Blog

জসিমের Dying declaration এবং Dying deposition

সপ্তাহ জুড়ে আইটেম দিয়ে প্রভা অনেক ক্লান্ত। তাই শুক্রবার দিনটি তার কাছে ঈদের দিন মনে হচ্ছে। প্রভা ঠিক করলো তার ছোট বোন রাত্রিকে নিয়ে একটি বাংলা সিনেমা দেখবে। অনেক হাসাহাসি করবে দুই বোন মিলে। ‘গরীবের সংসার’ সিনেমাটি ঠিক হলো দেখার জন্য। দুই বোন পপকর্ন নিয়ে বসলো আর সিনেমা দেখতে দেখতে হাসিতে লুটিয়ে পড়লো। সিনেমার এক পর্যায়ে মৃতপ্রায় নায়ক জসিম বললো, “আমার মৃত্যুর জন্য শাবানা দায়ী, ও আমার খাবারের সাথে বিষ মিশিয়ে দিয়েছে।” হাসপাতালে ডাক্তার জসিমের কথাগুলো রেকর্ড করে রাখছিলেন। এরপর সিনেমা চলতে থাকলো।

সিনেমা শেষ হওয়ার পর,
🔹রাত্রি: আপু, মুভিটা দেখে অনেক মজা পেলাম, খুব হাসির তাই না বলো?
🔸প্রভা: হ্যাঁ রে, আমার সারা সপ্তাহের ক্লান্তি দূর করে দিলো। এবার আমাকে একটা কথা বলতো, সিনেমায় দেখলিনা জসিম মৃত্যুর আগে তাকে শাবানা কিভাবে মারার চেষ্টা করেছে তা বর্ণনা করেছে আর ডাক্তার তা লিখে রেকর্ড করেছে, এটাকে কি বলে জানিস?
🔹রাত্রি: তা তো জানি না। তুমি বলো না আপু।
🔸প্রভা: এটাকে বলে Dying declaration।
🔹রাত্রি: আমি আজ প্রথম শুনলাম এটা। আমাকে একটু বুঝিয়ে বলো না।
🔸প্রভা: Dying declaration is a written or oral statement of a person, who is dying as a result of some unlawful act, relating to the material facts of cause of his death or bearing on the circumstances. মানে হলো এটা কোন ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ বা পরিস্থিতি সম্পর্কিত লিখিত বা মৌখিক বক্তব্য যিনি কোন বেআইনী কাজের ফলে মারা যাচ্ছেন।
🔹রাত্রি: ও আচ্ছা, এটাতো তাহলে আইনী বিষয়, মেডিকেল শিক্ষার্থীদের জন্য এটা কি গুরুত্বপূর্ণ?
🔸প্রভা: তা তো অবশ্যই, ম্যাজিস্ট্রেটের অনুপস্থিতিতে একজন ডাক্তার দুইজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে মৃতপ্রায় ব্যক্তির জবানবন্দি নিতে পারেন।
🔹রাত্রি: তাহলে ডাক্তার ছাড়া আর কে কে Dying declaration নিতে পারে?
🔸প্রভা: ডাক্তার ছাড়া ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, গ্রামের প্রধান ব্যক্তি নিতে পারবে।
🔹রাত্রি: বুঝতে পেরেছি। Dying declaration নেয়ার ক্ষেত্রে একজন ডাক্তারের কাজ কি?
🔸প্রভা: ডাক্তারের ভূমিকা হল-
১. ম্যাজিস্ট্রেটকে জানাতে হবে।
২. রোগীর মানসিক সুস্থতা প্রমাণ করতে হবে।
৩. Dying declaration রেকর্ড করতে হবে।
🔹রাত্রি: আচ্ছা আপু Dying declaration রেকর্ড কিভাবে করা হয়?
🔸প্রভা: ব্যাপারটা তোকে বুঝিয়ে বলি। Dying declaration নেয়ার প্রসেস হলো-
১. যদি সময় থাকে তাহলে রেকর্ড করার জন্য ম্যাজিস্ট্রেটকে জানাতে হবে।
২. যদি রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়, সেক্ষেত্রে ডাক্তার দুজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে রেকর্ড করবেন।
৩. রেকর্ড করার পূর্বে রোগীর মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে হবে। এটাকে Compos mentis বলে। মানসিক অসুস্থ ব্যক্তির বিবৃতি গ্রহণযোগ্য হবে না।
৪. রোগী যেভাবে বর্ণনা করবে ঠিক সেভাবেই রেকর্ড করতে হবে। শব্দ বা বাক্যাংশের কোনরূপ পরিবর্তন করা যাবে না।
৫. ভিকটিমকে কোনরকম বাহ্যিক প্রভাব ছাড়াই বক্তব্য দেয়ার সুযোগ দিতে হবে।
৬. ভিকটিম যদি কথা বলতে না পারে, সে ক্ষেত্রে ইশারা-ইঙ্গিত এর মাধ্যমে বক্তব্য প্রদান করতে পারে। এটাকে বলে Verbal statement।
৭. রেকর্ড করার পর ভিকটিমের সামনে পুরোটা পড়ে শোনাতে হবে।
৮. এরপর ভিকটিমের স্বাক্ষর বা আঙ্গুলের ছাপ নিতে হবে।
৯. ডাক্তার এবং সাক্ষীদেরও স্বাক্ষর নেওয়া হবে।
১০. এরপর সিলযুক্ত কভারে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে প্রেরণ করতে হবে।
🔹রাত্রি: সবই তো বুঝলাম, কিন্তু ভিকটিম যদি মিথ্যা কথা বলে? কাউকে যদি অন্যায়ভাবে ফাসিয়ে দেয়?
🔸প্রভা: ধরে নেয়া হয় যে, মৃত্যুর পূর্বে কোন ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলে না। এজন্যই Dying declaration অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
🔹রাত্রি: আচ্ছা, তাহলে Dying declaration কি মৃত্যুর আগে কার্যকর হবে নাকি মৃত্যুর পরে?
🔸প্রভা: মৃত্যুর পরে এটি কার্যকর হবে এবং অপরাধী শনাক্ত করতে সহায়তা করবে। যদি ভিকটিম মারা না যায় সেক্ষেত্রে এটি কার্যকর হবে না।
🔹রাত্রি: বুঝলাম। এগুলো সব তোমাদের জানতে হয় আপু?
🔸প্রভা: হ্যাঁ রে, তোকে আরেকটা ব্যাপার বলি। Dying declaration এর মতো আরেকটা জিনিস আছে। সেটা হলো Dying deposition।
🔹রাত্রি: তাই আপু? তাহলে এ দুটোর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই?
🔸প্রভা: তা তো আছেই, বলছি তোকে।
১. Dying declaration ডাক্তার বা ম্যাজিস্ট্রেট নিতে পারেন। কিন্তু Dying deposition শুধুমাত্র ম্যাজিস্ট্রেট নিতে পারবেন।
২. Dying declaration এর ক্ষেত্রে শপথ নেয়ার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু Dying deposition এর ক্ষেত্রে শপথ নেয়া অত্যাবশ্যক।
৩. অভিযুক্ত বা তার আইনজীবীকে Dying deposition এর সময় অবশ্যই উপস্থিত থাকতে হবে। Dying declaration এর সময় উপস্থিত না থাকলেও হবে।
৪. Dying deposition এর ক্ষেত্রে cross-examination এর সুযোগ রয়েছে। Dying declaration এ তা নেই।
৫. ভিকটিম মারা গেলে Dying declaration কার্যকর হবে না। কিন্তু Dying deposition এর ক্ষেত্রে ভিকটিম জীবিত থাকলেও কার্যকর হবে।
৬. Dying declaration এর ক্ষেত্রে আরো তদন্ত করার প্রয়োজন হয়। কিন্তু Dying deposition এর ক্ষেত্রে তদন্তের প্রয়োজন হয় না যেহেতু ম্যাজিস্ট্রেট এবং আইনজীবীরা উপস্থিত থাকেন।

