Blog

Urine Routine Microscopic Examination||পর্ব -২

খালি চোখে প্রস্রাব পরীক্ষার রকমভেদ।

প্রথমপর্বে আমরা urine স্যাম্পল সঠিকভাবে কিভাবে সংগ্রহ করতে হয় সেটা জেনেছিলাম। আজকে আমরা জানব যে এই স্যাম্পল থেকে আমরা কি কি পরীক্ষা করতে পারি।

আমরা জানি যে, আমরা যা খাই, যা পান করি তা শরীর যেটুকু প্রয়োজন তা নিজের জন্য রেখে বাকি সবগুলো বর্জ্য পদার্থ হিসেবে kidney এবং urinary system দিয়ে urine হিসেবে বাইরে বের করে দেয়। তাই এই urine পরীক্ষা করে আমরা কিন্তু আমাদের শরীরের সার্বিক কর্মদক্ষতা সম্পর্কেও ধারনা করতে পারি।

সাধারণত আমরা ৩ ধরনের পরীক্ষা করি। প্রথমে খালি চোখে প্রস্রাবটাকে দেখা হয়, যাকে আমরা নাম দেই macroscopic examination। এখানে আমরা প্রস্রাবের বর্ণ (color), গন্ধ (smell), কোন বুদবুদ আছে কি না, কোন তলানি পড়েছে কি না – এসব দেখি। তারপর এই স্যাম্পলে আমরা একটা stick দেই যাকে, আমরা বলি Urine dipstick test। এর মাধ্যমে আমরা কিছু chemical test করে প্রস্রাবের pH, Nitrites, প্রস্রাবে glucose, protein, Red blood cell, White blood cell, specific gravity, bilirubin, ketones এগুলোর উপস্থিতি নিরূপন করি। এরপর সেই স্যাম্পলকে আমরা নেই অনুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে, যাকে বলে Microscopic examination। এখানে আমরা বিভিন্ন ধরণের cells আমরা দেখতে পাই যেমন RBC, WHC, eosinophil সাথে বিভিন্ন ধরনের casts ও দেখা যায়। এর সাথে সাথে আমরা এই স্যাম্পল দিয়ে Urine culture টাও করে ফেলতে পারি।

আজকে আমরা খালি চোখে দেখে কি কি ধারণা পেতে পারি সে নিয়ে একটু আলোচনা করব। 

Figure : A historical perspective of the color of urine as depicted in Epiphanie medicorum by Ulrich Pinder in 1506.


প্রথমে আসে প্রস্রাবের রঙ। দিন যতই যেতে থাকে সিম্পল জিনিস থেকে তৈরি হতে থাকে সকল complexity হয়ে হয়ে আজকের বর্তমান অবস্থা যেখানে ২০ এর অধিক রকমের প্রস্রাবের রঙের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে!!

প্রথম প্রশ্নই আসে যে, প্রস্রাবের নরমাল রঙ কি? বলি আমরা হালকা/ ফ্যাকাসে হলুদ থেকে আরেকটু ঘন amber coloured (ট্রাফিক সিগন্যালে যে হলুদ বাতি ব্যবহৃত হয়)। এরকম রংএর কারণ হচ্ছে, Urochrome যা আসে bilirubin degradation থেকে যা urobilin নামে urine এ থাকে এবং এরকম রঙ করে। অনেক সময় পানি কম খেলে বা অতিরিক্ত গরমে পানিশুন্যতা থেকে প্রস্রাবের রঙ বেশ হলুদ হয়- যা আবার পরিমাণমত পানি পান করলে ঠিক হয়ে যায়।

প্রস্রাবের কোন রঙ নাই মানে খুব clear, Transparent urine color। এরকম হলে আমরা ধারণা করি যে, রোগী প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতেছে। আমরা জানি, urinary system এর একটা প্রধান কাজ হচ্ছে urine concentrate করা। বেশি clear বা একেবারেই স্বচ্ছ urine অনেকসময় এই concentrating abilityর দুর্বলতার কারণেও হতে পারে।

প্রস্রাবের রঙ যদি লাল হয় তাহলে প্রথমেই আমাদের বুঝতে হবে, রঙ পরিবর্তনটা কি প্রস্রাবের রাস্তায় রক্তক্ষরণের (hematuria) কারণে হয়েছে নাকি নানাবিধ কারণে রঙ লাল হয়েছে। প্রস্রাবের রাস্তায় রক্তক্ষরণের নানাবিধ কারণ আছে। এক্ষেত্রে আমরা রোগীদের জিজ্ঞাসা করি যে, এর সাথে কি ব্যথা হয় কি না? যদি ব্যথা হয় তবে আমরা ধরে নেই যে, urinary stone disease এর কারণে এটা হতে পারে। কোন আঘাতের পর urinary system যদি আঘাতপ্রাপ্ত হয় তবেও hematuria হতে পারে।

Fig : Urine Sample of Hematuria patient.

