Blog

A History of Cholera and The Legacy of Our Scientist

কমিউনিটি মেডিসিন গাইডেই বোধহয় পড়েছিলাম, ফাদার অব পাবলিক হেলথ- কলেরা।

তখন ভাবছিলাম কাউকে জিজ্ঞেস করবো যে একটা রোগ কিভাবে পাবলিক হেলথের জনক হয়। সারাজীবন দেখে আসছি কোন না কোন মানবসন্তানই এই উপমা নেয়ার যোগ্যতা রাখেন। তথ্যটা সঠিক কিনা জানিনা। কিন্তু কলেরার পেছনের ইতিহাসটা খুব সুন্দর এবং খুব করুণ।

ইংল্যান্ডের বিজ্ঞানী জন স্নো (John Snow) রোগতত্ত্বের পুরোনো ‘Miasma theory’ কে উড়িয়ে দিলেন এই কলেরার উপর ভর করেই। খুলে গেলো পাবলিক হেলথ নামক এক অসাধারণ শাখার দ্বার। সাইন্সের আরেকটি বিজয় নিশান উড়তে শুরু করলো।

উনিশ শতকের মাঝামঝি সময়ে লন্ডনে কলেরা মহামারী দেখা দেয়। মড়ক লাগলো। ওলাবিবির প্রকোপে লন্ডনের হাসপাতালে যমদূতের কঠিন ব্যস্ততা। তখন আবার চলছে ‘Miasma theory’র যুগ। এই তত্ত্বানুসারে- কলেরা, প্লেগ এসব রোগ হয় খারাপ বাতাসের কারণে। ম্যালেরিয়া শব্দটাও এ থেকে উদ্ভূত।

সেসময় শার্লক হোমসের মতন হালকা গোয়েন্দাগিরি করে জন স্নো বের করলেন যে, বাতাস নয়; বরং দূষিত পানির কারনে কলেরা হচ্ছে। উনি হাসপাতাল আর মর্গের রেকর্ড ঘেঁটে খুঁজে বের করলেন কোন কোন জায়গায় এর প্রকোপ বেশি হচ্ছে। দেখা গেল লন্ডনের ব্রডওয়ে স্ট্রিট পাম্পের চারদিকে ক্লাস্টার বেশি। দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে তিনি ধারণা করলেন, এই পাম্পের মাধ্যমেই কোনভাবে দূষিত পানি কলেরা ছড়াচ্ছে। কর্তৃপক্ষকে বুঝাতে সক্ষম হলে পাম্পটি বন্ধ করে দেয়া হয়। লন্ডনের সেসময়কার কলেরা মহামারী তার কারণে থেমে যায়।

John Snow কে এখন Father of Modern Epidemiology বলা হয়। মূলত লন্ডনের সেই মহামারীই পাবলিক হেলথের ভিত গড়ে দেয়। মেডিকেল সাইন্সের ধ্যান ধারণারও অনেক হিসাব নিকাশ বদলে যায়।

তবে John Snow এর সাথে আরেকজনের নাম এখানে চলে আসে। তিনি পাদ্রী Henry Whitehead। Snow এর theory ‘মনুষ্যবর্জ্যের মাধ্যমে পানি দূষিত হয়ে কলেরা ছড়ায়’ এটা বিশ্বাস করে তিনিও মাঠে নেমে পড়েন সেসময়।

এরপর আধুনিক Bacteriology এর জনক এনাদার গ্রেট জার্মান Robert Koch Allen দৃশ্যপটে। প্রথমে মিশরে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে পরে ইন্ডিয়া এসে বম্বেতে তিনি কলেরা রোগের কালপ্রিট V. cholera কে শণাক্ত করতে পারলেন। ১৯০৫ সালে নোবেল পান। তবে কলেরা সম্পর্কিত কারনে না। তিনি নোবেল পান- for his investigations and discoveries in relation to tuberculosis।

Fig : Vibrio cholera.

