প্রথমে একটু ফিজিক্স পড়ি। আমরা সবাই জানি মানবদেহ বিদ্যুৎ সুপরিবাহী। যদি তা না হয়ে কুপরিবাহী হত, তবে কি হত? তখন আর কেউ ইলেকট্রিক শক খেত না। আর কী সুবিধা হত? হিজিবিজি হিজিবিজি ECG পড়া লাগতো না!
Electrocardiogram (ECG) মানে হল Echocardiography বা electric flow এর গ্রাফচিত্র, অর্থাৎ heart এর মধ্য দিয়ে electricity কোন কোন পথে চলাচল করে তারই একটা রূপরেখা। যখন এই চলাচলের পথে কোন গণ্ডগোল ঘটে, তখন এই রূপরেখারও পরিবর্তন হয়। আর এই পরিবর্তন দেখেই heart এর বিভিন্ন রোগ আমরা diagnosis করি। এই electrical রূপরেখাটা অনেকটা পুরান ঢাকার অলিগলির মত জটিল। যতই ম্যাপ মুখস্থ থাক না কেন, নতুন কেউ সেখানে গেলে পথ হারাবে নিশ্চিত। একে চেনার জন্য প্রয়োজন নিত্যদিনের পদচারণা ও অনুশীলন। আমার কাছে এ জিনিস এখনো কুয়াশা ঢাকা চাঁদের মত, কখনো খুব উজ্জ্বল – কখনো বা ঘুটঘুটে অন্ধকার! একে কঠিন থেকে তরলীকরণের প্রক্রিয়া আজও চলছে, তাই এই হিজিবিজি জিনিসের দিকে আজ আমরা যাবো না। আজ যা পড়বো তা খুবই সহজ।
গল্প:
পৃথিবীর এক কোণে ছোট্ট এক দেশ আছে, যার নাম Heart। এই দেশে চারটি মাত্র শহর আছে, যেগুলো হল right atrium, left atrium, right ventricle, left ventricle। শহর চারটির মধ্যে right atrium হল সেই দেশের রাজধানী। আর এই রাজধানীতেই দেশের মেইন পাওয়ার হাউজ SA node অবস্থিত। সারাদেশে যে বিদ্যুৎ supply হয় তার সবটাই এখানে তৈরি হয়। মেইন পাওয়ার হাউজের অল্প দূরেই একটি সাবস্টেশন আছে যার নাম হল AV node, এবং এই সাবস্টেশন থেকেই বিদ্যুৎ যায় দেশের ২য় প্রধান শহর left ventricle এ। এরপর সেখান থেকে পর্যায়ক্রমিকভাবে বিভিন্ন লাইনের মাধ্যমে পুরো দেশে বিদ্যুৎ supply হয়।
বিদ্যুৎ supply এর flow chart টা যদি মনে মনে একটু কল্পনা করি, তাহলে নিচের মত দাঁড়ায়-
SA node – Internodal pathway – AV node – Bundle of His – Right bundle branch & left bundle branch (left bundle branch এর দুইটা fascicle আছে anterior fascicle & posterior fascicle) – Purkinje fibres
এই বিদ্যুৎ লাইনের যে জায়গায় গণ্ডগোল সবচেয়ে বেশি হয় সেটি হল AV node। কারণ এটাই এক শহর থেকে অন্য শহরে বিদ্যুৎ সাপ্লাই নিয়ন্ত্রণ করে। তো এইখানে যদি কোন সমস্যা হয়, তাহলে হয় হবে – low voltage এ বিদ্যুৎ প্রবাহ অথবা হবে লোডশেডিং।
ঘটনা ১:
কোন লোডশেডিং ছাড়াই বিদ্যুৎ যায়, কিন্তু low voltage এ যায়। ফলে বিদ্যুৎ আস্তে আস্তে যায়। আর এটাই হল First degree heart block। আমরা জানি, Atrial Depolarization হলে P wave হয়, Ventricular Depolarization হলে QRS complex হয়। আমরা তাহলে বলতে পারি, First Degree Heart Block এ সব P wave ই QRS complex তৈরি করবে, কিন্তু একটু আস্তে আস্তে – অর্থাৎ P wave আর QRS complex এর মাঝে যে PR interval আছে সেটি বেড়ে যাবে (Voltage লো মানে PR interval বেশি) – স্বাভাবিক ভাবে যেটি ০.১২-০.২০ সেকেন্ড, সেটি হবে ০.২০ সেকেন্ডের বেশি।
আমরা বলতে পারি, ECG তে P wave ও QRS complex স্বাভাবিক নিয়মে একটার পর অন্যটা থাকবে, শুধু এদের মাঝের PR interval টা বেড়ে যাবে।
ঘটনা ২:
Voltage আগে low ছিল, এখনও low, বরং low হতে হতে এত বেশি low হয়ে যায় যে লোডশেডিং হয়। লোডশেডিং এর জন্য সাধারণ পাব্লিক ক্ষিপ্ত হয়ে বিদ্যুৎ অফিসের সামনে ঝাড়ু মিছিল করে। আর এই ভয়ে আবার ঠিকঠাক বিদ্যুৎ সাপ্লাই শুরু হয়। কিন্তু কয়েকদিন পর যা তাই, আগের মতই লোডশেডিং শুরু হয়। আর এভাবেই চলতে থাকে সব সময়।
এই চক্রটাকে বলে Wenckebach phenomenon। আর এটাই হল Second degree heart block (Mobitz type 1)
এক্ষেত্রে voltage low হতে থাকে – মানে PR interval আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। এবং এক সময় বেশি low হয়ে লোডশেডিং হয় – মানে P wave আর ventricle এ যেতে পারে না, ফলে হয় না কোন QRS complex।
তাহলে আমরা বলতে পারি, ECGতে PR interval কে আস্তে আস্তে বাড়তে দেখবো এবং হঠাৎ করেই P wave এর পরে QRS complex পাবো না। নতুন করে P wave থেকে পূর্বের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে।
