Blog

পানিই যখন বিষ

⭕ Aquagenic Urticaria-

পানি যখন অ্যালার্জির কারণ। এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে আমাদের যে কয়েকটি অত্যাবশ্যকীয় জিনিস প্রয়োজন তার মধ্যে পানি অন্যতম, এজন্যই বলা হয় পানির অপর নাম জীবন। কিন্তু অল্প কিছু সংখ্যক মানুষ রয়েছে যাদের আছে পানিতে অ্যালার্জি জনিত সমস্যা। তারা মূলত ” Aquagenic Urticaria/ Water Allergy ” নামক বিরল রোগে আক্রান্ত। পৃথিবীতে এই রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১০০ জনেরও কম। আক্রান্ত রোগী পানির প্রতি অ্যালার্জিক, এমনকি নিজের কান্না বা ঘামের প্রতিও। সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক হলে এই রোগের উপসর্গ দেখা যায় দেহে, তবে একদম কম বয়সে আক্রান্ত হবার নজিরও আছে।

⭕এটি মূলত কি?

Aquagenic Urticaria আসলে একধরনের অ্যালার্জি। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ত্বক যখন পানির সংস্পর্শে আসে, তখন খুব দ্রুত তার দেহে লাল-লাল বিন্দু দেখা যায়। পানির তাপমাত্রা বা উৎস এতে কোনো প্রভাব রাখে না। সাধারণত মেয়েরাই বেশি আক্রান্ত হয়। উপসর্গগুলো সাধারণত দেখা যায় বয়ঃসন্ধিকালে। তবে বাচ্চাদের আক্রান্ত হওয়ার নজির ও আছে। আক্রান্তদের মধ্যে অনেকেই জানান- তারা শরীরে চুলকানিও বোধ করেন। রোগে আক্রান্ত অনেক ব্যাক্তির জন্য পানি পানও বিপদজনক। তারা সাধারণত দুধ বা কোমলপানীয় পান করে থাকেন।

⭕ আবিষ্কারঃ

১৯৬৪ সালে Aquagenic Urticaria এর কথা প্রথম বর্ণনা করেন শেলী এবং রনসলি। ১৯৬৩ সালে এক পনেরো বছর বয়সী কিশোরী পানিতে স্কি করার পর অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে বিভিন্ন পরীক্ষার করে তার দেহে এই রোগের অস্তিত্ব সর্বপ্রথম পাওয়া যায়।

⭕ কারণঃ

এই রোগের সঠিক কারণ যদিও এখনো জানা যায়নি তবে এই নিয়ে কিছু প্রস্তাবিত মতামত রয়েছে।একদল গবেষকদের মতে এটির জন্য সরাসরি পানি দায়ী নয়। পানির কিছু উপাদান আমাদের ত্বকের Stratum Corneum বা Sebum এর সংস্পর্শে কিছু Toxic বস্তু তৈরি করে যা Absorption এর ফলে Perifollicular mast cell degranulation হয় এবং Histamin রিলিজ হয়।
আরেকদল গবেষকের দাবী যে আমাদের Epidermal layer এর কিছু Antigen পানির সংস্পর্শে আসলে Diffusion মাধ্যমে Dermis এ চলে যায় ফলে মাস্ট সেল হিস্টামিন নিঃসরণ করে।
আবার অনেকেই দাবী করেন যে হঠাৎ করে Osmotic pressure এর তারতম্যের কারণে এটি হয়ে থাকে।

⭕ উপসর্গঃ

উপসর্গগুলো মূলত ত্বক-সম্পর্কিত, সাধারণত
১. ত্বক লাল হয়ে যাওয়া
২. জ্বলা-পোড়ার অনুভূতি
৩. ক্ষত (Approximately 1-3 mm sized welts)
৪. ফুলে ওঠা
৫. প্রদাহ
পানির সংস্পর্শে আসলেই উপসর্গ প্রকাশ পায় তবে যদি তারপর পানির স্পর্শ ত্যাগ করা হয় তবে ৩০-৬০ মিনিটের মধ্যে উপসর্গ দূর হয়ে যায়।

Figure : Redness due to Aquagenic Urticaria

⭕ চিকিৎসাঃ

দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি- এখন পর্যন্ত Aquagenic Urticaria এর কোনো চিকিৎসা আবিষ্কার হয়নি। তবে উপসর্গগুলো দূর করার জন্য নানা ওষুধের সাহায্য নেওয়া হয়।

যেমন-

  1. Anti-Histamine
  2. Photo Therapy/ Ultraviolet light therapy
  3. এপিপেন (Epinephrine injection)

২০১৬ সালে রোরি এবং জিরের নামক দুই বিজ্ঞানী দাবী করেন Omalizumab ব্যবহার করে Aquagenic Urticaria এর এক রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়েছেন।

⭕ Aquagenic Urticaria or Water Allergy বা পানিতে অ্যালার্জি বিরল একটি রোগ। বিরল হওয়ায় এই নিয়ে গবেষণা যেমন হয়েছে কম, তেমনি সুযোগও খুব একটা আসেনি। এছাড়াও আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কম হওয়ায় চিকিৎসা পদ্ধতির Trial এর সুযোগও কম। তারপরেও আশা করা যায়, অদূর ভবিষ্যতে এর সফল একটি চিকিৎসা প্রণালী আমরা পাব।

Rahima Akhter Oishye
ShSMC (18-19)

প্ল্যাটফর্ম একাডেমিক/ Mehnaj Shaolin Sristy

Leave a Reply