কিন্ত তখনো এই ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে ঠিক কিভাবে কলেরা হচ্ছে তা কারো জানা ছিলনা। Koch এর প্রায় ৭৫ বছর পর দৃশ্যপটে এবার বাঙ্গালী বিজ্ঞানী শম্ভূনাথ দে ( এস এন দে)। পঞ্চাশের দশকে তিনি আবিষ্কার করলেন যে V. cholera একটা enterotoxin ক্ষরণ করে যেটাকে choleragen (cholera toxin) বলে।
This toxin is specific for the cells of intestinal mucosa এবং কিভাবে G-protein mechanism এর মাধ্যমে dehydration করে এর ব্যাখ্যাও দিলেন।

এখানে বলে রাখি, ১৯৯৪ সালের নোবেল দেয়া হয় বিজ্ঞানী Alfred G. Gilman আর Martin Rodbell কে for their discovery of “G-proteins and the role of these proteins in signal transduction in cells”। সবকিছু ইন্টার-রিলেটেড, না?

দুঃখের বিষয় শম্ভুনাথের কারনে anti-toxin process আলাদা গতি পেলেও তিনি তার স্বীকৃতি পাননি। Joshua Lidderberg (Bacterial conjugation আবিষ্কারের জন্যে নোবেল প্রাপ্তি) বারবার নমিনেট করলেও শম্ভূনাথকে নোবেল দেয়া হয়নি। এমনকি ডা. সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের (Testtube Baby প্রসঙ্গ) মতন উনাকেও নিজের দেশ ( ভারত) উপযুক্ত সম্মান দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

ওকে! ঘটনার মোড় এবার ওরস্যালাইনের দিকে। কলেরা মৃত্যুর প্রধান কারণ ডায়রিয়া। শরীরে পানিশূন্যতা। ডায়রিয়া কিভাবে হচ্ছে তার মেকানিজম বলে দিলেন ডা. শম্ভূনাথ। কিন্তু এই পানিশূন্যতাকে ঠেকানোর কাজ তো করতে হবে।

Fig : Dr. Sambhu Nath De.

দৃশ্যপটে আরও কিছু বিজ্ঞানী। ষাটের দশকে Robert K Crane আবিষ্কার করলেন Sodium-Glucose Co-transporter and its role in intestinal glucose absorption। একারণে জানা গেল যে, oral rehydration করলে পানিশূন্যতাকে কোনভাবে ট্র্যাকল করা যাবে।
সেসময়ে ঢাকায় এবং কলকাতায় কাজ করে বিজ্ঞানী Norbert Hirschhorn and Nathaniel F. Pierce দেখালেন যে- কলেরা dehydration সময়ে মানুষকে গ্লুকোজ-লবণ-পানি দিলে পানিশূন্যতা রোধ করা সম্ভব।
প্রায় একই সময়ে, David R. Nalin and Richard A. Cash রিপোর্ট করলেন, ডায়রিয়ায় যে পরিমাণ পানি বের হয় সেই সমপরিমাণ oral-glucose electrolyte solution দিলে IV fluid দেয়ার প্রয়োজনীয়তা কমে যায় আশিভাগ।

এরমধ্যে হেমেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের কথা উল্লেখ করতে হবে। ১৯৫৩ সালে The Lancet এ উনি পেপার পাবলিশ করেন কলেরার ট্রিটমেন্টে ORT এর প্রস্তাব দিয়ে। এসব কিছুই ছিল ত্রুটিযুক্ত। কারন, fluid-electrolyte এর ব্যাপার। পরিমাণের ত্রুটিসহ নানান কারণে এগুলোর failurity স্পষ্ট হচ্ছিল।

এবারে বাংলাদেশি বিজ্ঞানী রফিকুল ইসলাম (কুমিল্লায় জন্ম) এলেন এবং বাঁচালেন লাখো প্রাণ। তার আবিষ্কৃত ফুড স্যালাইন orosaline আগের সব ORT এর ভুলত্রুটি সরিয়ে টনিকের মত কাজ করলো। ১৯৮০ সালে WHO এটাকে approved করলো।

Fig : Dr. Rafiqul Islam and The miracle of ORT.