  আর যদি ব্যথা ছাড়া hematuria হয় তবে আমাদের মাথায় প্রথবেই আসবে urinary system এর কোন tumor অথবা Tuberculosis। রক্তের উৎপত্তিস্থল নিরূপনের জন্য আমরা জিজ্ঞাসা করি যে, রক্ত যে পড়ে সেটা কি প্রস্রাবের শুরুর দিকে পড়ে নাকি শেষের দিকে নাকি পুরোটা সময় ধরেই পরে। শুরুর দিকে হলে আমরা ধারণা করি যে, রক্তের source external sphincter এর পরে অর্থাৎ urethra তে। যদি প্রস্রাবের শেষ সময় রক্ত যায় তবে ধরে নিতে হবে যে সমস্যা হচ্ছে bladder neck or prostate এ। আর পুরোটা সময় জুড়ে রক্ত গেলে সমস্যা bladder এ অথবা এর উপরের দিকে।

Fig : Causes of Hematuria.

Glomerulonephritis এও এরকম hematuria হয়। বিভিন রক্তের রোগ যেমন, bleeding diathesis, anti coagulants খেলেও হতে পারে।

প্রস্রাবের রঙ যদি লাল হয় তবে আমরা ধারণা করি যে, হয়ত এখানে hemoglobin, porphyrin অথবা myoglobin নামক শরীরের ভেতরের রঞ্জক পদার্থগুলো নিঃসরণ হচ্ছে।

তবে এগুলো ছাড়াও প্রস্রাবে যদি haem চলে আসে তবেও রঙ লাল হতে পারে একে আমরা বলি hemoglobiuria। যেসব সৈনিকেরা অনেকক্ষন ধরে march করে তারা পানিশুন্যতায় ভোগে তাদের প্রস্রাবে haem এসে লাল রঙ করে যাকে আমরা বলি march hemoglobinuria। এছাড়াও সিরিয়াস accident এর পর প্রস্রাবের রঙ লাল নিয়ে আসে অনেকে। তখন আমরা ধারণা করি যে, accident এর কারণে মাংসপেশী ধ্বংস হচ্ছে (Rhabdomyolysis) যার ফলশ্রুতিতে প্রস্রাবে Myoglobin আসতেছে, যেটাকে আমরা বলি যে উনার Crush syndrome develop করেছে।

অথবা hemolytic anemia তে লোহিত রক্তকণিকা ভেঙ্গে যায় (hemolysis) যার ফলস্বরূপ রক্তে hemoglobin আসে এবং প্রস্রাবের রঙ কাল হয়ে যায়। Sickle cell anemia, Thalassemia, Transfusion reaction কিংবা Glucose 6 phosphate dehydrogenase deficiency এর আওতায় পরবে।

এছাড়াও Glomerulonephritis, Malaria, রক্ত দেয়ার পর যে reaction হয় তাতেও প্রস্রাবের রঙের এমন পরিবর্তন হতে পারে। সাপের কামরের পরেও প্রস্রাবের রঙ লাল হতে পারে।

অতিরিক্ত পরিমাণে পালং বা beet root জাতীয় খাবার এমনকি গাজর, জাম খেলে প্রস্রাবের রঙ লাল হতে পারে। beet root থেকে betalalin pigment ক্ষরণ হয় যার কারণে রঙ লাল হয়।

বাংলাদেশে অনেক পান খান, অনেকে আবার পানের সাথে খয়ের খান। এগুলো অত্যধিক খেলেও প্রস্রাবের রঙ পরিবর্তন হতে পারে।

মেয়েদের ক্ষেত্রে অনেকসময় মাসিকের সময় যাওয়া রক্ত প্রস্রাবের সাথে মিশে লাল রঙ বানিয়ে ফেলে। কেউ যদি প্রস্রাবে একটু লাল রঙ মিশিয়ে নিয়ে আসে তাহলেও কিন্তু প্রস্রাবের রঙ লাল হবে- এমন আজগুবি মানুষ পাওয়া খুব একটা দুষ্কর না।

বাদামী রঙের প্রস্রাব সার্জারির ক্ষেত্রে খুব গুরুত্ব বহন করে। এটা সাধারণত হয় circulationএ bilirubin এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় যা নির্দেশ করে উনি Obstructive jaundice রোগে ভুগছেন হয়ত।

Fig : Urine sample of Obstructive jaundice.

