস এ- অনেকগুলি খাল থাকার কারণে ডুবে যাওয়া তখনকার সময়ে সেখানে একটি সাধারণ ঘটনা ছিল। প্রায়মৃত বলেই ধরে নেয়া মানুষদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাঁচিয়ে তোলাই ছিলো এই সমিতির লক্ষ্য। এদের অনুকরণে পরবর্তীতে আমেরিকা, ইংল্যান্ডসহ আরো অনেক দেশে এই সমিতি ছড়িয়ে পরে।

ডুবে যাওয়া মানুষদের ছাড়াও তখনকার সময়ে আরেকটা ব্যাপার নিয়ে খুব ভয় ছিলো, কাউকে জীবন্ত সমাহিত করা। তখনকার সময় এমন অনেক উদাহরণ পাওয়া যায় যখন কাউকে সমাহিত করার জন্য নিলে সে জীবিত হয়ে উঠত। ইংরেজ চিকিৎসক John Fothergill পরামর্শ দিয়েছিলেন যে কিছু পরিস্থিতিতে “distend the lungs with air” লাভজনক হতে পারে, বিশেষত “Sudden deaths from some invisible cause; apoplexies, fits of various kinds, as hysterics, syncope’s, and many other disorders, wherein, without any obvious pre-indisposition, persons in a moment sink down and expire“। ইংরেজ আইনজীবি এবং দার্শনিক Jeremy Bentham জীবিত সমাহিত হওয়ার আশঙ্কায় মৃত ব্যক্তির মস্তিষ্ক বা হৃৎপিণ্ডের মধ্য দিয়ে একটি কাঠের পিন বা পেরেক প্রবেশ করানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। বোঝাই যাচ্ছে যে Apparent death এই ঘটনাগুলো তখনকার মানুষকে খুবই বিব্রত করতো। সেজন্যই death declaration এর আগে পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হবার কথাই বার বার বলা হয়েছে।

বর্তমানে যেসব পরীক্ষার মাধ্যমে সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়-
📌 Repeated auscultation over a period longer than 5 minutes for the evidence of cessation of heart beat and respiration.
📌 Absence of pulse(radial, brachial & carotid artery).
📌 Non recordable blood pressure.
📌 Fix, non-reacting & dilated pupil.
📌 Ophthalmoscopy should be done routinely and death is confirmed by detecting segmentation of retinal vessels.
📌 Absence of all sensory, motor functions and reflexes.
📌 ECG & EEG.
📌 Demonstration of rectal temperature below 75oF.

Apparent death এর এই ঘটনা অনেকভাবেই ঘটতে পারে। স্বাভাবিকভাবে দুই একজন যাদুকর বা যারা নিয়মিত যোগব্যায়াম করে তারা নিজেদের power of concentration এর মাধ্যমে এই অবস্থায় যেতে পারেন এবং আবার ফিরেও আসতে পারেন (voluntary)

Fig : Causes of apparent death.

আবার বিভিন্ন রোগেও এমন হতে পারে (Involuntary)-
➡️ Vagal inhibition
➡️ Severe syncopal attack
➡️ Newborn infant
➡️ Drowning
➡️ Electrocution
➡️ Sunstroke
➡️ Cholera
➡️ Narcotic poisoning
➡️ After anaesthesia
➡️ Shock
➡️ Cerebral concussion
➡️ Insanity

Apparent death এই বিষয়টি প্রাণীবিজ্ঞানেও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি এমন একটি আচরণ যেখানে প্রাণীরা মারা যাওয়ার ভান ধরে যা আত্মরক্ষা, বংশবিস্তার ও শিকার ধরার ক্ষেত্রে সাহায্য করে। এটি playing dead, feigning death অথবা playing possum হিসেবেও পরিচিত।

Lazarus phenomenon or Lazarus syndrome, Catalepsy এবং locked-in syndrome- এগুলোও এমন অবস্থার উদাহরণ যেখানে জীবিতকে মৃতে ভেবে ভুল হতে পারে।

The Lazarus phenomenon, or Lazarus syndrome, is defined as a delayed return of spontaneous circulation (ROSC) after CPR (Cardio-pulmonary resuscitation) has ceased. In other words, patients who are pronounced dead after cardiac arrest experience an impromptu return of cardiac activity. এই সিন্ড্রোমের নাম Lazarus of Bethany এর নামে রাখা হয়েছিল, কারণ যিশুখ্রিস্ট Lazarus এর মৃত্যুর ৪ দিন পরে তাঁকে আবার পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন। ১৯৮২ সাল থেকে এটি প্রথম চিকিৎসা শাস্ত্রে বর্ণিত হয়েছিল, তখন কমপক্ষে ৩৮ টির মতো এমন case এর সন্ধান মিলেছিল।

উদাহরণস্বরূপ- Janina Kolkiewicz, যার হৃদস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হবার পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তিনি ৯১ বছর বাঁচলেও বাঁচার আশা ছেড়ে দেননি। এগারো ঘন্টা পরে, তিনি চা এবং প্যানকেকের জন্য আকুলতা নিয়ে হাসপাতালের মর্গে জেগে উঠেছিলেন। ২০১৪ সালে, মিসিসিপির একজন ৭৮ বছর বয়সী লোককে একজন হাসপাতালের নার্স তাকে heart beat না পাওয়ায় মৃত ঘোষণা করেছিলেন। পরের দিন, মর্গে একটি লাশ সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত ব্যাগের মধ্যে জেগে উঠলেন। এমন ঘটনা আরো অনেক আছে।

আবার, Catalepsy is characterized by a trance-like state, slowed breathing, reduced sensitivity, and complete immobility, which can last from minutes to weeks. The condition may arise as a symptom of neurological disorders such as epilepsy and Parkinson’s disease.

কিন্তু, Locked-in syndrome এর ক্ষেত্রে, a patient is aware of their surroundings, but they experience complete paralysis of voluntary muscles, with the exception of muscles that control eye movement.

২০১৪ সালে, The Daily Mail এর রিপোর্টে জানা যায় ৩৯ বছর বয়সী ব্রিটিশ মহিলা Kate Allatt “locked-in syndrome” এ আক্রান্ত ছিলেন। তার অবস্থা সম্পর্কে অজান্তেই চিকিৎসকরা তার brain dead ঘোষণা করেন। চিকিৎসকরা, পরিবার এবং বন্ধুরা তার বেডসাইডের পাশে দাঁড়িয়ে তাকে life support থেকে সরিয়ে রাখবেন কিনা তা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। Allatt সব শুনেছিল, কিন্তু তিনি কিছুই বলতে পারছিলেন না। পরবর্তীতে Allatt এর সাথে কথা বলে জানা যায়- “Locked-in syndrome is like being buried alive. You can think, you can feel, you can hear, but you can communicate absolutely nothing.”

তথ্যসুত্রঃ

  1. The Essentials of Forensic Medicine and Toxicology(34th edition)- Dr. K. S. Narayan Reddy
  2. https://wfneurology.org/apparent-death-and-coma-in-the-18th-century
  3. https://www.medicalnewstoday.com/articles/317645#Confirming-death-beyond-doubt

প্লাটফর্ম একাডেমিক/ধ্রুব জ্যোতি মন্ডল
আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ, নোয়াখালি।
সেশন: ২০১৭-১৮

Leave a Reply