ঘটনা ৩:
Voltage low হতে হতে এত বেশি low হয়ে যায় এর থেকে আর low হওয়া সম্ভব না, কারণ এর থেকে low হলে বিদ্যুৎ চলাচলই বন্ধ হয়ে যায়। তাই একদম কমে যাওয়া voltage কে নির্দিষ্ট রেখে কোন রকমে কাজ চালানো হয়। কিন্তু এতেও শেষ রক্ষা হয় না, ফলে হয় লোডশেডিং। আর এটাই হল Second degree heart block (Mobitz type 2)
তাহলে আমরা বলতে পারি, এক্ষেত্রে low voltage কমে কমে আর low হয় না, মানে ECG তে PR interval বেশি থাকে ও নির্দিষ্ট থাকে, এবং এখানেও মাঝেমাঝে P wave এর পরে কোন QRS complex পাওয়া যায় না।
তাহলে Mobitz type 1 ও Mobitz type 2 এর মধ্যে মৌলিক পার্থক্য হল –
দুটোতেই PR interval বেশি থাকলেও type 1 এ PR interval আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে, আর type 2 তে PR interval নির্দিষ্ট থাকে।
আর দুটোর মধ্যে মিল হল-
দুটোতেই মাঝেমধ্যে লোডশেডিং হয়, অর্থাৎ P wave এর পর কোন QRS complex তৈরি হয় না।
এখন যদি দেখেন পরপর দুইটা P wave QRS complex তৈরি করেছে, কিন্তু তার পরেরটা আর পারেনি। এবং এই ঘটনা যদি নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর পুনরাবৃত্তি হয় তবে তাকে বলে 2:1 AV block (পরপর দুইটা)। আর যদি পরপর তিনটা হয় তাহলে তাকে বলি 3:1 AV block।
ঘটনা ৪:
Atrio ventricular সাব স্টেশন পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। এর ফলে ঢাকা (Right atrium) থেকে চট্টগ্রামে (Left ventricle) এ কোন বিদ্যুৎই supply হচ্ছে না। এ ঘটনার পর চট্টগ্রামের মানুষজন চিন্তা করলো, বিদ্যুতের জন্য তারা আর ঢাকার উপর নির্ভর করবে না, নিজেদের প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ নিজেরাই তৈরি করবে। কিন্তু ওদিকে আবার কেন্দ্রীয় সরকারও থেমে নেই, তারাও চেষ্টা করছে স্বাভাবিকভাবে বিদ্যুৎ supply দেওয়ার। সব মিলিয়ে দুই শহরের মধ্যে একটা হযবরল অবস্থা তৈরি হয়, থাকে না কোন ভারসাম্য। আর এটাই হল Third degree বা complete heart block। এখানে হযবরল অবস্থা মানে P wave আর QRS complex এর মাঝে কোন সম্পর্কই নাই। P waver এর পর QRS complex এই আছে, তো এই নাই। PR interval ও কখনও কম, কখনও বেশি, কখনও বা অনেক বেশি।
Heart block এর কারণ কী?
Conduction pathway তে-
- Fibrosis
- Ischaemic necrosis
- Inflammation (Aortic root abscess, Endocarditis, Sarcoidosis, Chagas disease)
- Traumatic injury (Cardiao thoracic surgery করার সময়)
- কিছু Drugs – Digoxin, Beta blocker যাদের কাজ voltage low করা।
Heart block হলে কী হবে?
Heart উল্টাপাল্টা contraction আর relaxation করবে। ফলে cardiac output ও উল্টাপাল্টা হয়ে যাবে। কখনো কম, কখনো বেশি। উল্টাপাল্টা electrical signal এর জন্য arrhythmia develop করবে।
চিকিৎসা কী হবে?
মারাত্মক ক্ষেত্রে temporary অথবা permanent pace maker, যারা নিজেরাই কিছু electricity তৈরি করে electric flow এর ভারসাম্য বজায় রাখবে। সাধারণ ক্ষেত্রে Atropine বা Isoprenaline injection ব্যবহার করে heart এর sympathetic activity বাড়িয়ে electric flow বজায় রাখা যেতে পারে।
পড়া শেষ, এবার একটুখানি রিভিশন।
- মনি আর জনির বিয়ে হয়েছে। জনি জুয়া খেলে প্রতি রাতে দেরি করে বাড়ি ফিরে, কিন্তু প্রতিদিনই ফিরে – First degree heart block।
- জনি বাড়ি ফিরে রাত ১০ টায়, কখনও ১১ টায়, কখনও বা ১২ টায়, কোনদিন আবার ফিরেই না – Second degree heart block (Mobitz type 1)।
- জনি যেদিন বাড়িতে ফিরে সেদিন কাঁটায় কাঁটায় রাত ১২ টায়ই ফেরে, এর আগেও না, পরেও না; কোনদিন আবার ফেরেই না – Second degree heart block (Mobitz type 2)।
- জনির এই অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে, মনি রনির সাথে পালিয়ে যায় – Complete heart block।
মনি আর জনির প্রেম অটুট থাকুক, সুস্থ থাকুক আমাদের heart।
ডা. কাওসার উদ্দীন
ঢামেক, কে-৬৫
Pingback: Aortic Regurgitation: Aetiology, Pathophysiology, Treatment।। হাবিজাবি ৬২ – Platform | CME