Hemolytic anemiaর রোগী অথবা বারে বারে শরীরে রক্ত দেয়া হয়েছে এমন রোগী – এদের ক্ষেত্রে প্রস্রাবের lining epithelium বারে বারে hemoglobin এর সংস্পর্শে আসে যার ফলে কিডনীর proximal tubule এ Hemosiderin deposit হয় এবং কিডনিকে অনেক সময় ধ্বংস করে ফেলে যাকে আমরা বলি hemosiderosis. আর এই hemosiderin এর কারণের প্রস্রাবের রঙ হয়ে যায় বাদামী।

কিছু কিছু antibiotic যেমন Nitrofurantoin কিংবা মেট্রোনিডাজল অনেকদিন ধরে খেলেও প্রস্রাবের রঙ বাদামী হতে পারে।

অনেক সময় রোগীরা এসে বলে যে তার প্রস্রাবের রঙ কমলা রঙের হচ্ছে কয়দিন ধরে। ইতিহাস নিয়ে দেখা যায় যে উনার যক্ষা (pulmonary tuberculosis) রোগ হয়েছে এবং এর জন্য উনি Rifampicin এবং Isoniazid খাচ্ছেন। এই ঔষধগুলো প্রস্রাব সহ শরীরের অন্যান্য secretion কে discolor করে ফেলে।

কালো রঙের প্রস্রাব সাধারণত খুব একটা পাওয়া যায় না। অনেক সময় urease producing organism যেমন Proteus যা প্রস্রাবকে ক্ষারীয় করে এমনতর রোগী যদি alpha methyldopa জাতীয় ঔষধ খেয়ে থাকেন তবে তা Oxidized হয়ে পরবর্তীতে melanin উৎপন্ন করে যার রঙ আমরা জানি যে কাল এবং প্রস্রাবের রঙ্গও হয় কালো। ১৮২ সালে Thomas Fawdington, Ocular melanoma র একজন রোগীর প্রস্রাবের রঙ কালো বলে লিপিবদ্ধ করেছিলেন। Malignant melanoma তে প্রস্রাবের রঙ কালো হতে পারে তবে এর কারণ এখনো জানা যায় নি। তবে ধারণা করা হয় যে, এই রোগে অত্যধিক পরিমাণে melanoma cell destruction হয় যার ফলে melanin তৈরি হয়।

Fig : Urine sample of malignant melanoma patient.

অনেক সময় আয়রন যদি intramuscularly inject করা হয় তাহলে রঙ কালো হতে পারে।

অনেক সময় রোগীরা দুধের মত সাদা রঙের প্রস্রাব নিয়ে আসতে পারে। আমরা জানি যে, লসিকা গ্রন্থি (lymph node) থেকে নিঃসৃত লসিকা (lymph) এর রঙ সাদা। তাই আমরা ধারণা করি যে, উনি chyluria অথবা কোন ধরনের lymphatic fistula হয়ত ভুগছেন। গোদ রোগ বা Filariasis এ এমন হতে পারে। প্রস্রাবে albumin গেলেও রঙ সাদা হতে পারে (ডিমের সাদা অংশ যেখানে প্রচুর albumin থাকে)

অনেক সময় প্রস্রাবে pus হলেও সাদা রঙের হয়ে যায়। Urinary tuberculosis, Lipiduria এগুলোতেও সাদা হতে পারে। এমনকি Hypercalciuria, Hyperoxaluria অথবা phosphaturia তেও প্রস্রাবের রঙ সাদা হতে পারে।

প্রস্রাবের রঙ নীল!!! সাধারণত পাওয়া যায় না কারণ blue pigment প্রস্রাবের Urochrome এর সাথে মিলে একটা সবুজ রঙ তৈরি করে ফেলে। তবে পাওয়া যাবে না তাতো না। এরকম হলে আমরা সাধারণত মনে করি এর জন্য দায়ী biliverdin অথবা prophyrin। Pseudomonas দিয়ে যদি প্রস্রাবে infection হয় তাহলে অনেক সময় নীল রঙের প্রস্রাব হতে পারে। কিছু কিছু ঔষধের কারণেও রঙ নীল হতে পারে যেমন – Methylene blue, Metoclopramide, Amitryptyline, Indomethacin। Blue diaper syndrome নামে একটা জন্মগত রোগ আছে যেখানে Hypercalcemia, nephrocalcinosis এর সাথে Indicanuria (blue urine) নিয়ে বাচ্চা জন্ম নেয়।

Fig : Blue diaper syndrome.