এখানে হালকা ইতিহাস আছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতার শরণার্থী শিবির ছিল একটা দোযখ। অনাহার-অপুষ্টিসহ বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে কলেরাও দেখা দিল। এত এত শরণার্থীকে IV fluid দেয়ার মতন পর্যাপ্ত রসদ নেই।
ডা. রফিকুল ইসলাম এবং ডা. দিলীপ মহালনবিস তখন কলকাতার জন হপকিন্স রিসার্চ ইন্সটিটিউটের হয়ে কাজ করছিলেন সেখানে। উনারা সেসময় বিকল্প উপায় হিসেবে মুখে খাবার স্যালাইনের ব্যবস্থা করেন। পরে এটা ‘ঢাকা স্যালাইন’ নামে পরিচিতি পায়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশব্যাপী ওরস্যালাইনের প্রচার হলো। ব্র্যাক এ কাজে সহায়তা করলো। গ্রামে গ্রামে ওরস্যালাইন বানানোর সহজিয়া তরিকা শেখানোর জন্যে মাঠপর্যায়ে কর্মী পাঠালো। হ্যাঁ, সেই সময় টেলিভিশন ছিল দূর কি বাত!

Fig : Orsaline-N packet and it’s process of preparation.

WHO aprroved হবার পর সারাবিশ্বে ওরস্যালাইন ছড়িয়ে পড়ে। সেসময়কার হিসাবে প্রায় ৬০ মিলিয়ন লোকের জীবন বাঁচায় এটি। কিন্তু নোবেল আসেনি রফিকুল ইসলামের কাছে। বাঙালির নিয়তিই এই।

ড. আনোয়ার হকের নাম উল্লেখ করা বাকি। শাড়ি ফিল্টার দিয়ে পানি থেকে কলেরা জীবাণু আইসোলেট করার প্রক্রিয়ায় তার অবদান আছে। গ্রাম বাংলার নারীরা এভাবে পুকুরের পানি ফিল্টার করে কলসে ভরে ঘরে নিত আগে।

এই যে এত কিছু জানলাম এরমধ্যে অনেক ভুল থাকতে পারে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নাম মিস যেতে পারে। তবে একজনের নাম বলতে হবেই। কারণ আমার এই হালকাপাতলা ইনফরমেশন রিসার্চের নিমিত্ত ছিলেন আসলে উনি।
অধ্যাপক ডাঃ কাজী আবুল মনসুর। সময়ের আলোচিত আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের পিতা। বিখ্যাত মাইক্রোবায়োলজিস্ট। ১৯৯৬ সালে স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত। শহিদুল আলম নিজে হাইপ্রোফাইল লোক। তাকে নিয়ে জানতে গিয়ে তার বাবাকে জানা। কাজী আবুল মনসুর বিখ্যাত মনসুর মিডিয়ার আবিষ্কারক (Monsur taurocholate tellurite gelatin (TTG) agar media)। কলেরা ব্যাকটেরিয়া আইসোলশনে কার্যকর মিডিয়া। এটাও গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ। এক জায়গায় পড়লাম, ওরস্যালাইন আবিষ্কারে উনারও ভূমিকা আছে। মনসুর-ডায়েট নামে পরিচিত ছিল। IPH এর সাবেক পরিচালক ছিলেন। উনিও নোবেল প্রাইজের জন্যে মনোনীত হয়েছিলেন শোনা যায়। শুধু পাননি এই আরকি।

কলেরা প্রথম দেখা দেয় উপমহাদেশে। কোন কোন মতে- বাংলাদেশের যশোরে ১৮১৭ সালের দিকে। উপমহাদেশের মানুষেরা এর পেছনে সময়ে সময়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু আমাদের জানা নাই। এমনকি নিজে না খুঁজলে এসব তথ্য টেক্সটবুকে পাওয়া যায়না। বইতে কি এসব বিজ্ঞানীদের নাম থাকা উচিত না? উনাদের নামে কি স্থাপনা আছে? না আছে কোন পুরষ্কার? ছেলেমেয়েরা কি উনাদের মতন হতে চায়? তারা কি জানে তারা এদেশে কোন কোন ফিল্ডে কাজ করলে দেশ এবং দেশের মানুষের উপকার হবে? আমরা কি সেই সুযোগ তৈরি করছি? সেরকম ক্ষেত্র বানিয়ে দিয়ে যাচ্ছি? অগ্রণীরা পেরেছে কিভাবে? আমরা পারিনা কেন?

জাতি হিসেবে আমাদের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ- আমাদের অনুপ্রেরণার জায়গাগুলো আমরা দাবিয়ে রেখেছি।

Hasnat Muhammad

Faridpur Medical College
Session : 2016-17

প্ল্যাটফর্ম একাডেমিক/ Rufaida Binte Reaz

Leave a Reply