🔹রাত্রি: তাহলে তো Dying declaration এর তুলনায় Dying deposition বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তাই না?
🔸প্রভা: হ্যাঁ, কেননা Dying deposition এর সময় ম্যাজিস্ট্রেট, অভিযুক্ত বা আইনজীবী উপস্থিত থাকেন।
🔹রাত্রি: বুঝেছি। সুযোগ পেয়ে তুমি ভালোই জ্ঞান চর্চা করে নিলে আপু।
🔸প্রভা: আরে শোন না, একটা কথা তো বলাই হলো না। Dying deposition কে bed side court ও বলা হয়।
🔹রাত্রি: অনেক হয়েছে, এবার তো আমাকে যেতে দাও।
🔸প্রভা: তোকে কত কিছু শিখালাম তার কোন দামই দিচ্ছিস না। দিনদিন বেয়াদব হয়ে যাচ্ছিস। যা এখান থেকে।
🔹রাত্রি: উফফফ, তুমি পারোও আপু।

এই বলে রাত্রি প্রভার রুম থেকে বের হয়ে গেলো। মনে মনে প্রভা অনেক খুশি। জসিমের জন্য কালকের আইটেমের পড়াটা ঝালিয়ে নিতে পারলো।

Reference:
Dr.K.S. Narayan Reddy & Dr.O.P.Murty, The Essentials of Forensic Medicine and Toxicology, 34th edition, Jaypee, 2017

Platform Academia/ Tanima Azad
MH Samorita Medical College
Session: 2017-18

Leave a Reply