রঙ নিয়ে রঙ তামশার পরে আসুন একটু প্রস্রাবের গন্ধ নিয়ে discuss করি। Benjamin Franklin সাহেব লিখেছিলেন যে, Asparagus খেলে নাকি বিদঘুটে গন্ধ হয় প্রস্রাবের। যাক বাবা আমাদের দেশে Asparagusও নাই তবে বিদঘুটে গন্ধ নাই তা বলা যাবে না। তবে প্রস্রাবের কিন্তু একটা গন্ধ আছে তবে এটা এতো তীব্র না বরং অনেকটা aromatic। এই গন্ধের কারণ হচ্ছে প্রস্রাবে phenylic, taurylic and demoluric acid এর উপস্থিতি।

তবে প্রস্রাব যদি অনেক সময় room temperature এ রেখে দেয়া হয় অথবা retention of urine এর রোগী যখন প্রস্রাব করে তখন প্রস্রাবের গন্ধ হয় দুর্গন্ধ- আমরা তাকে বলি Ammonia odor। এটা bacteria fermentation এর কারণে হয়।

কিছু কিছু common রোগে প্রস্রাবের গন্ধ পরিবর্তিত হয়। যেমন যদি ফলের মত yummy odor হয় তবে ধরে নিতে হবে চিনির পরিমাণ বেড়ে গেছে মানে Diabetic ketoacidosis হতে পারে। বাচ্চাদের এরকম অনেকসময় হয় যাকে আমরা নাম দিয়েছি Maple syrup urine disease।

অনেক সময় প্রস্রাব দিয়ে পায়খানার মতন বিদঘুটে গন্ধ আসতে পারে। তখন ধারণা করতে হবে যে উনার হয়ত Vesico- intestinal fistula তার মানে প্রস্রাবের লাইন আর পায়খানার লাইন মিলে মিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। এছাড়াও phenylketonuria তে Musty odor, Cystine decomposition এ Sulfur odor পাওয়া যায়।

এই নানা রকমের গন্ধের জন্য কিন্তু কিছু inborn errors of metabolism দায়ী। যেমন Trimethylaminuria তে যেখানে choline metabolism হবে trimethylamine তৈরি হয় যেখানে urine এর গন্ধ হয় মাছের আঁশটে।

স্বাদ – ইয়াক। প্রস্রাব কেউ খায় নাকি!!! হয়ত না তবে আধুনিক সব testing facilities এর আগে ডায়াবেটিস এর রোগীদের diagnosis করার জন্য চিকিৎসকরা রোগীর প্রস্রাব চেখে দেখতেন!!! ডায়াবেটিস রোগীদের urine কে বলে honey urine এবং শুশ্রুত খেয়াল করে দেখেন যে পিপড়ারা খুব লাইন ধরে এসব প্রস্রাবের দিকে – অনেক মিষ্ট মিষ্ট স্বাদ কি না!! এমনকি urine therapy বলে একটা কথা আছে- অনেকে বিশ্বাস করে যে নিজের মূত্র পান করলে অনেক রোগ নিরাময় হয়। ভারতে ৫ম প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই, নিতিন গাডকারি থেকে শুরু করে বেস্ট সেলিং ফিমেইল সিংগার ম্যাডোনা কিংবা অভিনেত্রী সারাহ মাইলস – তারাও কিন্তু সেই একই লাইনের।

আসলে মেডিকেল সায়েন্সের বিশালতা এমন যে, যেকোন বিষয় লিখতে গেলে তার শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই। বিশাল জ্ঞানের মহাসমুদ্র থেকে অল্পকিছু নিয়ে আজকে আলোচনা করলাম। কোন correction থাকলে বা আরও কিছু যোগ করার থাকলে নিঃশন্দেহে যোগ করবে।

পরবর্তী পর্বে কিছু chemical test নিয়ে আলোচনা করার প্রয়াস করব।

অনুজ কান্তি দাশ

সহকারি রেজিস্ট্রার (সার্জারি)

সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট 

খুমেক – ১৩

Reference: 

1. Patrick J et al. The color of urine: then and now- a comprehensive review of the literature with emphasis on intracytoplasmic pigments encountered in urinary cytology. Journal of American Society of Cytopathology; 9-1. 2020; p9-19

2. Williams NS, O’Connell PR, McCaskie AW. Bailey and Love’s Short Practise of Surgery. 27thEdition.NewYok: CRC Press; 2018. Chapter 75, Urinary symptoms and investigations; p 1375-76.

3. McAninch JW, Lue TF. Smith & Tanagho’s General Urology. 18th edition. NewYork: McGraw-Hill; 2013. Chapter 5, Urologic Laboratory Examination

Leave a Reply